• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

স্বাস্থ্য

চিকেন পক্স নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারনা

  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই ২০১৮

পক্স- এক সময়ের আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ‘বিশ্বনাশী’ এক রোগ! যদিও যে ‘পক্স’ মারণব্যাধি হিসেবে বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল সেই ‘স্মল পক্স’ বা ‘গুটিবসন্ত’ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে, তবুও তার জ্ঞাতী ভাই হিসেবে যেটি টিকে আছে সেই চিকেন পক্স বা জলবসন্তও কিন্তু কম বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে না। একসময় বসতির পর বসতি উজাড় হয়ে যেতে থাকা গুটিবসন্তের উপমহাদেশীয় পরিচয় ছিল ‘মা শেতলার দয়া’ হিসেবে। শীতরা দেবীর ক্রোধ যাদের ওপর পড়ত, তারাই আক্রান্ত হতো এ রোগে। এজন্য তার পূজা আর্চাও করা হতো। সেদিন এখন নেই। বিজ্ঞানের সুফলদায়ী অবদানের জন্য সেই গুটিবসন্ত বা মারিগুটিকার অস্তিত্ব এখন শুধু একটিমাত্র বিজ্ঞানাগারেই রয়েছে।

তবে সময়ে অসময়ে যে পক্স আমাদের এখনো জ্বালাতন করে, তার অবস্থিতি ভীতি-জাগানিয়া না হলেও বহু বিড়ম্বনার কারণ ঘটায়। আমরা এতদিনে জেনে গেছি কোনো দেবদেবীর ক্রোধ বা কোনো সাধুসন্তের অভিশাপ নয়, পক্স বা বসন্তের কারণ হলো একপ্রকার জীবাণু। চিকেন পক্স (চিকেন পক্সের সঙ্গে চিকেনের সম্পর্কটাও বোধগম্য নয়), যা সাধারণ্যে জলবসন্ত নামে পরিচিত, তার কারণ হলো Varicella-zoster Virsus (ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস) নামের একপ্রকার আণুবীক্ষণিক জীবাণু। বিশ্বব্যাপী রোগটির বিস্তার যেকোনো সময়ে হলেও উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় শীতকালে এবং অন্যান্য অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে।

শরীরে ছোট ছোট গোলাপি ফুসকুড়ি ওঠার মধ্য দিয়ে এর শুরু। আস্তে আস্তে মাথা, মুখ ও হাত-পায়ে ছড়িয়ে পড়ে ওগুলো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকারেও বড় হতে থাকে। প্রতি ৪ দিন পর পর নতুন ফুসকুড়ি দেখা দিতে থাকে। ক্ষতের মধ্যকার তরল প্রায় স্বচ্ছ পানির মতো বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি জলবসন্ত নামে পরিচিত এবং একই সঙ্গে সাধারণের মধ্যে কিছু ভুল ধারণাও তৈরি হয়েছে অসুখটি নিয়ে।

ছুঁত লাগা- পক্স বা বসন্ত রোগীর কাছে সাধারণত কোনো স্ত্রীলোককে যেতে দেওয়া হয় না ‘ছুঁত’ লাগার ভয়ে! অর্থাৎ কোনো স্ত্রীলোক বিশেষ করে সে যদি ঋতুকালীন সময়ে থাকে, তাকে রোগীর কাছে যেতে দিলে রোগীর রোগের ভয়াবহতা বেড়ে পক্সে পুঁজ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে যদি এমন কেউ রোগীর কাছে যায় তবে রোগীকে সোনা-রুপা ধুয়ে সে পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে হবে। এর কোনো ভিত্তি নেই।

রোগীকে মাছ-মাংস-দুধ বা টকজাতীয় ফল খাওয়ানো যাবে না- এসব খাবার খাওয়ালে রোগ বেড়ে যাবে এবং রোগীর শরীরের ক্ষতগুলো পেকে যাবে! অসত্য ধারণা পুরোটাই। বরং রোগীকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। কেবল যেসব খাবার খেলে শরীরে চুলকানি হয় বা বেড়ে যায় (ব্যক্তিবিশেষে), সেগুলো বাদ রাখতে হবে। মাছ-মাংস-ডিম-দুধ শরীরের প্রোটিনের ঘাটতি মেটায়। যেকোনো অসুখ-বিসুখে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হয়। তাই পক্স হলেও রোগীকে এসব খাবার দিতে বাধা নেই। টক, বিশেষ করে লেবুজাতীয় ফলে ভিটামিন সি থাকে। খাদ্যের এ ‘ই’ উপাদানটি দ্রুত ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে। চিকিৎসকরা যেকোনো ক্ষতবিশিষ্ট রোগীকে টকজাতীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

উচ্ছে/করলা বা তিক্ত স্বাদযুক্ত শাকসবজি খাওয়াতে হবে- সাধারণ উপাদানের বাইরে এগুলোতে এমন কোনো উপাদানের খোঁজ মেলেনি, যেগুলো পক্সকে সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।

রোগীকে ফলি মাছ খাওয়ালে রোগ দ্রুত সেরে যাবে- পক্সের ক্ষতগুলো শুকানোর সময় আঁশ তৈরি করে। ফলি মাছ খেলে এই মাছের মতো অজস্র আঁশ রোগীর শরীরে সৃষ্টি হয়ে দ্রুত নিরাময় হয়ে যাবে বলে প্রচলিত বিশ্বাস। বলাবাহুল্য, এর কোনো ভিত্তি নেই।

পক্স হলে সাবধানে থাকতে হবে। যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই রোগীকে ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলো থেকে সাবধানে থাকতে হবে। রোগীকে আলাদা রাখতে হবে। বিশেষ করে যখন ক্ষতের আঁশগুলো ঝরতে থাকে, ওগুলো সাবধানে কুড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ক্ষতগুলোতে পুঁজ হলে বুঝতে হবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ত্বকে ব্যবহারের এবং খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের এবং নবজাতকদের বেলায় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বরাবর অন্যান্য রোগের মতোই পক্স হলেও শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

 

ডা. রাণা হাসান

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads