• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দেশ ও জাতির আলোকবর্তিকা আমাদের বুদ্ধিজীবী

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

দেশ ও জাতির আলোকবর্তিকা আমাদের বুদ্ধিজীবী

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৯

প্রতিটি দেশের বুদ্ধিজীবীরা সমাজ সম্পর্কিত জটিল চিন্তা, গবেষণা ও প্রভাব বিস্তারে যুক্ত থেকে সমাজের মূল সমস্যাগুলোর সমাধান ও সমাধানের পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। বুদ্ধিজীবীরা কোনো বাস্তব বিষয়কে রক্ষা বা সমর্থন করার জন্য বা অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করার জন্য সৃজনশীল স্রষ্টা বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সংস্কৃতির জগৎ থেকে এসে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন, যা তারা করে থাকেন কোনো মতবাদকে প্রত্যাখ্যান, সৃষ্টি অথবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে, অথবা কোনো একটি মূল্যবোধ ব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য।

এই লেখক-বুদ্ধিজীবী সমাজের সম্মানিত অংশ। তারা নিজের কথা না ভেবে সর্বদা রাষ্ট্রের উন্নতির কথা চিন্তা করে। আদর্শিক জাতি গঠনে লেখকের ভূমিকা তাই অনস্বীকার্য। একটি সমাজ একটি গোষ্ঠীকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে লেখক বুদ্ধিজীবীদের বিজ্ঞ মতামতের শেষ নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজবিজ্ঞানী, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা নিয়মিতভাবে রাষ্ট্রের কল্যাণে লেখনীর দ্বারা তাদের সুদীপ্ত পরামর্শ দিয়ে দেশ পরিচালনায় অবদান রেখে চলেছেন।

তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান আর মতাদর্শ রাষ্ট্রের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে জাতীয় বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পরামর্শ নেওয়া হয়। আমাদের দেশে ডান-বামের ছত্রছায়ায় অনেক লেখক, বুদ্ধিজীবী ও কলামনিস্ট আছেন। রাজনীতির ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের অনুসারী অথবা চিন্তায় তাদের মতামত ব্যক্ত হলেও বাস্তবে তাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতি উপকৃত হয়ে থাকে। দেশ ও জাতির উন্নতি অগ্রগতি কীভাবে হচ্ছে তা তাদের সুচিন্তিত আলোচনায় পাওয়া যায়। দুর্নীতি অনিয়ম লুটপাটের বিরুদ্ধে তাদের মতামত পরামর্শ প্রকাশিত হয়। জাতি স্বার্থের পরিপন্থী যেকোনো সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা তাদের লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। রাজনীতি সঠিক পথে না চললেও একজন লেখক কখনো দুর্নীতিকে মাথা পেতে গ্রহণ করেন না। জাতির প্রয়োজনে রাষ্ট্রের মানুষের সুখ-দুঃখের সঠিক কর্মপন্থা দিকনির্দেশনা একজন লেখক ও সমাজবিজ্ঞানী জাতির সামনে তুলে ধরতে দ্বিধাবোধ করেন না।

রাজনীতিবিদ তাদের দায়িত্ব থেকে সময়ে-অসময়ে নীরব থাকলেও একজন লেখক ও সমাজবিজ্ঞানীকে রাষ্ট্রের স্বার্থে তার বক্তব্য ও লেখনী অব্যাহত রাখতে দেখি। সারা পৃথিবীতে সম্মানিত এসব মানুষকে রাষ্ট্র ও শাসকগোষ্ঠী অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে দেখে থাকে। রাষ্ট্রের স্বার্থে তাদের মানবিক সব অধিকার দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশে যারা সমাজ গবেষক ও লেখক রয়েছেন তাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও এসব সাদা মনের মানুষ নিজের মেধা, যোগ্যতা আর লেখনীর মাধ্যমে জাতিকে প্রতিটি মুহূর্তে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে মহান মানুষের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজ দায়িত্বশীল নয়। এ মানুষের অনেকেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নানাভাবে অবহেলার পাত্র। শেষ জীবনে এসে পরিবার ও রাষ্ট্র থেকে কোনো ধরনের দায়িত্বশীল আচরণ পর্যন্ত পায় না। অর্থাভাবে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারে না। সারা দেশের প্রচারপত্রে ওই মানুষের গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিতরণ হলেও কোনো মিডিয়া আলোকিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয় না। যাদের হাজার হাজার আলোকদীপ্ত লেখা নিয়ে পত্রিকার পাতা পূরণ করা হয়েছিল, সেসব পত্রিকার মালিক-সম্পাদক কেউ-ই তাদের খবর রাখে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়কই বটে। সমাজের আলোকিত সম্মানিত লেখক বুদ্ধিজীবীদের সুখ-দুঃখের পাশে রাষ্ট্র ও জাতিকে থাকতে হবে।

রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ও রাজনীতির কারণে অনেক সময় লেখক-বুদ্ধিজীবীদের দলে টেনে নিতে দেখি। তাদের প্রয়োজনে লেখক বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার হতেও দেখা যায়। কিন্তু প্রয়োজন যখন শেষ হয়ে যায় তখন ওই মানুষের আর খবর রাখা হয় না। রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা রাজনীতির মাধ্যমে নেতারা আত্মসাৎ করেন। আর যারা সমাজকে সঠিক পথে চালাতে অবিরাম রাষ্ট্রের পাশে থেকে নিজেদের নিঃশেষ করলেন, তাদের পাশে সমাজ ও রাষ্ট্রকে দেখা যায় না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যেভাবে এ মানুষ কাজ করছেন, তাদের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে পাশে থাকা চাই। সুখ-দুঃখে অভাব-অনটনে সামাজিকভাবে এদের পাশে রাষ্ট্রকে থাকতে হবে। তাহলে সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র ও জনগণ আরো এগিয়ে যাবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads