• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বেকারত্ব দূরীকরণে পদক্ষেপ নিন

ফাইল ছবি

মুক্তমত

বেকারত্ব দূরীকরণে পদক্ষেপ নিন

  • প্রকাশিত ৩০ জুলাই ২০১৯

বেকার জীবন একটা হতাশার জীবন। যতই দিন যাচ্ছে, বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেকারত্ব বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। বেকারত্বের কারণে দেশের লাখ লাখ তরুণ আজ হতাশায় জীবন কাটাচ্ছে। পড়াশোনা করেও যখন চাকরি পায় না, তখন তারা পথ হারিয়ে ফেলছে। সহসা যখন এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না তখন কেউ কেউ বেকারত্ব থেকে মুক্তির আশায় বিভিন্ন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছেন। কেউ বা আবার অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। কেউ কেউ তো বেকারত্বের চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন, তবুও যেন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়!

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারা দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী যারা উচ্চমাধ্যমিক/স্নাতক/স্নাতকোত্তর পাস অর্থাৎ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। হাজার হাজার তরুণরা স্বপ্ন নিয়ে পথ চলছে, কিন্তু তারা পথের দেখা পাচ্ছে না। বুকে হাজারো কষ্ট নিয়ে পরিবারের দিকে তাকিয়ে পথ চলছে। শিক্ষিত তরুণরা দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। কিন্তু শিক্ষিত তরুণরা তো দেশের বোঝা নয়, তারা দেশের সম্পদ। বেকার নারী-পুরুষ পাগলের মতো হন্যে হয়ে চাকরি নামক সোনার হরিণ খুঁজছেন, কিন্তু তারা তা পাচ্ছেন না। পরিবারের মা-বাবা হয়তো পড়াশোনা শেষ করা ছেলে কিংবা মেয়েটির পথ চেয়ে বসে আছে, কখন সেই বেকার মানুষটি পরিবারের দিকে তাকাবে, সচ্ছলতা ফিরে আসবে সংসারে, এটাই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু একজন বেকারের নীরব যন্ত্রণা কেউ অনুভব করে না, কেউ বোঝে না তাদের মনের কথা। তাদের চোখের জল দেখবার মতো কেউ নাই।

দরিদ্রতা, স্বজনপ্রীতি, নড়বড়ে শিক্ষাব্যবস্থা ও সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে মূলত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু বেকারত্বের হার কোনোভাবেই কমছে না বরং বাড়ছে। আর এতেই লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ বেকার হওয়ার যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশে কাজ না পেয়ে বিদেশে কাজের আশায় এ দেশের তরুণরা প্রবাসী জীবন বেছে নিচ্ছে, বাবার শেষ সম্পদটুকু বিক্রয় করে। ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। পৌঁছাতে পারলেও অনেক সময় কাজ পাচ্ছে না তারা। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বেকারত্বের কারণে বিগত বছরগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি ২০১৮ সালেও জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয়।

আর্থসামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক সংকটের কারণেও বেকার জীবন হয়ে ওঠে অসহ্য যন্ত্রণাময়। পরিবারে চাপ ও সমাজের অবহেলায় তরুণরা আজ মানসিক চাপ, হতাশা, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আর কত দিন চলবে? এভাবে ভেঙে যাবে আর কত স্বপ্ন! বেকারত্ব থেকে কি মুক্তির কোনো পথ নেই? থাকলে সেই পথে অগ্রসর হওয়া উচিত। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তরুণদের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। যে দেশের তরুণরা যত বেশি কর্মঠ, সে দেশের উন্নয়নের ধারাও তত বেশি অগ্রসর। তাই দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে হলেও বেকারত্ব দূরীকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেননা দেশের বেকারত্বের হার কমলে দেশ আরো উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার। আমাদের এখন এ বিষয়টিতে জোর দিতে হবে। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান দেশের কথা চিন্তা করে বেকারত্ব দূরীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

ইমরান হোসাইন

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads