• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রসঙ্গে

  • সাধন সরকার
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৯

বর্তমানে শিক্ষার হার বেড়েই চলেছে এবং প্রতিবছর গেল বছরের চেয়ে আরো বেশি চাকরিপ্রত্যাশী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্র ও পদসংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করে চাকরি পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অথচ একটি দেশের প্রাণশক্তি হলো তরুণ জনগোষ্ঠী। তরুণ্যের শক্তি বা কর্মদক্ষতার ওপর ভর করে একটি দেশ উন্নতি লাভ করে। তবে তরুণদের মাঝে মাঝে হতাশও হতে হয়। দুঃখের বিষয় হলো, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন মর্মপীড়া কাজ করছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে গত কয়েক বছর থেকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে আসছে তরুণরা। বলতে দ্বিধা নেই, লাখ লাখ তরুণ সত্যিই আজ হতাশাগ্রস্ত। একাডেমিক পড়া শেষ করে চাকরির পড়া শুরু করার স্বল্প সময়ের মধ্যে বয়স ৩০ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হওয়ার কারণে হাজার হাজার তরুণ আর চাকরিতে আবেদন করতে পারছে না। সদ্য চাকরির বয়স পার হওয়া তরুণদের প্রাণ গুমরে গুমরে কাঁদছে!

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ১৮-৩০ বছর। গড় আয়ু যখন ৪৫ ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। গড় আয়ু যখন ৫০ পার হলো, তখন প্রবেশের বয়স হলো ৩০। বর্তমানে গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর, তাহলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কেন ৩০-এ থমকে থাকবে? জাতীয় সংসদে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে বহুবার দাবিও উঠেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই! সত্যি বলতে মানসম্মত চাকরি পেতে হলে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে করতে প্রায় ২৫-২৬ বছর লেগে যাচ্ছে। চাহিদা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অবসরের বয়সসীমাও বেড়েছে। পৃথিবীর ১৬০টিরও অধিক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০-এর অধিক। বাস্তবতা এটাই যে, বর্তমানে লাখ লাখ ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা আছে, সনদ আছে কিন্তু চাকরি নেই! ঘুষ-দুর্নীতির কারণে অনেকে আবার সময়মতো চাকরি পাচ্ছে না। বয়স ৩০ পার হওয়া মানে অর্জিত সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ! সহজ কথায়, একজন তরুণকে ‘৩০’-এর গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা হচ্ছে। ফলে বয়স ৩০-এর মধ্যে চাকরি না পাওয়া একজন তরুণকে নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী বেকার। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ‘৩০’-এ বেঁধে রাখার ফলে সব শিক্ষার্থীর মেধা কি আদৌ কাজে লাগানো যাচ্ছে? সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না। দেশের সব তরুণের সম্ভাবনা, সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষিত তরুণদের কাজে লাগাতে দেশের উন্নয়নে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো প্রয়োজন।

গত ৩০ এপ্রিল মহান জাতীয় সংসদে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা নাকচ হয়ে যায়। এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোর পক্ষে যেসব যুক্তি দেখানো হচ্ছে, ঠিক একই যুক্তি দেখানো হয়েছিল ১৯৯১ সালে যখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছিল। আশা করি, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ালে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই; বরং তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। অন্যথায় বড় ধরনের জনশক্তি অপচয় হবে। যুক্তি দেখানো হচ্ছে এখন দেশে কোনো সেশন জট নেই। কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। সেশন জট আছে, তবে আগের থেকে কম। আর আগে যারা সেশন জটের শিকার হয়েছেন, সেসব তরুণের জন্য তাহলে কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? আমি নিজেও প্রায় তিন বছরের সেশন জটের কবলে পড়েছিলাম। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো মানে তো চাকরি দেওয়া নয়। বরং একটি সম্ভাবনাময় শেষ হওয়া জীবনগাড়ির চাকা নতুন করে সচল করা। এতে বাড়তি টাকার অপচয়ও হবে না। যে যার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাবে। তাছাড়া একটু বেশি বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করলে জ্ঞানের চর্চাও অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন রাষ্ট্রে বেকার তরুণদের জন্য বেকার ভাতা চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশে বেকার ভাতা না হোক, অন্তত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে তরুণদের বেকারত্বের হাত থেকে তো মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। যুক্তিসংগত ও যুগোপযোগী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সবদিক বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ একাধিকবার করা হয়েছিল গত সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল বলেও জানি। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রতি আবারো আস্থা রেখেছে। তাই তরুণ সমাজের যুক্তিসংগত ও সময়ের দাবি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করা হোক। আশা করি এবং বিশ্বাসও করি যে, বর্তমান সরকার তরুণ সমাজের এই মনোবেদনা উপলব্ধি করে বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং দ্রুততার সঙ্গে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হবে।

লেখক : পরিবেশকর্মী

sadonsarker2005@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads