মানবদেহের ওজনের ৭ শতাংশ আসে রক্ত থেকে। আর এই রক্ত শিরা-উপশিরাগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেহে চলাচল করে সারাক্ষণই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়ে ৪.৫ থেকে ৫.৫ লিটার রক্ত থাকে। তবে লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা এবং সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিভেদে এতে ভিন্নতাও থাকতে পারে।
মানবদেহের এই লাল তরলটি সত্যিই জাদুকরী নানা উপায়ে এবং আমাদের দেহের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। আমাদের দেহের নানা অংশে অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যাওয়া, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জীবাণুর সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো কাজ করে রক্ত। ফলে যথাযথভাবে রক্ত চলাচলের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষুধামান্দ্য, অনবরত নানা অঙ্গের অসাড়তা, হজম প্রক্রিয়ায় অব্যাখ্যাত সমস্যা, প্রায় প্রায়ই ক্লান্তি ও অবসাদ, ত্বকের বিবর্ণতা, চুল ও নখের ভঙ্গুরতা এবং শুষ্কতা প্রভৃতি রক্ত চলাচল ঠিকভাবে না হওয়ার লক্ষণ। হূৎপিণ্ড রক্তকে পাম্প করে শিরা-উপশিরাগুলোর মাধ্যমে দেহের নানা অঙ্গে ছড়িয়ে দেয়। হূৎপিণ্ড এবং শিরা-উপশিরাগুলোই রক্তকে দেহে চলাচলের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। ধমনি হূৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত নিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। আর শিরা-উপশিরাগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত পুনরায় হূৎপিণ্ড ফিরিয়ে আনে।
চিকিৎসকদের মতে, শরীরে রক্তচাপ বাড়ার মূল কারণ লাইফ স্টাইল। তবে জীবনাচরণে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে ওযুধ ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমোন। যারা রাতে পাঁচ ঘণ্টা কিংবা তার কম সময় ঘুমোন, তাদের রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। কম ঘুমোলে হরমোনের নিয়ন্ত্রণ এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে আরো বাড়ে রক্তচাপ। রাতের ঘুম হতে হবে গাঢ়। বয়স বাড়লে ঘুম কমে।
লবণ কম খান। শরীরে বেশি পানি জমলে রক্তচাপ বাড়ে। লবণে জারানো প্রক্রিয়াকরণ করা মাছ-মাংস খাওয়া কমান। ব্যায়ামই হলো ওষুধ ছাড়া রক্তচাপ কমানোর মূল চিকিৎসা। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার হার্টের জোর বাড়ে। শক্তিশালী হার্ট অনায়াসে বেশি পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে। ব্যায়াম করার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসছে কি না বুঝতে সময় লাগবে অন্তত তিন মাস। সপ্তাহে শরীরচর্চা করুন অন্তত ১৫০ মিনিট পূর্ণবয়স্কদের জন্য সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম কিংবা ৭৫ মিনিটের ভারী ব্যায়াম করা জরুরি। নিয়মিত ধ্যান করুন ১০ মিনিট- শরীরে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বেশি হলে শ্বাস দ্রুততর হয়। হার্টের গতি বাড়ে, বাড়ে রক্তচাপ।
তাজা ফল ও সবজি খান- যেসব ফল ও সবজিতে ফ্যাটের পরিমাণ কম সেগুলি রক্তচাপ কমায়। ফল ও সবজির মধ্যে থাকা ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার শরীরকে সুস্থ রাখে। ওজন কমান- শরীরের টিস্যুতে ফ্যাট জমলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।
রক্ত চলাচল বাড়াতে যা করণীয় —
মদপান ত্যাগ করুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে হূৎপিণ্ডে সমস্যা হয়। সুতরাং আজই মদপান ত্যাগ করুন।
পানি পান করুন
দেহকে সচল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে হবে। পানি আমাদের দেহ থেকে টক্সিন বা বিষ বের করে দিতে সহায়ক। আর দেহকে যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়িয়ে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
বাদাম খান
বাদাম ধমনিতে প্রদাহ এবং পচনজনিত ক্ষয়রোধ করে রক্ত চলাচল বাড়ায়। কাজুবাদাম এবং আখরোট খেলে রক্ত চলাচল বেগবান হয়। ভিটামিন এ, বি, সি ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বাদাম এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ বাদাম খেতে হবে।
গ্রিন টি
গ্রিন টি রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে প্রশস্ত করে যার ফলে রক্ত প্রবাহের গতিও বাড়ে। তাই দুধ চা না খেয়ে বরং গ্রিন টি খান। যা আরো বেশি স্বাস্থ্যকর এবং দেহের কার্যক্রমতে উদ্দীপিত করে।
উত্তেজক উপাদান
ক্যাফেইন শরীরকে শুষ্ক করে তোলে। কিন্তু রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য শরীরকে আর্দ্র রাখা জরুরি। ক্যাফেইনের মতো স্নায়ু উত্তেজক উপাদান এড়িয়ে চলুন। তাহলে কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই আপনার দেহের সব অংশে রক্ত চলাচল করতে পারবে।
লবণ খাওয়া
অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়ে এবং স্ফীতি দেখা দেয়। যার ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।
রসুন, আদা, পেঁয়াজ
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রসুন, আদা এবং পেঁয়াজের পরিমাণ আরেকটু বাড়ান। এসব আপনার রক্ত চলাচল প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য উন্নত করবে।
গোলমরিচ
গোলমরিচ বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে এবং ধমনি ও রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে শক্তিশালী করে।
সূর্যমুখী বীজ
এই বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে, যা রক্তে জমাটবদ্ধতা প্রতিরোধ করে। এছাড়া জলপাই, বাদাম এবং তরমুজ বীজও উপকারী।
সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু এবং জাম্বুরায় আছে ভিটামিন সি এবং সুগার ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে।
তরমুজ
এতে আছে লাইকোপেন নামের একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তচলাল উন্নত করে। টমেটো, অ্যাপ্রিকট এবং গোলাপি মোসাম্বি লেবুও রক্ত চলাচল অবাধ করে।
অ্যাভোকাডো
এতে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হূদযন্ত্রকে সচল রাখে এবং রক্ত প্রবাহের গতি বাড়ায়। এছাড়া কাঁচা চীয়া বীজ এবং শ্বেতবীজেও একই উপকারিতা আছে।
- ফিচার ডেস্ক