• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বন্যার দুর্যোগ এবং পরবর্তী করণীয়

ফাইল ছবি

মুক্তমত

বন্যার দুর্যোগ এবং পরবর্তী করণীয়

  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৯

বন্যার পানিতে ভাসছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবার বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অঝোর বৃষ্টির ফলে দেশের কৃষিক্ষেত ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের কৃষক এখন কর্মহীনভাবে অলস সময় পার করছে। বৃষ্টির পানির ব্যাপকতায় গ্রামের জমি, কৃষি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের তালিকা তৈরি করতে হবে। সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতি নিরূপণ করে তাদের বাঁচাতে হবে। তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন তালিকা করে তা থানা ও জেলা প্রশাসনে পাঠাতে হবে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ করা ত্রাণ সঠিকভাবে বণ্টন করতে হবে। সম্পূর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সর্বজনীনভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আসতে হবে। কৃষিজমি আবাদের জন্য বীজ-সার নিয়ে কৃষকের পাশে যেতে হবে। কৃষকের ব্যাংকঋণ মওকুফ করতে হবে। সুদি মহাজন ও গ্রামীণ ব্যাংকের মতো অসাধু আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষক ও দিনমজুর মানুষকে রক্ষা করতে হবে। সহজ শর্ত ও সুদবিহীন কৃষিঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সারা দেশের গ্রামের কৃষকদের ক্ষতি নিরূপণ করার দায়িত্ব দিতে হবে।  

ইতোমধ্যে শহর-গ্রামের রাস্তার বেহালদশা দেখেছি। কোথাও একটি সড়কও ভালো নেই। অতিবৃষ্টির ফলে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যান চলাচলে জীবন ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চলছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। শত শত শহর-গ্রামের এসব সড়ক খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা-কালভার্ট নির্মাণে কী পরিমাণ দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাট হয়েছে তা বৃষ্টির পর রাস্তা দেখলেই বোঝা যায়। কোনো রাস্তায় বিটুমিন নেই। রাস্তার বিটুমিন উঠে গিয়ে কংকর দেখা যাচ্ছে। পরিবহনের চাপে কংকর উঠে যাচ্ছে। ফলে গর্তের তৈরি হয়েছে। যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পথে পথে যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। রাস্তার সংস্কার যেন টেকসই হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। জনগণের সঠিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড টেকসইভাবে যেন করা হয়। মানসম্পন্নভাবে রাস্তাগুলোর মেরামত চায় জনগণ। রাস্তার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে যারা থাকেন, তারা যেন সঠিকভাবে মনিটর করেন। কংকর, সিমেন্ট, বিটুমিন যেন সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা হয় তা দেখতে হবে। ছয় মাস যেতে না যেতেই রাস্তার এ পরিণতি। জনগণ বলছে মানহীন কাজের ফলে রাস্তার এ করুণ পরিণতি। যেভাবেই হোক খুব তাড়াতাড়ি রাস্তার সংস্কার ও মেরামত করতে হবে। রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ির ফলে শহরের অনেক রাস্তার এখনো কাজ শেষ হয়নি।  

এক সংস্থা রাস্তার কাজ শেষ করে গেলে অপর সংস্থা সেখানে কাজ শুরু করে। এভাবে যান চলাচলের রাস্তার কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ও যাত্রীসাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় ও তারিখের মধ্যে শেষ করতে হবে। সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সেবা সংস্থাগুলোকে এলাকার রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির আগে সমন্বয় করতে হবে। মান ঠিক রেখে সড়কের কাজ করতে হবে। ঠিকাদারদের সঠিকভাবে তদারকি ও তাদের বিল যথাসময়ে পরিশোধ করা চাই। কেননা নির্দিষ্ট সময়ে তারা বিল না পেলে শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে তারাও ভোগান্তিতে পড়ে। এসব কারণেও অনেক সময় কাজের গতি মন্থর হয়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই কাজের মান ঠিক রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকার সড়কের কাজ ছয় মাস যেতে না যেতেই এমন করুণ অবস্থা দেখলে মনে হয় এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এসব নিম্নমানের কাজ কোনো অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না।  

জনগণের দাবি, কাজের মান ঠিক রেখে সড়কের উন্নয়ন করতে হবে। সংস্কার করতে হবে। উন্নয়ন ও কাজ সবকিছুই সঠিক মান নির্ণয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কাজ বুঝে নিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। স্বচ্ছ ও আদর্শবান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়নের কাজ দিয়ে কাজের মান ঠিক রাখতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে যারা সড়কের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অব্যাহত দুর্যোগ বন্যার মতো বৈশ্বিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থ ও কাজ দুটোর মধ্যে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা থাকতে হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে লাখ লাখ বন্যার্ত পরিবারের পাশে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

মাহমুদুল হক আনসারী

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads