• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ক্যানসারে অবসাদের কারণ ও প্রতিকার

ছবি : সংগৃহীত

স্বাস্থ্য

ক্যানসারে অবসাদের কারণ ও প্রতিকার

  • প্রকাশিত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্যানসারের কারণে শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে, যার জন্য অবসাদ সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ কিছু ক্যানসার প্রোটিন সাইটোকাইন নিঃসরণ করে যার কারণে অবসাদ হয়। অন্যান্য ক্যানসারে শরীরে শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে যার কারণে আপনার মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়, এ জন্য কিছু অংশের যেমন (লিভার, কিডনি, হার্ট ও ফুসফুস) ক্ষতি হয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে আপনার অবসাদ হতে পারে। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, অস্ত্রোপাচার, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন এসব ক্লান্তির কারণ হতে পারে। কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির যখন লক্ষ্য থাকে ক্যানসারের কোষকে ধ্বংস করার তখন এই থেরাপি সুস্থ কোষকেও ধ্বংস ধ্বংস করে, যার কারণে ক্লান্তি সৃষ্টি হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কিছু চিকিৎসা যেমন- রক্তশূন্যতা, বমি বমি ভাব, বমি, ব্যথা, অনিদ্রা ও মেজাজ পরিবর্তন এসব কারণে অবসাদ হতে পারে বা আরো অনেক কারণে অবসাদ হতে পারে। যদি চিকিৎসায় অনেক সুস্থ লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হয় তাহলে রক্তশূন্যতা বেড়ে যেতে পারে। ক্যানসার যদি অস্থিমজ্জা ছড়িয়ে যায় এবং রক্ত উৎপাদনে বাধা দেয় বা রক্ত পড়ে যায় তাহলেও রক্তশূন্যতা হতে পারে। এসব কারণে অবসাদ হতে পারে। যদি আপনি অনেক দিনের বেশি ব্যথা অনুভব করেন যার জন্য কাজের ক্ষমতা, খাবার খাওয়া কমে যায় বা ঘুম কম হয় বা যদি বেশি চিন্তিত থাকেন তাহলেও অবসাদ হতে পারে। ক্যানসার নির্ণয়ের সময় চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে আপনার ক্লান্তি বা অবসাদ হতে পারে। রাতে যদি ঘুম না আসে বা বার বার ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে ক্লান্তি অনুভব হয়।

এজন্য দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার দরকার। ক্যানসার হলে পুষ্টির চাহিদা পরিবর্তন হয়, যার কারণে ক্লান্তি লাগতে পারে। উদাহরণস্বরূপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হতে পারে বাপ পর্যাপ্ত পুষ্টি নাও থাকতে পারে বা পর্যাপ্ত পুষ্টি নাও থাকতে পারে। ক্ষুধা থাকে তবু চিকিৎসার সময় বমি বমি ভাব এবং বমির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্য খাবার খেতে যদি না পারেন, তাহলে পুষ্টি কমে যেতে পারে তাই ক্লান্তি লাগতে পারে। কিছু ওষুধ যেমন-ব্যথা কমানোর ওষুধের জন্য ক্লান্তি হতে পারে। ক্যানসার চিকিৎসার সময় হরমোনের অনেক পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তনের জন্য শরীরের ক্লান্তি হয়। কেমোথেরাপি, অস্ত্রোপাচার, রেডিওথেরাপি এসব চিকিৎসার কারণে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় এবং হরমোন পরিবর্তন হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি, অন্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ের পরিবর্তনের কারণে ক্লান্তি হতে পারে।

যাদের ক্যানসার আছে তারা সবাই ক্লান্তি অনুভব করেন; যদি আপনি ভাবেন, ক্যানসারে ক্লান্তির মাত্রা খুব বেশি বা আপনি শক্তি পাচ্ছেন না তাহলে কেমন অনুভূতি হচ্ছে ভাবুন। এই ক্লান্তি ধারাবাহিকভাবে বা চিকিৎসার শেষেও হতে পারে। এটা চিকিৎসা শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরও স্থায়ী হতে পারে।

 

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

কিছু ক্যানসার চিকিৎসায় অবসাদ আশা করা যায়। কিন্তু যদি আপনি খুঁজে পান যে, প্রতিদিনের কাজ কর্মের সময়, পুরো সপ্তাহ এই ক্লান্তি বাধা দেয় তাহলে আপনার ডাক্তারকে বলুন। এলোমেলো ভাব, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য না থাকা বা কমে যাওয়া, অক্ষমতার কারণে ২৪ ঘণ্টার বেশি বিছানা ছেড়ে না ওঠা, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, যে কোনো খারাপ লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে বা যদি আপনি নিচের এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তাহলে ডাক্তারকে সরাসরি বলুন।

ক্যানসারের ক্লান্তির অনেকগুলো কারণ হতে পারে। তাই আপনার ডাক্তার এই উপসর্গকে কমানোর জন্য অনেক পদ্ধতির কথা বলবেন। এই মেডিকেলের কিছু নিয়ম এবং নিজের যত্নের কিছু পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

মেডিকেল : হাসপাতালে চিকিৎসার ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনার রক্তশূন্যতার কারণে ক্লান্তি হয় তাহলে রক্ত দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। ওষুধ দিয়ে অস্থিমজ্জা উদ্দীপিত করে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করতে পারে। যদি আপনি মানসিক চাপে থাকেন তাহলে ডাক্তার ওষুধের নির্দেশ দিবেন যাতে আপনার চাপ কমে যায়, ক্ষুধা বাড়ে এবং আপনার ভালো অনুভূতি হয়। ক্লান্তি দূর হলে আপনার কাজের উন্নতি হবে এবং ভালো ঘুমাতে পারবেন। মাঝে মাঝে ঘুম ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ দেয়।

 

নিজেই নিজের যত্ন নিন

অবসাদের সঙ্গে মোকাবেলা করে নিজেকে তৈরি রাখতে পারেন।  যেমন- আপনি দিনে বিশ্রামের সময় ঠিক করুন। বেশিক্ষণ একসঙ্গে বিশ্রাম না নিয়ে কিছু সময় পর পর বিশ্রাম নিন। গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আপনার শক্তি সঞ্চয় করুন। সময়ের সঙ্গে অবগত থাকুন, যে সময় আপনি ভালো অনুভব করছেন, এ সময় আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজন হলে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন। আপনার শক্তি বজায় রাখুন। প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় পানীয় পান করুন। কেননা এটা আপনার শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে। ক্যাফেইন এবং মদ এড়িয়ে যাওয়া ভালো। শক্ত খাবার খেলে যদি আপনার বমি বমি ভাব এবং বমি হয় তাহলে এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। হালকা ব্যায়াম দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তির মাত্রা রক্ষা করবে। চিকিৎসা শুরু থেকে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম চিকিৎসার সময় আপনার ক্লান্তি ভাব দূর করবে।

আপনি কখনো ভাবেন না যে এই ক্লান্তি ক্যানসার চিকিৎসার অংশবিশেষ, যার কারণে অবসাদ অবসাদ অনুভব করছেন। যদি এটা আপনার কাজকর্মে প্রভাব ফেলে আপনাকে হতাশাগ্রস্ত করে তোলে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।

 

প্রফেসর ডা. জাফর মো. মাসুদ

লেখক : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads