• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহ

ছবি : সংগৃহীত

স্বাস্থ্য

অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহ

  • ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে নন-স্পেসিফিক ইউরেথ্রাইটিস। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মূত্রনালিতে প্রদাহ হয় অথবা মূত্রনালি ফুলে যায়। যেসব পুরুষ যত্রতত্র যৌনক্রিয়া করে এবং যে পুরুষের একাধিক যৌনসঙ্গিনী রয়েছে, তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহের কারণ কী

কিছু জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস অথবা ছত্রাক দ্বারা অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহ হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্লামাইডিয়া, মাইকোপ্লাজমা এবং হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস। একই সময়ে একাধিক জীবাণু আপনার মূত্রনালির প্রদাহ ঘটাতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণের  জন্য দায়ী জীবাণুটিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অরক্ষিত যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে আপনি এ সংক্রমণে সংক্রমিত হতে পারেন। যৌনসঙ্গমকে তখনই অরক্ষিত বলা হয় যখন কনডম ব্যবহার করা হয় না। আপনার যৌনসঙ্গিনীর গোসলের সাবান, শুক্রনাশক পদার্থ এবং যোনির রাসায়নিক উপাদানের দ্বারাও আপনার মূত্রনালির প্রদাহ হতে পারে। এসব দ্রব্য আপনার মূত্রনালিতে ঢুকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে এবং মূত্রনালি ফুলে যায়। কোনো বস্তু দ্বারা আঘাত অথবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে অথবা চিকিৎসাজনিত অবস্থা যেমন স্টিভেনস-জনসন সিনড্রোম মূত্রনালির প্রদাহ ঘটাতে পারে।

 

অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহের উপসর্গগুলো কী

অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহে অনেক সময় আপনার কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে, অথবা আপনার নিচের যে কোনো উপসর্গ থাকতে পারে :

* সাধারণের চেয়ে ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হওয়া।

* জ্বর

* পেটে ব্যথা

* প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অথবা জ্বালাপোড়া করা

* লিঙ্গে ব্যথা অথবা চুলকানি

* যৌনসঙ্গমের সময় ব্যথা করা

* লিঙ্গ দিয়ে পাতলা ও সামান্য ঘোলা, অথবা ঘন হলুদ-সবুজ রস নিঃসৃত হওয়া।

 

কীভাবে অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহ নির্ণয় করা হয়

এক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনাকে বেশকিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন। আপনার যৌনসঙ্গিনীর ব্যাপারেও জানতে চাইতে পারেন। আপনার যৌন ইতিহাস জানার পর আপনার সংক্রমণ ক্লামাইডিয়াজনিত কি-না তা পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।

আপনার নিচের যে কোনো পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে :

রক্ত পরীক্ষা

আপনার শরীর কেমন আছে, তা জানার জন্য আপনার রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার হাত, বাহু, অথবা কনুইয়ের ভাঁজের রক্তনালি থেকে রক্ত নেওয়া যেতে পারে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যাবে। একবারের বেশি নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

 

মূত্রনালির রস পরীক্ষা

একে ইউরেথ্রাল ফ্লুইড টেস্ট বলে। এক্ষেত্রে মূত্রনালির মধ্যে একটা বাটন সোয়ার দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। তারপর এই রস মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে দেখা হয় কোনো রক্তের শ্বেত কণিকা অথবা জীবাণু রয়েছে কি-না। যদি জীবাণু থাকে তাহলে বলা সম্ভব হয় সেটা কোন ধরনের জীবাণু।

 

প্রস্রাব পরীক্ষা

অন্তত এক ঘণ্টা প্রস্রাব ধরে রাখার পর প্রস্রাব সংগ্রহ করা হয়। এরপর বিশেষ পরীক্ষার জন্য প্রস্রাব পাঠানো হয়। দেখা হয় রক্তের শ্বেত কণিকা অথবা জীবাণু রয়েছে কি-না।

 

কীভাবে অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহের চিকিৎসা করা হয়

চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার উপসর্গ কমে যেতে পারে। যদি জীবাণুর কারণে সংক্রমণ ঘটে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে উপকার পাওয়া যায়। কিছু পুরুষের চিকিৎসা ছাড়াই অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহের উপসর্গ চলে যায়। যদি এমনটি ঘটে তাহলেও চিকিৎসা করতে হবে কারণ তখনো আপনার মধ্যে জীবাণু অবস্থান করে যা আপনার মাধ্যমে অন্যের মধ্যে ছড়াতে পারে। মূত্রনালির প্রদাহ প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্যই আপনার এবং আপনার যৌনসঙ্গিনীর দুজনেরই চিকিৎসা করাতে হবে। যদি আঘাতজনিত কারণে মূত্রনালির প্রদাহ হয় তাহলে দৈনিক কমপক্ষে দুবার ১৫ মিনিট করে হটবাথ নেবেন।

 

কীভাবে অনির্দিষ্ট মূত্রনালির প্রদাহ প্রতিরোধ করা যেতে পারে

* যৌনমিলনের সময় সবসময় কনডম ব্যবহার করবেন। সঠিকভাবে কনডম পরবেন।

* মূত্রনালির প্রদাহ রয়েছে এমন কারো সঙ্গে যৌনমিলন করবেন না।

* যদি আপনি মূত্রনালির প্রদাহের জন্য চিকিৎসা নিতে থাকেন, তাহলে চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যৌনমিলন করবেন না, এমনকি কনডম পরেও না। আপনার যৌনসঙ্গিনীকেও একই সঙ্গে চিকিৎসা করবেন, তার কোনো উপসর্গ না থাকলেও।

* আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন আপনি তার সঙ্গে যৌনমিলন করতে পারবেন কি-না। কারণ আপনি তার মধ্যে জীবাণু ছড়াতে পারেন। কিছু জীবাণু জন্মের সময় শিশুর মধ্যে যেতে পারে।

 

সহযোগী অধ্যাপক

অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads