• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সুস্বাস্থ্য ও সৃজনশীলতার জন্য হাঁটুন

সুস্থ থাকতে হলে হাঁটতে হবে নিয়মিত

সংগৃহীত ছবি

স্বাস্থ্য

সুস্বাস্থ্য ও সৃজনশীলতার জন্য হাঁটুন

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০১৮

আমাদের হাঁটা উচিত সুস্থ থাকা অবস্থা থেকেই। হাঁটাকে রোগ প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে মনে করা হয়। সুস্থ থাকতে হলে হাঁটতে হবে নিয়মিত।

হাঁটা নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী। সবচেয়ে সহজ, সস্তা, জনপ্রিয় এবং নিরাপদ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। হাঁটার স্বাস্থ্যসুবিধা অনেক। হাঁটা রক্তচাপ কমায়, হূদরোগের ঝুঁকি কমায়, মেদ কমায়, রক্তের সুগার কমায়। ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়ায় আর মন্দ কোলেস্টেরল এলডিএল কমায়। রক্তনালীর দেয়ালে চর্বি জমতে দেয় না, অ্যাথেরোসক্লেরোসিস প্রতিরোধ করে। হাঁটলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটা যথেষ্ট উপকারী। হাঁটার ফলে পেশির শক্তি বাড়ে, শরীরের ওজন ঠিক থাকে আর শরীর থাকে ফিট। হাঁটা হূদযন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। বিষণ্নতা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়ও হাঁটা উপকারী।

হাঁটার উপকার পেতে অবশ্যই সপ্তাহে অন্তত তিন বা চার দিন হাঁটতে হবে, হাঁটতে হবে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ধরে। হাঁটতে হবে যথেষ্ট দ্রুত যেন শরীর ঘামে। আপনি দৈনিক যত বেশি হাঁটবেন, মনে হবে আপনি ততই বেশি ভালো আছেন। ভালো থাকার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন : চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, হাঁটার ফলে মানুষের মেটাবলিক ক্রিয়া বেড়ে যায়। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গেঁটে বাত, ক্ষুধামন্দা, ইনসমনিয়া, মুটিয়ে যাওয়া রোধে দৈনিক কমপক্ষে ১ ঘণ্টা হাঁটা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলে থাকেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যায়। বিশেষ করে নিয়মিত আধা ঘণ্টা করে ছয় মাস হাঁটলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তা ১০ মিলিমিটার পারদ চাপ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।  অর্থাৎ যাদের রক্তচাপ রয়েছে ১২০/৮০, তাদেরটা কমিয়ে ১১০/৭০-এ নামিয়ে আনা সম্ভব। হাঁটার উপকারিতা অনেক।  দ্রুত ও নিয়মিত হাঁটলে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল থাকে। ভালো থাকে হার্ট। হাঁটার ফলে প্রচুর ঘাম হয়, আর ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীরের অনেক দূষিত পয়জন। হাঁটা শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনি ভালো মনের জন্যও। হাঁটলে পরিশ্রম হয় আর পরিশ্রমের ফলে মন-মেজাজ থাকে ফুরফুরে।

হাঁটুন সৃজনশীলতার জন্য : আমরা সবাই জানি, হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। তবে হাঁটাহাঁটিতে সৃষ্টিশীল চিন্তা-ভাবনার উন্নতি ঘটে এটি নতুন খবর। কাজেই সুযোগ পেলেই হাঁটুন। শরীর-মন ভালো থাকবে, সৃষ্টিশীলতারও বিকাশ ঘটবে। অনেক প্রতিভাবান-সৃষ্টিশীল মানুষ দাবি করে, হাঁটাহাঁটির সময় তারা শ্রেষ্ঠ আইডিয়াটি পেয়ে যান। তাদের একজন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, তিন বছর আগে যিনি মারা গেছেন। ডিজিটাল যুগের অন্যতম পুরোধা তিনি। স্টিভ জবস হেঁটেহেঁটেই তার সভার কাজগুলো সমাধা করতেন। একই ধরনের অভ্যাসে অভ্যস্ত ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। ‘জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি : লার্নিং, মেমোরি অ্যান্ড কগনিশন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডক্টর মেরিলি ওপেজো ও ড্যানিয়েল শোয়ার্জ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তারা জানান, হাঁটাহাঁটিতে ঘরে-বাইরে দু’জায়গাতেই আপনি একই ধরনের ফল পাবেন। এমনকি হাঁটাহাঁটির পর আপনি কিছুক্ষণ বসে থাকলেও কিন্তু সৃষ্টিশীলতার ক্ষতি হবে না।

আপনি যদি মননশীল মানুষ হন, তাহলে এটি আপনার জন্য সুখবর! কারণ আপনার সৃষ্টিশীলতাকে উসকে দেবে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় এ ব্যাপারে প্রমাণ পেয়েছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা শুয়ে-বসে দিন কাটান তাদের তুলনায় যারা সুযোগ পেলেই হাঁটাহাঁটিতে অভ্যস্ত, তাদের সৃষ্টিশীলতা গড়পড়তা ৬০ শতাংশ বেশি।

 

হাঁটার কিছু বিধিবিধান : ১. হাঁটা শুরু করার প্রথম ৫-১০ মিনিট এবং শেষের ৫-১০ মিনিট আস্তে হেঁটে আপনার শরীরকে ওয়ার্ম আপ ও ওয়ার্ম ডাউন করুন। ট্রেন চলার মতো।

২. হাঁটার আগে ও পরে একটু পানি পান করুন।

৩. খাওয়ার পরপরই হাঁটবেন না। ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

৪. দুপুরের ভরা রোদে হাঁটবেন না। সকাল বা বিকালের একটি সময় বেছে নিন।

৫. হাঁটা শেষ করে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে কিছু খেয়ে নিন।

 

 সূত্র : ক্রিয়েটিভিটি লেসন, ওয়ার্ল্ড সায়েন্স

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads