• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

মুক্তমত

পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের

  • জেলী আক্তার
  • প্রকাশিত ১৫ অক্টোবর ২০১৯

বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশ বলতে আমরা বুঝব একটি এলাকায় অবস্থিত মাটি, পানি, বায়ু, আলো, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের সমষ্টিকে। পরিবেশের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, একে অপরের জন্য অপরিহার্য। পরিবেশ ও জীব একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে বিপর্যয়ের কবলে পড়ে জীবজগৎ। সম্পর্ক যেন একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু এই পরিবেশ কতটা সুরক্ষিত?

একটি দেশের মোট আয়তনের বনভূমির পরিমাণ ২৫% থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে তা মাত্র ১৭%-এর মতো রয়েছে। এরপরও আমরা নির্বিচারে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে গাছপালা কেটে ফেলছি; বনভূমি উজাড় করে দিচ্ছি। এতে করে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক বন্য প্রাণী, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সবুজ অরণ্য। আমরা আবাদি জমির ওপর কলকারখানা গড়ে তুলছি। তদুপরি ইটভাটা গড়ে তুলে তার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভরিয়ে তুলছি পৃথিবীর বুক। আমরা নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। একটু খেয়াল করি— আজ পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে, এর কারণ কী?

কারণ খুঁজলে দায়ী আপনি, আমি— আমরা সবাই। দায়ী আমাদের অতি আধুনিকতা, দায়ী আমাদের বোকামি, দায়ী আমাদের নির্বুদ্ধিতা। আর এই নির্বুদ্ধিতাকে কেন্দ্র করে বনভূমি ধ্বংস করছি। যার ফলে প্রকৃতি হারিয়ে ফেলছে তার ভারসাম্য। আজ আমরা আধুনিকতার মানসে আধুনিক সামগ্রী তৈরি করতে গাছপালা কেটে বনভূমি ধ্বংস করছি। এর ফলে এখন পৃথিবীর সবুজ অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়া বোধ হয় অস্বাভাবিক কিছু নয়।

আজকাল বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হচ্ছে, এই বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হলে একসময় জীবজগতের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখে পড়ে যাবে এটা স্বাভাবিক নয় কি? বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকা উত্তপ্ত হচ্ছে, প্রবাল প্রাচীর মারা যাচ্ছে, গ্রিনল্যান্ড গলে যাচ্ছে, পারমাফ্রাস্ট ধসে যাচ্ছে, সমুদ্র ফুঁসছে, ওদিকে পৃথিবীর ফুসফুস বলে খ্যাত আমাজন পুড়ছে! এত বিপর্যয়ের কারণ আমরা ভেবে দেখেছি কি? জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আগে পরিবেশ বাঁচানো জরুরি নয় কি?

আজকাল পরিবেশদূষণ প্রক্রিয়ার কোনো অভাব নেই। কিন্তু অভাব দূষণ রোধ করার মন-মানসিকতার। সবাই এখন নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যস্ত, কারো খেয়াল নেই পরিবেশ সুরক্ষার জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার। বর্তমানে প্রকৃতির উন্মুক্ত বাতাসে বিশুদ্ধতা হারিয়ে যাচ্ছে, উন্মুক্ত বাতাসে যোগ হচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন-ডাই অক্সসাইড, সালভার-ডাই অক্সাইডসহ আরো কত বিষাক্ত গ্যাস। আজ নদীর পানিতে দূষিত পদার্থ, মাটিতে মিশছে দূষিত পদার্থ, আজ চারদিকে শব্দদূষণ— দূষিত এক পরিবেশের শিকার এই প্রকৃতি।

সময় থাকতে আমাদের উচিত সচেতন হওয়া। এই পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের নির্বুদ্ধিতাকে বিসর্জন দিয়ে দীপ্ত বুদ্ধি, জ্ঞান প্রয়োগ করে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। নয়তো এভাবে চলতে চলতে একদিন বিপর্যস্ত পরিবেশের সঙ্গে বিপন্ন হয়ে যাবে জীবজগতের অস্তিত্ব। কাল হয়ে দাঁড়াবে এই দূষণ প্রক্রিয়া। আমাদের উচিত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে, নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির যথাযথ সংরক্ষণ করা। আমাদের দৃঢ় কণ্ঠে আওয়াজ তোলা উচিত— ‘তোমার আমার সবার/সুস্থ পরিবেশ দরকার।’

আসুন, আমরা নিজেদের প্রয়োজনে পরিবেশের সুরক্ষায় নিজেদের নিয়োজিত করি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, রসুলপুর, কুড়িগ্রাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads