• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা

প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য

ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতা মাস

ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০১৮

ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ। ১৯৫০ সাল থেকে অসংখ্য গবেষণায় প্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। ফুসফুস ক্যানসারের ৯০ ভাগ কারণ প্রত্যক্ষ ধূমপান। সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রায় ৪০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান (কার্সিনোজেন)। যিনি দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খান, তার ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অধূমপায়ীর চেয়ে ২৫-৩০ গুণ বেশি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ার কারণে মেয়েদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। বিশেষ করে ইউএসএ, হাঙ্গেরি, ডেনমার্ক, চীন এবং নিউজিল্যান্ডসহ ২৮টি দেশে এই প্রবণতা দেখা গেছে। জীবাণুঘটিত রোগ না হলেও ফুসফুসের ক্যানসার একটি ভয়াবহ ব্যাধি। প্রতিবছর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ইদানীং মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিকসংখ্যক হারে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ১২ শতাংশ ভুগছে ফুসফুস ক্যানসারে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের নারীরাও যুক্তরাষ্ট্রের সমান হারে ফুসফুস ক্যানসারে ভুগছেন। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে তারা। ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য অন্যতম দায়ী ধূমপান। যে কারণে যদিও রোগটি তুলনামূলকভাবে পুরুষদের বেশি, ইদানীংকালে নারীদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও উল্লেখযোগ্য হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিরাই নয় নগরায়নের এই বিশ্বে কালো ধোঁয়াও ফুসফুসে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। ব্রেস্ট ক্যানসারের পরই বিশ্বব্যাপী নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ফুসফুস ক্যানসারে। ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় শীর্ষ কারণও এটি। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের ব্যাপকতার কারণ মূলত ধূমপান ও মদ্যপান। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, পরোক্ষ ধূমপান ও মাটির চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণেই বেশি হারে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা। জর্দা ও গুলের ব্যবহারও নারীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের হার জানতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওপর জরিপ পরিচালনা করছে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৯ জন নারী ক্যানসার রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। তাতে দেখা গেছে, এ রোগীদের ১২ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত।

চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘদিন কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, ক্রমে ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ। তাই তিন সপ্তাহের বেশি কাশি হলে যক্ষ্মার তিনটি পরীক্ষায় যদি যক্ষ্মা শনাক্ত না হয়, তাহলে সিটি স্ক্যান করতে হবে। সিটি স্ক্যানে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হলে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হলে শুধু অস্ত্রোপচার করলে রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা তথ্য বলছে, দেশে ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। আর নারী-পুরুষ মিলিয়ে ফুসফুস ক্যানসারে ভোগার হার ১৮ শতাংশ। বিভিন্ন বয়সী ১১ হাজার ক্যানসার আক্রান্ত নারী ও পুরুষের ওপর ওই গবেষণা পরিচালিত হয়। ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের গবেষণা তথ্য বলছে, গবেষণায় অংশ নেয়া নারী ক্যানসার রোগীদের গড় বয়স ৫৫ বছর। ৬২ শতাংশ রোগীর ডানদিকের ফুসফুসে ক্যানসার। অংশগ্রহণকারী ৭২ শতাংশ রোগী নিরক্ষর আর দরিদ্র ৮২ শতাংশ। এদের ৩৯ শতাংশ পান-জর্দায় আসক্ত। সরাসরি ধূমপায়ী ১৫ শতাংশ ও ৫ শতাংশ গুলসেবী।

বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ হতে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কার হয়নি। যদি একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে।

 

ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ

- ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া ফুসফুসের ক্যানসারের একটি লক্ষণ।

- কাশি যদি দীর্ঘদিন থাকে তবে সতর্ক হোন।

- দীর্ঘদিন যদি কাশি থাকে তাহলে আপনি নিজের কাশির ধরন সম্পর্কে পরিচিত থাকবেন। কাশি হঠাৎ আগের তুলনায় কর্কশ শোনালে, গম্ভীর শব্দ হলে, কফের সঙ্গে শ্লেষ্মা ও রক্ত গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

- পিঠে, বুকে ও কাঁধে ব্যথা ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

- স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর যদি হঠাৎ কর্কশ বা ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান।

- যে কোনো ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে এটি। অন্য ক্যানসারের মতো এই ক্যানসারেও হঠাৎ করে ওজন কমে যায়।

 

ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে খাবার-দাবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন- সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে। ফলিক অ্যাডিস সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন এ সি ই খেতে হবে। ব্রুকলি, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম জরুরি। মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। ইতিবাচক চিন্তা বাড়াতে হবে। সর্বোপরি ধর্মীয় অনুশীলন আপনাকে ভালো রাখবে।

ইন্টারনেট হেলথ অ্যান্ড কেয়ার অবলম্বনে

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads