• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

স্বাস্থ্য

পায়ুপথের ক্যানসার অনেকদিন চিকিৎসাবিহীন থাকলে ফিস্টুলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে

  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৯

ডা. এ কে এম ফজলুল হক

 

পায়ুপথে মানুষের বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে, তার মধ্যে ফিস্টুলা বা ভগন্দর একটি অন্যতম রোগ। পায়ুপথের ভেতরে অনেকগুলো গ্রন্থি বা গ্লান্ড আছে। এই গ্রন্থিতে সংক্রমণের কারণে মলদ্বারের পাশে ফোঁড়া হয়। এই ফোঁড়া একসময় ফেটে গিয়ে ফিস্টুলা হয়। পায়ুপথের ক্যানসার অনেকদিন চিকিৎসাবিহীন থাকলে তা ফিস্টুলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। আবার ফিস্টুলা অনেক দিন চিকিৎসাবিহীন থাকলেও তার মধ্যে ক্যানসার হতে পারে। তবে সম্ভাবনা কম। আবার মলদ্বারে যক্ষ্মা ও পরিপাকতন্ত্রের বিশেষ ধরনের প্রদাহজনিত রোগ, যেমন- ক্রনস ডিজিজের কারণেও ফিস্টুলা হতে পারে।

 

ফিস্টুলা রোগটিকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-

১. সাধারণ ফিস্টুলা

২. মাঝারি জটিল ফিস্টুলা

৩. খুবই জটিল ফিস্টুলা।

জটিল ফিস্টুলার আবার শ্রেণিভেদ রয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন জটিল ফিস্টুলা আবার বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি প্রয়োগে অপারেশন করতে হয়। ফিস্টুলার নালিটা মলদ্বারের কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে, তার ওপর এর জটিলতা নির্ভর করছে। ফিস্টুলা অপারেশনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, সঠিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তিতে অপারেশন করতে না পারা।

 

এ রোগের লক্ষণ মূলত তিনটি-

১. মলদ্বারের পাশে ফুলে যাওয়া

২. ব্যথা হওয়া

৩. মলদ্বারের আশপাশে এমনকি অণ্ডকোষের পেছন থেকে এক বা একাধিক মুখ থেকে পুঁজ ও রক্ত পড়া।

কোনো কোনো সময় এ মুখ থেকে বায়ু নির্গত হয় এবং কৃমিও বের হতে দেখা যায়। এ ব্যথা থেকে জ্বরও হতে পারে। রোগীদের দেখেছি, মলদ্বারের ব্যথা ও ফুলা নিয়ে জ্বরের চিকিৎসা করছেন। কিন্তু এর কারণ, এর কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। রোগী বুঝতে পারছেন না, এ কারণেই জ্বর হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মলদ্বারের বাইরে কোনো মুখ থাকে না। কিন্তু ভেতর থেকে পুঁজ বেরিয়ে আসে। কোনো কোনো রোগীর পুঁজ এত কম যে তিনি বলেন, মলদ্বারে সামান্য ভেজা ভেজা লাগে বা আঠালো লাগে। সাধারণত লোকদের ধারণা, কৃমির বাসা থেকে এ রোগের উৎপত্তি। কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে এ ধারণা একেবারে অমূলক প্রমাণিত হয়েছে।

প্রতিদিনই আমরা রোগীদের পক্ষ থেকে বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হই। রোগীরা জিজ্ঞেস করেন, এ রোগটি অপারেশন করলে আবার হবেই, তাই আর অপারেশন করে লাভ কী? এ প্রশ্ন শুধু রোগীদেরই নয়, এ প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাঝেও আলোড়ন তোলে। অনেকে আবার অপারেশনকে ভয় পান। ভয় পেয়ে কেউ কেউ হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে তথাকথিত বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করে মলদ্বারের অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনেন। কারণ, তারা মলদ্বারে নাইট্রিক অ্যাসিডের মতো বিষাক্ত কেমিক্যাল ইনজেকশন দিয়ে মলদ্বার পচিয়ে ফেলেন। এভাবে মলদ্বার নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক রোগীকে পেটে স্থায়ীভাবে মলত্যাগের ব্যাগ লাগিয়ে দিতে হয়েছে।

যাহোক, অপারেশনের পর এ রোগ আবার হতে পারে কি না, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। শুরুতেই এ বিষয়ের ওপর লেখা আমেরিকান অধ্যাপক ডা. মারভিন এল করম্যানের বই থেকে একটি উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তিনি তার বইয়ে লেখেন, ‘অভিজ্ঞ সার্জনদের মতে, ফিস্টুলা অপারেশনের পর সার্জনদের যত বদনাম হয়েছে, অন্য কোনো অপারেশনে ততটা হয়নি। বিগত দু’হাজার বছর ধরে এ রোগের ওপর লেখা অসংখ্য বই ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধই প্রমাণ করে, ফিস্টুলা একটি জটিল রোগ। তাই অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ রোগ অপারেশন করতে সার্জনের বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ ও ব্যুৎপত্তি থাকা প্রয়োজন।

 

লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান,

(অব.) কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads