• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

স্বাস্থ্য

অসচেতনতায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে যক্ষ্মা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০১৮

চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাবে সাধারণ যক্ষ্মা রোগ পরিণত হচ্ছে ‘বহু ওষুধ প্রতিরোধী’ বা ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিসটেন্ট টিউবার কিউলোসিসে’ (এমডিআর টিবি)। রোগটি তখন চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দিনে দিনে দেশে এমডিআর যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় এখনো শতকরা ৮০ জন এমডিআর যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।  

নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের ব্যর্থতায় দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসা না পেয়ে অনেক শিশু অকালে মারা যাচ্ছে। শহুরে শিশুদের মধ্যেও রোগটির প্রকোপ বাড়ছে। গত বছর সরকারি হিসাবে শিশু যক্ষ্মারোগী চিহ্নিত হয়েছে ১০ হাজার ১৮৯ জন। তাদের মধ্যে ‘এক্সটেনসিভলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ (XDR) রোগী ১২ জন। তালিকায় প্রতিবছর যোগ হচ্ছে নতুন রোগী। মোট যক্ষ্মা রোগীর ৩ শতাংশ শিশু। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ অবস্থায় শঙ্কিত। 

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এমডিআর যক্ষ্মা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে তা আগামীতে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে উঠবে। তারা জানান, যক্ষ্মার প্রকোপ ও বহু ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, সম্প্রতি এমন দেশের তালিকা তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। বাংলাদেশের নাম আছে ওই সংস্থার দুটি তালিকাতেই। বিশ্বে যক্ষ্মার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি দেশের মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। ফলে সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে রোগটি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় বর্তমানে যা আছে, তা কিছুতেই পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসক, জনবল ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির স্বল্পতা আছে। ফলে এমডিআর যক্ষ্মায় রোগীর মৃত্যু বাড়ছে। প্রতিদিন যক্ষ্মায় দেশে অন্তত ১৮০ জন মারা যাচ্ছে। প্রতিবছর প্রতি লাখে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে ২২১ জন।

এমডিআর যক্ষ্মায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘এমডিআর যক্ষ্মা হওয়ার পেছনে রোগীর অসচেতনতাও কাজ করছে। যক্ষ্মার চিকিৎসায় ছয় বা আট মাসের কোর্স থাকে। অনেকে পুরো কোর্স শেষ করেন না। ফলে তাদের রোগটি একপর্যায়ে বহু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।’

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, যেকোনো রোগীর শরীর থেকে যক্ষ্মার জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস করতে কমপক্ষে ছয় মাস সঠিক মাত্রায় ওষুধ সেবন দরকার। কোর্স শেষ হওয়ার আগে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিলে তা এমডিআর যক্ষ্মায় পরিণত হয়। এমডিআর যক্ষ্মার রোগীদের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে সরাসরি এর জীবাণু ছড়াচ্ছে। 

দেশে এমডিআর যক্ষ্মায় আক্রান্তের সংখ্যা কত, এ বিষয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। রোগীদের বেশিরভাগ সরকারি চিকিৎসা কর্মসূচি ও শনাক্তের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও কোনো পরিসংখ্যান তৈরি করতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে অনেকে বলেন, ১০ হাজারের বেশি এমডিআর যক্ষ্মার রোগী আছে। ওই সংস্থা বলছে, প্রতি লাখে এমডিআর যক্ষ্মা রোগীর হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কয়েক কর্মকর্তা জানান, সচেনতা না থাকায় যক্ষ্মার জটিল পর্যায় এমডিআরে আক্রান্ত হয়েও অনেক রোগী বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতাল থেকে পুরো চিকিৎসা নিচ্ছে না। তাদের চিকিৎসা নেওয়া দরকার ২০ থেকে ২৪ মাস। কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়েই অনেকে নিজেকে সুস্থ ভেবে আর ওষুধ সেবন করছেন না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাবনা, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় এমডিআর যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এতে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। গত বছর সারা দেশে মাত্র ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এ কর্মসূচির মাধ্যমে। ৩৩ শতাংশ রোগী এখনো সব ধরনের চিকিৎসা সেবার বাইরে রয়ে গেছেন।

জানতে চাইলে কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘এমডিআর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ এখন চ্যালেঞ্জ। দিন দিন এর প্রকোপ বাড়ছে। রোগটি শনাক্তকরণে আধুনিক যন্ত্রপাতির (জিন এক্সপার্ট) স্বল্পতা আছে। প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি করে জিন এক্সপার্ট থাকা দরকার। অথচ সারা দেশ মিলিয়ে এ যন্ত্র আছে মাত্র ১৯৩টি। ফলে অনেক রোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের হার প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যায় ৭৭ জন ও আরোগ্যের হার ৯৫ শতাংশ।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চলতি বছরের এক জরিপ বলছে, ‘বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৬৬ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ৩৩ শতাংশ রোগী এখনো চিকিৎসার বাইরে।’ ৩৩ শতাংশের এখনো চিকিৎসার বাইরে থাকার বিষয়ে একমত ডা. শামিউল ইসলাম।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads