• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
টনসিল অপারেশন

সংগৃহীত ছবি

স্বাস্থ্য

টনসিল অপারেশন

  • ডা. মিলন কুমার চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৮

টনসিল কী : টনসিল হলো একধরনের লিম্পয়েড টিস্যু যা আমাদের জিহ্বার গোড়ার দুইপাশে গলার ভেতর অবস্থান করে। এটির আকার ডিমের মতো এবং এর গায়ে অমসৃণ গর্ত আছে। বাচ্চাদের টনসিল একটু বড় থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটির আকৃতি কমতে থাকে। তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে ভূমিকা পালন করে। তবে গলার চারদিকে টনসিল ছাড়াও আরো কিছু লিম্পয়েড টিস্যু থাকে, যেমন- অ্যাডিনয়েড (নাকের পেছনে গলার সংযোগস্থলে), টিউবাল টনসিল (ইউস্টাশিয়ান টিউবের মুখের পাশে), লিঙ্গুয়াল টনসিল (জিহ্বার গোড়ার অমসৃণ জায়গায়)। এগুলো একই কাজ করে এবং গলার ভেতর এসব টিস্যু থাকার জন্য অনেক সময় অমসৃণ দেখা যায়। ফলে অনেকেই নানা ধরনের দুশ্চিন্তায় ভোগেন যার কোনো ভিত্তি নেই।

অপারেশন কখন : টনসিল বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে, যেমন- এখান থেকে ভবিষ্যতে ক্যানসার হতে পারে। আসলে এ ধারণা সম্পূর্ণ অবান্তর। ক্যানসার হয় ধূমপান থেকে। গলায় টনসিলে ক্যানসার নিয়ে অনেকেই খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। টনসিলাইটিস থেকে বাতজ্বর হতে পারে কিন্তু এই সম্ভাবনাও খুব কম। বাচ্চার হাত-পা ব্যথা হলেই সেটা বাতজ্বর নয়, বাচ্চাদের হাড় বৃদ্ধির সময় হাত-পায়ে ব্যথা হয় এটাকে গ্রোয়িং পেইন বলা হয়।

সামান্য গলাব্যথা হলেই টনসিলাইটিস না-ও হতে পারে। টনসিলের ইনফেকশন আসলে খুবই কষ্টকর। রোগীর গলার দু’পাশে মারাত্মক ব্যথা হয়, তীব্র জ্বর থাকে। রোগী কিছু খেতে পারে না, এমনকি নিজের লালাটুকুও গিলতে পারে না। শয্যাশায়ী হয়ে স্যালাইন/ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। গলার ভেতর টনসিল দুটি লাল হয়ে ফুলে যায় এবং সাদা বিন্দু বিন্দু দাগ দেখা যায়। ৫-৭ দিন পর্যন্ত রোগীর কাজকর্ম, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়। তবে সবসময় টনসিলাইটিস এত তীব্র না-ও হতে পারে। এরকম টনসিলাইটিস যদি বছরে ৫-৭ বার হয় দুই-তিন বছর ধরে, তাহলে টনসিল অপারেশন করা হয়।

অনেক সময় এক অথবা দুদিকের টনসিলের নিচে পুজ জমা হয়। এটি খুবই কষ্টকর। একে বলা হয় পেরিটনসিলার অ্যাবসেস। এরকম ক্ষেত্রে একবার হলেই অপারেশন করা হয় (এক থেকে দেড় মাস পর)। অনেক রোগীর গলায় সবসময় টনসিলের মধ্যে মৃদু ইনফেকশন থেকে যায়, ফলে টনসিল দুটি সবসময় ফোলা থাকে। গলার বাইরের দু’পাশে লিম্পয়েড গ্রন্থি ফোলা থাকে এবং টনসিলের ওপর চাপ দিলে ভেতর থেকে সাদা একধরনের পদার্থ বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা তীব্র হলে অপারেশন করা হয়। বাচ্চাদের (৪-১০ বছর) ক্ষেত্রে বারবার সর্দি-কাশি হলে গলার ভেতর টনসিল এবং অ্যাডিনয়েড ফুলে যায়। সাধারণত একটু ফুলে গেলে সেটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই; কিন্তু যদি সে কারণে বাচ্চার খাবার খেতে, রাতে ঘুমের ভেতর শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাহলে তা বাচ্চার অনেক ক্ষতি করতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, প্রয়োজন হলে অপারেশন করিয়ে নেওয়া উচিত। বর্তমানে এটিই টনসিল অপারেশনের সবচেয়ে বড় কারণ। এক্ষেত্রে টনসিল অপারেশনের সঙ্গে একবারে অ্যাডিনয়েডেকটমি করা হয়।

কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে একদিকের টনসিল বড় হয়ে গেলে, টনসিলের গায়ে সন্দেহজনক ক্ষত দেখা গেলে অপারেশন করে ঐরংঃড়ঢ়ধঃযড়ষড়মু পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার আছে কি-না নিশ্চিত করা হয়। যদি কোনো বাচ্চার সুস্পষ্টভাবে বাতজ্বরের লক্ষণ থাকে এবং টনসিলের ইনফেকশন থাকে, তাহলে অবশ্যই টনসিল অপারেশন করা প্রয়োজন। যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে, তাদের সামান্য ঠান্ডা বা ধুলাবালিতে গলা খুশখুশ করে, সামান্য ব্যথা হয়, আবার গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে ব্যথা চলে যায়। এক্ষেত্রে এটিকে চযধৎুহমরঃরং বলা হয়। গলার ভেতর দেখলে জিহ্বার গোড়ার উল্টোদিকে লালচে দানা দানা দেখা যায়। এক্ষেত্রে টনসিল অপারেশন করে রোগীর কোনো লাভ হয় না। সতর্কতার সঙ্গে চললে সমস্যার হাত থেকে মুক্ত থাকা যায়।

আরেকটি কথা হলো, তীব্র ব্যথা-জ্বর কিংবা কাশি-সর্দি এরকম অবস্থায় টনসিল অপারেশন করা হয় না। সেক্ষেত্রে এক-দুই মাস পর অপারেশন করা হয়। ইতোমধ্যে ওষুধে রোগী সুস্থ হয়। টনসিল অপারেশনের সময় রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয়, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মুখ হাঁ করিয়ে মুখের ভেতর দিয়ে টনসিল দুটি অপারেশন করে বের করে আনা হয়।  যদিও বেশিরভাগ রোগী নিরাপদে অপারেশনের পর ভালোভাবে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads