• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মুক্তমত

জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসক দল জরুরি!

  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২০

এস,এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার

করোনা মোকাবেলায় এ মুহূর্তে বিশেষায়িত চিকিৎসক দল প্রতিটি জেলায় স্ট্যান্ড বাই রাখা জরুরি। বিশ্ব আজ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তার মধ্যে আমরাও রয়েছি। ফলে বিশ্বপরিস্থিতির ফলাফল কমবেশি আমরা প্রতিনিয়তই পাচ্ছি। সরকার ও বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষনিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নিত্য নতুন ব্যবস্থা গ্রহন ও সতকর্তা জারি করছেন যা নাগরিক হিসেবে আমরা অনুসরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটু সুবিধা আমরা বেশি পাচ্ছি সেটি হল বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে যারা আরো খানিকটা আগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা ব্যর্থতা সতকর্তাগ্রহণ ইত্যাদিসহ করোনা বিস্তারের ধরণ গতি প্রকৃতি উদাহরণ আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারছি।

দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সুবিধার পাশাপাশি একটা বড় অসুবিধাও ইতোমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি। সেটি হল সেবা দানকারী ডক্টরসগন নিজেরা যেহেতু ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকাটা জানেন ফলে Safety First নীতি অনুরসণ করতে গিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে বেশির ভাগ অংশের মধ্যেই এই আতঙ্ক এমনভাবে স্থান করে নিয়েছে যে তারা নিয়মিত চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সেটির প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।এমন কি যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি আছেন তারাও যথাযথভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না।

কারণ Safety Instruments হাতে পেতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেছে। আশার কথা হল ইতো মধ্যেই Personal Protection Instrument বেশির ভাগ সেবাদানকারীরা পেয়েও গেছেন। কিন্তু এটি প্রাপ্তির পরও পূর্বাভিজ্ঞতা ও সুসমন্বিত ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাবে ডকটরসগণ প্রত্যাশা অনুযায়ী Response করছেন বলেও মনে হচ্ছে না।কিন্তু এটি যেহেতু কবিরাজ বা প্রকৌশলীর কাজ নয় তাই ঘুর ফিরে এটি মোকাবেলায় ডাক্তারগণকেই এগিয়ে আসতে হবে কোনা বিকল্প নাই এ ছাড়া।

ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে একটি বিষয় খুব আলোচিত হচ্ছে যে, বিশেষ করে স্বর্দি কাশি বা জ্বরের নতুন রোগীদের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে উপজেলা কিংবা জেলা পর্যায়ের ডাক্তারগণ এ বিষয়টি খানিকটা এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখাচ্ছেন। ফলে রোগী নিয়ে সারাদিন ঘুরে কোথাও্ চিকিৎসা তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না বলে দু’একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করার চেষ্টাও আমরা আলোচনা করতে দেখছি। যদিও এ সকল রোগীদের কেউই হয়তো COVID-19 রোগী নয়।

এমতাবস্থায় দোষারোপ না করে বিনয়ের সাথে বলতে চাই আমরা জেনেছি পাঁচশ’র মত ডকটর’স প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে চিকিৎসা দেবার জন্য। যেহেতু সারা দেশ Lock Down এ আছে তাই দেশের যে কোন স্থান থেকে একজন নতুন উপসর্গের রোগীর খবর আসতেই পারে। সেক্ষেত্রে বাড়ি থেকে বাইরে এসে কিংবা ঢাকা শহরে এসে এই চিকিৎসা নেয়াটা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অসম্ভবই বলব। যেহেতু পরিবহন সুবিধাও কার্যত বন্ধ রয়েছে।

বরং যে বিকল্পটা খুব দ্রুত বাস্তববায়ন করলে আমরা এই অসুবিধাটা মোকাবেলা করতে পারি তা’হল সরকার, মন্ত্রনালয় ও ডাক্তার এ্যাসোসিয়েশন সরকারী ও বেসরকারী সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করে অন্তত প্রস্তুত ৫০০ ডাক্তারদের কে ৬৪ জেলায় একেকটি টিম করে স্ট্যান্ড বাই রাখা

জরুরী যাদের মধ্যে জেনারেল ফিজিশিয়ান হার্ট বিশেষজ্ঞ এ্যজমা বিশেষজ্ঞ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আরো যাদের প্রয়োজন তাদেরকে সমন্বয় করে আগামী দুই বা তিন সপ্তাহের জন্য সারা দেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে টিম Deploy করা খুব জরুরী। ঐ জেলা বা উপজেলায় যারা অন্যান্য ডাক্তারগণ আছেন তারা তাদের নিয়মিত চিকিৎসায় গুরুত্ব দিয়ে পূর্বের মতই কাজ চালিয়ে যাবেন। আর উপজেলা কিংবা জেলা হসপিটালে

এমন উপসর্গের কোন সন্দেহ ভাজন রোগী পেলে তারা বিশেষজ্ঞ টিমের কাছে Refered করবেন কিংবা একটু বেশি নিশ্চিত হলে রোগীকে কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দিয়ে ঐ বিশেষজ্ঞ টিমকে খবর দেবেন। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ টিম ঐ রোগীর দায়িত্বভার নিয়ে টেস্ট করা থেকে শুরু করে চিকিৎসা এবং অন্যান্য পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রাখবেন।

সরকার জনগণ ও বিশেষজ্ঞ সিনিয়র ডকটর’সগণ এ সকল ডাক্তারদের নিয়মিত প্রেষণা দেবেন। সরকার বিশেষ সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করবেন প্রয়োজনে। জনগণ তাদেরকে উৎসাহিত করবেন। কোন প্রকার গুজব বা ঋনাত্নক প্রচারণা চালোনে উচিৎ হবে না কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খেয়াল রাখা প্রয়োজন যাতে ডাক্তার কিংবা তাদের পরিবারবর্গ কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সিনিয়র এ্যাডভাইজার ডাক্তারগণ তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন এবং ডাক্তারদেরকে Safety পরামর্শ দেবেন নিয়মিত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চিকিৎসার সাথে যে টিম কিংবা সহযোগীরা এই বিশেষ চিকিৎসাটা করবেন তাদেরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সহায়তা দেবেন। কোথাও যেন এ নিয়ে কোন অরাজকতা তৈরী না হয় সেটি খেয়াল রাখবেন। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এ প্রক্রিয়ার সাথে নিজেদেরকে অন্তর্ভূক্ত করবেন। বিশেষ করে সমাজের কোন দুষ্ট চক্র যেন গুজব কিংবা অন্য কোন স্বার্থে সমাজের মধ্যে কোন অরাজকতা তৈরী করতে না পারে সেক্ষেত্রে কার্যকরী ভুমিকা রাখতে হবে।

শিল্প সাহিত্য ও সাস্কৃতিক কর্মীরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকেই যতদূর সম্ভব সচেতনতা তৈরী ও পরিস্থিতি মোকাবেলার পরও যারা নতুন বিশ্বের সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করবে তাদের মনস্তাত্বিক আধার এখন থেকেই যোগান দিতে হবে। যেন শিশু কিশোর নারী কিংবা বৃদ্ধ কেউই মানসিক রোগী না হয়।

আর ধর্মীয়ভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত না করে প্রচলিত নিয়ম কানুন গুলো মেনে চলার ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় ঈমাম সাহেবেরা জনগণকে প্রেষিত করলে আমি মনে করি আপাতত এরকম প্রেক্ষাপটে আমরা সমাজের সকল স্তরের মানুষ যদি সমন্বিতভাবে একযোগে যার যার অবস্হান থেকে এটি মোকাবেলায় এগিয়ে আসি তাহলে একটা অসাধারণ সাফল্য আমরা অর্জন করতে পারবো এবং বিশ্ববাসিকেও উপহার দিতে পারবো এক নতুন চমক! আর মুক্তিযুদ্ধ করা জাতি হিসেবে বিশ্ববাসী দেখবে এ প্রজন্মের বাঙালির নতুন পরিচয় সেই সাথে উদ্ভাসিত হবে আমাদের বিস্ময়কর সক্ষমতা!

লেখক: গীতিকবি সুরকার কন্ঠশিল্পি ও কলামিস্ট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads