• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মুক্তমত

শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবহারিক কর্মমুখী করতে হবে

  • প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মাইন উদ্দীন হাসান

 

 

 

বেকারত্ব একটা অভিশাপের নাম। দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬-২৭ লাখ। দেশের মানুষের এত বড় একটা অংশ বেকার থাকার পেছনে কোন বিষয়টা আসলে দায়ী? চাকরির ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সেই শিক্ষাব্যবস্থায় তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যবহারিক শিক্ষা। ব্যবহারিক শিক্ষা বলতে মূলত বোঝায় তাত্ত্বিক জ্ঞানের হাতে-কলমে প্রয়োগ। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহারিক শিক্ষা তেমন নেই বললেই চলে। যার কারণে আমাদের দেশ শিক্ষিত জনবল তৈরি করতে পারলেও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে পারছে না। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সংকট বাজেটের অপ্রতুলতা। যেখানে কেনিয়ার মতো দেশ তাদের মোট বাজেটের ৪৫ শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করে, সেখানে আমাদের দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ ১১-১২ শতাংশ। শিক্ষাব্যবস্থায় এত কম বাজেট আমাদের দেশকে পিছিয়ে রেখেছে। কারণ বাজেট কম বরাদ্দ হওয়াতে ব্যবহারিক শিক্ষার পেছনে যে টাকা ব্যয় করা দরকার, তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো করতে পারছে না। মূল বিনিয়োগের জায়গা শিক্ষাকে নিশ্চিত করা দরকার।

শিক্ষাকেও বের করতে হবে মুখস্থ ও গতানুগতিক প্রশ্ন-উত্তরের কবল থেকে, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, প্রবলেম সলভিং, কমিউনিকেশন দক্ষতা তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। এই খাতে তাই বেশি বাজেট বরাদ্দ দিলে ব্যবহারিক শিক্ষা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব স্থাপন এবং আইটি সরঞ্জাম ক্রয় করা সম্ভব হবে। এতে পড়ালেখা শেষ করে বসে থাকতে হবে না কোনো শিক্ষার্থীকে। এই ব্যবহারিক শিক্ষা স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করবে।

তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ হয় ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে। একটা জাতি ব্যবহারিক শিক্ষায় যত শক্তিশালী হবে, সেই জাতি নিজের বেকারত্ব দূর করার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে দেশকে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। তবে আমাদের দেশের ব্যবহারিক শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা কম থাকার কারণে দেশ পিছিয়ে রয়েছে এবং পিছিয়ে রয়েছে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। এর ফলে পৃথিবীর এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ের তালিকা প্রস্তুতের সময় বিশ্লেষণ করা হয় ৫টি মানদণ্ড। শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণার সংখ্যা ও সুনাম, গবেষণার উদ্ধৃতি, এ খাত থেকে আয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। এই মানদণ্ডগুলো শিক্ষাব্যবস্থায় যত বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে, আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তত সামনের দিকে অবস্থান করবে। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে গবেষণার দিক থেকেও। গবেষণায় বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬তম এবং বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকেও খারাপ অবস্থা দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। উচ্চশিক্ষার এই বেহাল দশার কারণ হলো মান যাচাই না করে যে কোনো নিম্ন মানের কলেজকেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। বরং সরকারের উচিত যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করে, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোর গবেষণার দিকে নজর দেওয়া।

আজকের পৃথিবীতে ইউরোপের দেশগুলোর এত উন্নতি ও প্রসারে ভূমিকা পালন করছে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ তারা তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি সুযোগ তৈরি করছে ব্যবহারিক শিক্ষা অর্জনের। ব্যবহারিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হচ্ছে এবং দেশকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চ মর্যাদায়।

বর্তমান সময়টা প্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে প্রযুক্তির নানান দিক। যেগুলোতে ইমপ্রুফ করা হচ্ছে আয়ের বিভন্ন উৎস। সময়ের চাহিদার কারণেই এখন প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও জুতসই প্রযুক্তির শিক্ষা দেওয়া। যে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে পারবে দেশের সম্পদ হিসেবে।

তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবধর্মী ও ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুথিগত মুখস্থ বিদ্যার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এর সাথে সরকারের মনোনিবেশ করতে হবে চাকরির বাজারের দিকে এবং গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ব্যবসায়ের উদ্দশ্যে সহজ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। চাকরির বাজার সৃষ্টিতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে অধিক কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads