• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ও গণমাধ্যম

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ও গণমাধ্যম

  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২০

মো. আল আমিন হোসেন:

বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে করোনা ভাইরাস। বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যমগুলো করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী নিত্যনতুন তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে খুব সহজেই অন্য প্রান্তের খবর খুব দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন আপডেট জানাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ে এসব নিত্যনতুন খবরের মধ্যে অনেক ভুয়া খবরও প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছু গণমাধ্যম নিজেদের ব্যবসাকে রমরমা করার জন্য করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে ভুয়া তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জনমনে একধরনের আতঙ্ক তৈরি করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যার অযাচিত তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি করছে।

বর্তমান এই ইন্টারনেটের যুগে মানুষ অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে অধিকাংশ খবরাখবর পেয়ে থাকে। ফলে খুব দ্রুত বিশ্বব্যাপী এই করোনা ভাইরাসের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যা এবং মানুষের মধ্যে এর নেতিবাচক দিকগুলো বেশি প্রচার করছে গণমাধ্যম। ঢালাওভাবে প্রচারের ফলে বিশ্বব্যাপী এই করোনা ভাইরাস নিয়ে জনমনে একধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অথচ প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছে। এই পরিসংখ্যানটা গণমাধ্যমগুলো নিয়মিত প্রচার করছে না। এটা যদি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে গণমাধ্যমগুলো নিয়মিত প্রচার করত তাহলে জনমানুষ আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বস্তি পেত। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় চীনসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ১২৪ জন, এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৬৬ হাজার ২১৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ৩৬৮ জন। এখানে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যার শতকরা হিসাব করলে দেখা যায় মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এ ছাড়াও বয়সের ভিত্তিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকিতে তারতম্য রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে শিশু ও তরুণরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকিতে আছে সবচেয়ে কম, আর বৃদ্ধদের আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো বিশ্বব্যাপী ঢালাওভাবে পরিসংখ্যান ছাড়াই সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে দিন দিন। আমরা একটা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহার ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। তখন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সারা বিশ্বে ৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এ তুলনায় করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা খুবই কম। তখন মিডিয়া বিস্তার কম থাকায় এত মানুষ মৃত্যুবরণ করা সত্ত্বেও জনমানসে আতঙ্ক দেখা দেয়নি। কিন্তু সম্প্রতি মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তৃতি ও মিডিয়ার অযাচিত খবর প্রকাশ করার মাধ্যমে জনমানুষের মনে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাই আমরা বলতে পারি, করোনা ভাইরাস নিয়ে জনমনে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এ জন্য গণমাধ্যম অনেকাংশ দায়ী। জনমানুষকে এই ভয় ও আতঙ্ক থেকে মুক্ত করতে গণমাধ্যমকে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। মানুষ যেন বুঝতে পারে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়, সচেতনতাই পারে করোনা ভাইরাস থেকে বিশ্বকে মুক্ত রাখতে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads