• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
হরমোন বেশি হলেও বিভিন্ন রোগ হতে পারে

হরমোন বেশি হলেও বিভিন্ন রোগ হতে পারে

প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য

হরমোন বেশি হলেও বিভিন্ন রোগ হতে পারে

  • অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল আনসারী
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৯

দেহের কার্যাবলি ঠিক রাখার জন্য অনেক গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড কাজ করে। এগুলো হরমোন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। এদের মধ্যে জীবনরক্ষাকারী গ্রন্থি নামে পরিচিত অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি। কারণ শারীরিক অথবা মানসিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হলে এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মজার ব্যাপার হলো, এ গ্রন্থি এত জটিল কাজ করলেও আকারে কিন্তু বেশ ছোট। কিডনির ওপরে এরা টুপির মতো অবস্থান করে। ছোট হলে কী হবে, এ গ্রন্থির বাইরের অংশ তিন শতাধিক হরমোন নিঃসরণ করে। এদেরকে একত্রে স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন বলা হয়।  স্টেরয়েডের কথা মোটামুটি সবারই জানা। মাঝে মাঝে ক্রীড়াবিদদের ড্রাগ টেস্ট করা হয়। অনেক ক্রীড়াবিদ তাদের নৈপুণ্য বাড়াতে ওষুধ ব্যবহার করেন। এটাও কিন্তু স্টেরয়েড। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ভেতরের অংশ থেকে নিঃসৃত আরেক রকমের হরমোনকে ক্যাটকোলামাইন জাতীয় হরমোন বলা হয়।  স্টেরয়েড ও ক্যাটকোলামাইন দুটোই শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। কোনোটির অভাব হলে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতা কমে গেলে অথবা নষ্ট হয়ে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। ফলে সামান্য আঘাতে অথবা সাধারণ রোগেই রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারে। আবার এ হরমোন বেশি হলেও শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। কিন্তু এ রোগগুলো নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিন্দুমাত্র সচেতনতা  দেখা যায় না।

অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের হরমোন কমে গেলে যে রোগ হয় তাকে এডিসন্স ডিজিস বলা হয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, শরীরের ওজন কমে যায়, রক্তচাপ কমে যায়, ত্বকে কালো অথবা সাদা দাগ বা ছাপ দেখা যায় এবং শরীরের নানাস্থানে ঘন ঘন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হতে পারে। এ রোগের উপসর্গ ততটা সুনির্দিষ্ট নয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগের লক্ষণগুলো অনেকটা ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। এ রোগ সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না। তা ছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ নির্ণয় করতে হলে যে পরীক্ষা করা প্রয়োজন তাও আমাদের দেশের সর্বত্র প্রচলিত নেই। তবে বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এ রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। রোগ নির্ণয় সঠিক হলে এ রোগ পুরোপুরি সরিয়ে তোলা সম্ভব।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে শরীরে অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের হরমোনের আধিক্য দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর ওজন বেড়ে যায়, মুখাবয়ব গোলাকার হয়ে ক্ষেত্রবিশেষে পূর্ণ চন্দ্রাকৃতির মতো হতে পারে, ত্বক ফেটে গিয়ে লালচে দাগ হয়ে যায়, মোটা হওয়া সত্ত্বেও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, মহিলাদের এ রোগ হলে তাদের মুখে গোঁফ-দাড়ি বা অতিরিক্ত চুল গজাতে পারে, মাসিক অনিয়মিত হয় এবং মহিলা ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। একে বলে কুশিং সিনড্রোম।

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ভেতরের যে অংশ থেকে ক্যাটকোলামাইন নামক হরমোন নির্গত হয়, সে অংশে টিউমার হলে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। হাইপারটেনশন যদি এমন হয় যে, সহজে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না, বার বার কমবেশি হচ্ছে, মাঝে মাঝে শরীর বেশি ঘামছে, অতিরিক্ত বুক ধড়ফড় করছে তা হলে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির এ অংশে টিউমার হয়েছে মনে করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। তবে এ রোগের কারণে খুব কম লোকেরই উচ্চ রক্তচাপ হয়।

অনেক সময় অল্প বয়সে অর্থাৎ শিশুকালেই কারো যৌবনপ্রাপ্তির মতো শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়। এটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন ছেলেদের মতো হয়। এমনকি মেয়েশিশু ছেলেশিশুতে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাও কখনও শোনা যায়। এগুলো কিন্তু অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণের জন্যই হয়ে থাকে। অজ্ঞতার কারণে অনেকের মাঝেই এই বিষয়ে বহু রকমের ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার বিরাজমান। স্টেরয়েডগুলো পরীক্ষাগারে তৈরি করা যায়।

এদের সিনথেটিক স্টেরয়েড বলে। হরমোনজনিত রোগ ছাড়াও এদের বহু ব্যবহার আছে। এ ওষুধগুলো অ্যাজমা, বিভিন্ন প্রকারের বাত, নানাবিধ চর্মরোগ ও বিভিন্ন ধরনের জ্বর উপশম করে। প্রকৃত রোগ নির্ণয় না করে রোগের উপসর্গ সাময়িকভাবে কমিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য অনেক হাতুড়ে চিকিৎসক অবিবেচকের মতো এ ওষুধ রোগীদের সেবনের জন্য দেয়। আবার স্থায়ী মোটা করার কথা বলে স্টেরয়েড ওষুধ দিনের পর দিন সেবন করানো হয়। এর ফলে একদিকে যেমন শরীর মোটা হয়ে উপরোল্লিখিত কুশিং সিনড্রোমের মতো মারাত্মক অসুখের সৃষ্টি হতে পারে, তেমনি শরীরের অভ্যন্তরীণ স্টেরয়েড নিঃসরণক্ষমতা কমে গিয়ে রোগী সামান্য অসুখে বা আঘাতেই মৃত্যুবরণ করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সচেতনতা।

 

বিভাগীয় প্রধান, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

আল-রাজী হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড

মোবাইল : ০১৭২৭-১৫১৪৩৪

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads