• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

স্বাস্থ্য

জীবন বাঁচাতে রক্তদান

  • ইশতিয়াক আবীর
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে এদেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেশকিছু সংগঠন। এর মধ্যে খুবই কার্যকর প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করেছে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরাম। বর্তমানে দেশের সবকটি জেলায় কাজ করছে বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের সক্রিয় টিম। সংগঠনটির নানা দিক নিয়ে লিখেছেন ইশতিয়াক আবীর

 

এক আত্মীয়ের সিজার অপারেশনের জন্য এ নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। রক্তের প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংক আর মেডিকেল কলেজে ছোটাছুটি করেও পাওয়া যাচ্ছিল না দুর্লভ গ্রুপের রক্ত। এদিকে ডাক্তার জানালেন, দ্রুত সিজার করতে না পারলে বিপদ হবে। দিশাহারা হয়ে পরিচিত সবাইকে ফোন দেওয়া শুরু করলেন। রক্তের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে পোস্ট করলেন ফেসবুকেও। অনেক চেষ্টা আর যোগাযোগের পর রক্ত নিয়ে কাজ করা একজন স্বেচ্ছাসেবী বন্ধুর মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া গেল একজন এ নেগেটিভ রক্তদাতা। সেই দিন এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারলেন কামরুল। প্রতিজ্ঞা করলেন রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা ও এতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করবেন তিনি। সেই ইচ্ছা থেকেই কামরুল আহসানের হাত ধরে বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের যাত্রা শুরু।

রক্তদান নিয়ে কাজ শুরু করতে গিয়ে পরিচিত হলেন দেশের বিভিন্ন জেলার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে। তখন থেকেই কামরুল আহসানের মাথায় একটা সিদ্ধান্ত উঁকি দিল।

কেমন হয় যদি সব স্বেচ্ছাসেবী ও রক্তদাতাদের একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসা যায়? এতে কাজ করতে অনেক সুবিধা হবে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা যাবে। এতে দেশের যেকোনো প্রান্তে খুব দ্রুত রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। এই চিন্তা থেকে ফেসবুকে বিভিন্ন জেলার স্ব্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের নিয়ে একটি গ্রুপচ্যাট খোলেন। সেখান থেকেই ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর শুরু বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের কার্যক্রম।

সংগঠনটি ইতোমধ্যে ৪০ হাজার মানুষের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের সচেতনতায় কাজ করছে। রক্তদানের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে ৫০ হাজার লিফলেট ও ৬ হাজার ফেস্টুনে সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। রোহিঙ্গাদের নির্মম হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটে মানববন্ধন করেছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ, দেশের প্রতিকূল অবস্থায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, পরিষ্কার-পরিছন্নতা কর্মসূচি, অসহায়দের আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনসহ নানা ধরনের সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আসছে সংগঠনটি।

২০১৫ সালে জাতীয় রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটিতে বিভিন্ন জেলার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা ও ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সংবর্ধনা দেয় বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরাম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে সংগঠনটির দ্বিতীয় বর্ষপূতি উপলক্ষে বিভিন্ন জেলার ৩০০ রক্তদাতা ও ৪০টি সংগঠনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৭ সালে জাতীয় রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা সিটিতে বিভিন্ন জেলার ৫০০ রক্তদাতা ও ৫০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রক্তদান কার্যক্রমকে আরো সহজ করতে সম্প্রতি সংগঠনটি তৈরি করেছে ‘ব্লাড ম্যানেজার’ অ্যাপস। এই অ্যাপসের মাধ্যমে ৬৪ জেলার সব স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন রোগীরা। এ ছাড়াও সরাসরি অ্যাপস থেকেও রক্তদাতা খুঁজে দেবে অ্যাপসটি। অ্যাপসটিতে রক্তদাতারা নিজের ছবিসহ সহজে নিবন্ধন করতে পারবেন।

ভবিষ্যতে প্রত্যেক উপজেলায় কার্যকর টিম গঠন করে রক্তদানের সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক জেলার স্ব্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রক্তদাতাদের আরো উৎসাহী করতে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ ছাড়া ৬৪ জেলায় রক্তদাতার সন্ধান দিতে কল সেন্টার চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা কামরুল আহসান। তিনি বলেন, রক্তের অভাবে যাতে একটি রোগীর মৃত্যু না হয়, সেই স্বপ্ন দেখছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads