• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বর

ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বর

ছবি : ইন্টারনেট

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুও রয়েছে সর্বত্র

ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৮

আবহাওয়ার কিছুটা নড়বড় মানিয়ে নিতে পারছে না অনেকের শরীর। এক-আধটু ওলটপালট হলেই অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। এ অসুস্থতা প্রধানত সর্দি, কাশি বা ঠান্ডাজনিত রোগ। সবশেষ আবহাওয়া বদলে যায় ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাতে কমে তাপমাত্রা। এতে রাজধানী ঢাকায় ঘরে ঘরে প্রকট হয়ে ওঠে জ্বরের সঙ্গে ঠান্ডাজনিত অসুখ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আবহাওয়া পরিবর্তন ও তীব্র গরমের পর হঠাৎ ঠান্ডার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। নানা বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাস জ্বরসহ কোল্ড ডায়রিয়ায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলেও তাদের অভিমত। ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন যত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে তাদের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ৬০ শতাংশ। রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরের বাসিন্দারাও আছেন বলে কয়েকটি হাসপাতালের কর্মকর্তা জানান।

সাধারণ জ্বর হলেও অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে ছুটোছুটি করছেন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জ্বর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় অনেকে সাধারণ জ্বরেও আতঙ্কে ভোগেন বলে জানান কয়েক চিকিৎসক। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তাদের ভিড় বাড়ছে। অযথা আতঙ্কিত না হতে তাদের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বয়স্ক ও শিশুরাই বিরূপ আবহাওয়ায় বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। জ্বরের সঙ্গে শিশুদের ভোগাচ্ছে খুশখুশে কাশি। একই পরিবারে একাধিক সদস্যের জ্বরে পড়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

যোগাযোগ করলে বিএসএমএমইউর মেডিসিন অনুষদের ডিন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আবহাওয়ারও বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। এতে রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ও মানবদেহে রোগ সৃষ্টিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস জন্ম নেয়। শরীরে ভাইরাস জন্মানোর প্রভাবে ভাইরাস জ্বর দেখা দেয়।’

পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গত কয়েক দিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড় বেড়েছে। অধিকাংশ রোগীকে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বহির্বিভাগ থেকেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলেন কি না এ ভয় থেকেই হাসপাতালে ছুটেছেন। তবে কারো কারো আতঙ্ক অমূলক নয়। ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগটিতে আক্রান্তদের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, চলতি মাসের ১৫ দিনে (১ থেকে ১৫ অক্টোবর) ঢাকায় ১২৯৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্ত হয় ৩০৮৫ জন। এ বছর মোট আক্রান্ত হয় ৭ হাজার ৫৫০ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ ভাইরাস আক্রমণের দুই দিন পরও জ্বর হতে পারে, আবার সাত দিন পরও জ্বর হয়। জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীরে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, সারা শরীরে চুলকানি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হওয়ার মতো লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা দেয়।

ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এ জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এর থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। আক্রান্তদের দরকার সঠিক চিকিৎসাসেবা। ভাইরাস জ্বরে কিছুতেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের দরকার নেই। প্যারাসিটামল সেবন করলেই হয়। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads