• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
স্ট্রোককে আমরা করব জয়

সংগৃহীত ছবি

স্বাস্থ্য

স্ট্রোককে আমরা করব জয়

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০১৮

২৯ অক্টোবর পালিত হয়েছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে- ‘স্ট্রোককে আমরা জয় করব’। চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রোক তিন ধরনের- মাইল্ড স্ট্রোক, ইসকেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক। বাংলাদেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক। দেশে বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভুগছে। প্রতি এক হাজারে আক্রান্ত হচ্ছে অন্তত ১০ জন। স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এটি সংক্রমণের মাধ্যমে হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, স্ট্রোক ঠেকাতে ওষুধের চেয়েও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন বেশি জরুরি। ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চললে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায় অনেকটাই।

বাংলাদেশ স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকরা জানান, দেশে প্রতি হাজারে গড়ে অন্তত ১০ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। প্রথম স্ট্রোক করার ৫ বছরের মধ্যে ঝুঁকির শঙ্কা বেশি থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’-এর বার্ষিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা জানান, এমন একটি সেন্সর আবিষ্কার করা হয়েছে যেটির ব্যবহার স্ট্রোকের রোগীকে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করবে। এটি রোগীর শরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং ক্রমাগত চিকিৎসকদের কাছে রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধরনের তথ্য সরবরাহ করতে থাকে। এরই মধ্যে ব্যবহারিকভাবে এই সেন্সর রোগীর ওপর প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া গেছে। সেন্সরটির নির্মাতা বিজ্ঞানী জন রজার্সের মতে, ছোট এই সেন্সরটির মধ্যে উন্নত ধরনের সেন্সর ফাংশনালিটি, মাইক্রোপ্রসেসর ও কম্পিউটিং দক্ষতা, রেডিও এবং পাওয়ার সাপ্লাই যুক্ত করা হয়েছে। আপাতত পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে যন্ত্রটির কাজ।

অনলাইন সাময়িকী স্ট্রোক অ্যান্ড ভাসকুলার নিউরোলজিতে প্রকাশিত অপর এক গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, জিঙ্কো বিলোবা নামে একটি গাছের ভেষজ নির্যাস স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্ক আবার কার্যক্ষম করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। জিঙ্কো বিলোবা অন্যতম সবচেয়ে প্রাচীন এক প্রজাতির গাছ। চীনে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং অবসাদের চিকিৎসায় এই ভেষজ ওষুধ ব্যবহার হয়। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন জিঙ্কো বিলোবা খাওযার পর রোগী কথা বলার জড়তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে এবং পেশির শক্তি অনেক দ্রুত ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছে। চীনে ৩৩০জন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর ওপর ছয় মাস ধরে এক পরীক্ষামূলক চিকিৎসা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন অসুখের পর যাদের এই ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তাদের মস্তিষ্ক ভালো কাজ করতে পারছে। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওই রোগীদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জিঙ্কো বিলোবা একা দায়ী কি-না তা খুব জোর দিয়ে এখনই বলা সম্ভব নয়। চীনের পাঁচটি হাসপাতাল থেকে রোগীদের নিয়ে নানজিং ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলে এই গবেষণা চালানো হয়।

স্ট্রোক ঠেকাতে- ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ওবেসিটির সমস্যা থাকলে নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া, ওজন বা ভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা, তেল-মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা, যাদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব, ভারী শরীর, তাদের জন্য ১৪০-৯০ প্রেশার স্বাভাবিক। এর থেকে খুব বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পর্যাপ্ত পানি পান করা। নিয়মিত ঘাম ঝরানো হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভেরমন্টের গবেষকরা বলছেন, ঝাঁঝালো লাল মরিচ খেলে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকি কমে। বিশেষ করে হার্ট ও স্ট্রোকের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় এটা।

রিডার্স ডাইজেস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২৩ বছর ধরে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা চালানো হয়েছে, যাতে ১৬ হাজার আমেরিকানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এখানে অল্প পরিমাণে ঝাঁঝালো মরিচ খাওয়া লোকদেরও মরিচ খাদক হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ২৩ বছর পর দেখা যায়, যারা ঝাঁঝালো মরিচ খায়, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি বাঁচে।

 

stroke.org এবং হেলেথ হার্ভার্ড পাবলিকেশন অবলম্বনে

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads