• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

  • প্রকাশিত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গোপাল রায়

 

বাইবেলে আছে, He who liveth, he who beliveth, shall never die অর্থাৎ যে বিশ্বাস করে সেই বেঁচে থাকে। এই বিশ্বাস এবং কাজের মধ্যে যে ডুবে যেতে পেরেছে তাকে কোনোদিন কোনো দুঃখ, হতাশা, অবসাদ স্পর্শ করতে পারে না। বিশ্বাস ও কাজের একটা নিজস্ব আনন্দ আছে। সেই বিশ্বাসের মাঝে, সেই কাজের মাঝে আনন্দের দ্বারা থাকতে চাইলে স্বপ্নের মাঝে ডুবে থাকতে হয়। স্বপ্ন ব্যাপারটা এক ধরনের সাধারণ ব্যাপার নয়। আমি কী হব? আমার পথ কোনটা? আমার গন্তব্য কী? এসব প্রশ্নের বহিঃপ্রকাশই হলো স্বপ্ন। যে যত বড় স্বপ্ন দেখে, সে তত বড় মানুষ হিসেবেই বিবেচ্য। কেননা আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেছেন, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।

বাস্তব স্বপ্ন ও সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। তাই ব্রায়ান ডাইসন বলেছেন, স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন। কবি ল্যাংস্টোন হিউজ তার Dreams কবিতায় স্বপ্নগুলোকে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন। কারণ স্বপ্ন যদি মরে যায় বা চলে যায় জীবন তখন ডানা ভাঙা পাখির মতো হয়ে যাবে, উড়তে পারবে না। স্বপ্ন না থাকলে জীবন তুষার ঢাকা ঊষর ভূমির মতো জমাটবদ্ধ হয়ে যাবে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি এ পি জে আবুল কালাম বলেছেন, স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমোতে দেয় না। এই একই সুরে ইংরেজি কবি ডি. এইচ. লরেন্স বলেছেন, All people dream, but not equally. those who dream by night in the dusty recesses of their mind, woke in the morning to find that it was vanity।

সবাই স্বপ্ন দেখলেও সবার স্বপ্ন সমান নয়। যারা রাতের বেলায় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে তারা ঘুম থেকে জেগে দেখে আসলে তা মিথ্যে ছিল। কবি ডি. এইচ. লরেন্স দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা মানুষকে বিপজ্জনক মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা যারা খোলা চোখে স্বপ্ন দেখে তারা তা বাস্তবে পরিণত করে। অনেক সমস্যার সম্মুখীন থেকেও যে মানুষটি স্বপ্ন দেখে শুধু নিজে নয় পুরো আমেরিকান সমাজের কৃষ্ণাঙ্গের বৈষম্যের শিকল ভেঙে দিয়েছেন সে ব্যক্তিটি হলেন অহিংস আন্দোলনকর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে এক ভাষণ দেন, তাতে তিনি বলেন,  I have a dream that one day this nation will rise up and live out the true meaning of its creed: We hold these truths to be self-evidend; that all men are created equal।

মানুষের স্বপ্ন নিয়ে সাইকো-অ্যানালিসিস বা মনোসমীক্ষণের জনক সিগমন্ড ফ্রয়েড তার ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস’ বইয়ে বেশ চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করেন। স্বপ্ন মনোসমীক্ষণের একটি রূপ হিসেবে কাজ করে। যে স্বপ্ন দেখে সে একটি নিরাপদ পরিবেশে বিভিন্ন চিন্তা এবং আবেগের মধ্যে সংযোগ সাধন করতে সক্ষম হয়। সিগমন্ড ফ্রয়েড আরো বলেছেন, একটি কম্পিউটারের পরিষ্কারকরণ কাজের মতো স্বপ্ন মন থেকে জঞ্জাল পরিষ্কার করার কাজ করে যা মনকে সতেজ করে থাকে।

আমরা সবাই এগিয়ে যেতে চাই। সফল হতে চাই। কিন্তু সেই সফলতার মাল্য আমাদের জোটে না। কারণ আমরা স্বপ্নই দেখতে জানি না। আমাদের সফলতার জন্য স্বপ্ন দেখতে হবে। আমাদের স্বপ্নে যদি সূর্য টার্গেট থাকে, স্বপ্নের সেই সূর্যটাকেও যদি আমরা না পাই তাহলে অবশ্যই একটা না একটা তারা পাবই। সেই তারার আলোয় আলোকিত হব। এই অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads