• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ভয় নয়, মোকাবেলায় আমরা সবাই সচেতন হই

সংগৃহীত ছবি

স্বাস্থ্য

ভয় নয়, মোকাবেলায় আমরা সবাই সচেতন হই

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ১২ মার্চ ২০২০

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত সারা বিশ্বের মানুষ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে এখনো স্বীকৃত কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় এর প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। আর সে কারণেই ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। আমাদের দেশও ঝুঁকিমুক্ত নয়। এরই মধ্যে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস হাতে তিন ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। আর হাত মুখ কিংবা শরীরের অন্য কোথাও লাগলে জীবাণু দ্রুত শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই বারবার হাত ধুয়ে নিলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। মনে রাখতে হবে যে আমরা একটা  দূষিত বায়ুর দেশে থাকি। এত ধুলা-বালি ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে থাকতে থাকতে আমাদের ইম্যুনিটি এমনিতেই বেশ স্ট্রং। আমাদের বেড়ে ওঠা বর্ষার জমাট পানি, মাঠের কাদা মাটি মেখে। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় ভালো। অপরদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ মানুষই কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বাভাবিক সর্দি-কাশির মতোই প্রথম কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে সেরে ওঠেন। তারপরও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সাধারণ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এসব বিষয় মেনে চললেই আপনি খুব সহজেই ভাইরাসটিকে ঠেকাতে পারবেন। তাই বলছি, সাবধান হোন, তবে আতঙ্ক ছড়াবেন না।

কাদের ঝুঁকি বেশি

করোনা ভাইরাসে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যারা আগে থেকে বিশেষ কিছু অসুখে ভুগছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।  যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন, করোনা ভাইরাসে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যারা অ্যাজমা বা হাঁপানি, ডায়াবেটিস এবং হূদরোগের মতো রোগগুলোতে ইতোমধ্যে আক্রান্ত তাদের সাবধান থাকা জরুরি।

যদি শ্বাসকষ্ট থাকে : অ্যাজমা ইউকে নামের সংস্থা বলছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে প্রতিদিন ইনহেলার (সাধারণত বাদামি) নিন। করোনা ভাইরাসসহ অন্য কোনো ভাইরাসেও যদি আক্রান্ত হন তাহলে ইনহেলার অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। তবে নীল রঙের ইনহেলারটিও সবসময় সাথে রাখুন। যদি দেখেন শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে তখন এটি ব্যবহার করতে পারেন।

ডায়াবেটিস থাকলে : যারা টাইপ ওয়ান বা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের বেলায় করোনা ভাইরাসের উপসর্গ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাদের বেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। ডায়াবেটিস ইউকে নামের একটি সংস্থার কর্মকর্তা ড্যান হাওয়ার্থ বলছেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে করোনাভাইরাস কিংবা কোভিড-১৯ তাদের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে : যারা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, যেমন উচ্চরক্তচাপ, ফুসফুসে সমস্যা এবং দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল হলে তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং এই অসুস্থতা মারাত্মক রূপও নিতে পারে। ব্রিটেনে চিলড্রেন্স ক্যানসার ও লিউকেমিয়া গ্রুপের পরামর্শ হচ্ছে- যেসব শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত তাদের পিতামাতার উচিত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে কী করা উচিত এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া।

গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে : গর্ভবতী নারীদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, এমন কথা বলার পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংক্রমণ এড়াতে অন্যদের মতো তাদেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গাইডলাইন মেনে চলতে হবে।

ধূমপায়ী হলে : যুক্তরাজ্যে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি দাতব্য সংস্থা অ্যাশের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা আর্নট বলছেন, যারা ধূমপান করেন তাদের উচিত করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ধূমপান কমিয়ে ফেলা কিংবা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া। ধূমপায়ীদের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাদের নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা ধূমপান করেন না তাদের দ্বিগুণ।

সতর্ক করুন শিশুদের

শিশুদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন করার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক ডা. পুনম কৃষ্ণা বলেছেন, ‘বিষয়টি হলো উদ্বেগ লাঘব করা। তাকে বুঝিয়ে বলা যে তোমার যখন ঠান্ডা লাগে, পেট খারাপ হয়, বমি হয় এই ভাইরাসটি সেরকম।’ তার মতে, অভিভাবকদের উচিত শিশুদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করা। নতুবা সে স্কুলে বা বন্ধুদের কাছ  থেকে ভুল তথ্য পেয়ে ভুল করে ফেলতে পারে বা ভয় পেয়ে যেতে পারে।  এ বিষয়ে শিশু মনোবিজ্ঞানী ডা. রিচার্ড উলফসন মনে করেন, শিশুদের বয়সের ওপর নির্ভর করবে তার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে। তিনি বলছেন, ছয়, সাত বছর বয়সি বা তাদের নিচে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা হলো তারা যা শুনবে তাতেই বিচলিত হবে। কারণ তাদের বাবা-মায়েরা তাদের আশপাশেই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করছেন। এটা তাদের জন্য ভীতিকর হতে পারে। ডা. উলফসন স্বীকার করছেন, যে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে তার শিশু এতে আক্রান্ত হবে কি না। কিন্তু অকারণে ঝুঁকি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা না করে আশাবাদী থাকাই ভালো।  তবে শুধু আশ্বস্ত করা নয়, রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে তাদের ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। তিনি বলছেন, আমাদের উচিত স্বাস্থ্য ভালো রাখার কিছু উপায় আছে যা তুমি করতে পারো। যেমন নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়টা। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে শুধু এটা বলে বসে না থেকে তারা নিজেরা করতে পারে এমন কিছু তাদের করতে দেয়া ভালো।

হাত ধোয়া ও  স্যানিটাইজার ব্যবহার

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের রোগী চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা যায়, সেটাই ভাবাচ্ছে সবাইকে। করোনা সংক্রমণ দূর করতে মুখোশ পরা, কিংবা কেউ হাঁচলে বা কাশলে সেখান থেকে দূরে থাকার বিষয় তো রয়েছেই, কিন্তু তার সঙ্গেই সমান গুরুত্বপূর্ণ হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। এই করোনা ভাইরাস সাধারণত একজনের শরীর থেকে আর একজনের শরীরে ছড়ায় হাঁচি, কাশি ও স্পর্শের মাধ্যমে। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে সেই ভাইরাস অন্যের শরীরে ঢুকতে পারে। কিংবা তার সঙ্গে স্পর্শের মাধ্যমেও তা অন্যজনের শরীরে ঢুকতে পারে। তাই রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে সবাইকে। তার মধ্যে অন্যতম হলো এই স্যানিটাইজারের ব্যবহার। অনেকেই আছেন যারা ব্যাগে স্যানিটাইজার নিয়ে ঘোরেন। কোথাও খেতে গেলে তার আগে হাতটা ধুয়ে নেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস ঠেকাতে শুধু খাবার সময় নয়, আরো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে হবে এই স্যানিটাইজার। যেমন, কারো সঙ্গে হাত মেলালে তার পরেই স্যানিটাইজারে ধুয়ে ফেলুন হাত। যাতায়াতের সময় বাসের হাতল, সিট কিংবা ট্রেনের হাতলে আমাদের হাত লেগেই থাকে। তাই বাস বা ট্রেন থেকে নামার পরেই চট করে ব্যবহার করুন স্যানিটাইজার। কাজের জায়গায় ফাইলপত্র কিংবা কম্পিউটারের কি-বোর্ড ব্যবহারের পরেও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ এককথায় বাইরের যে কোনো জিনিসের সংস্পর্শে আসার পরেই স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আর খাওয়ার আগে তো ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু যে সে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেই কিন্তু মুক্তি মিলবে না করোনার জীবাণুদের থেকে। সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তরফে জানানো হয়েছে, শুধু যে স্যানিটাইজারগুলোতে অ্যালকোহলের মাত্রা ৬০ শতাংশ বা তার বেশি, সেইসব স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেই হাত জীবাণু মুক্ত হবে। আর যে স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল নেই বা পরিমাণ কম, সেগুলো ব্যবহারে উপকার মিলবে না। আরো জানানো হয়েছে, যখনই স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ঘষুন। তবেই জীবাণু মুক্ত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইরে বেরিয়ে স্যানিটাইজারের ব্যবহার ভালো। কিন্তু যখন কারো সুযোগ রয়েছে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার, তখন সেটাই করুন। আবার এই হাত ধোয়ারও কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, প্রথমে পানি দিয়ে হাতটা ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপরে কনুইয়ের সাহায্যে কল বন্ধ করুন। নইলে কলের হাতল থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ। ভালো করে হাতে সাবান মাখুন। ফেনা তৈরি করুন। হাতের প্রতিটা আঙুলের ফাঁকে, নখের মধ্যে যেন ফেনা পৌঁছায় সেটা খেয়াল রাখবেন। ভালো করে হাত ঘষুন। যাতে সব জায়গা ভালো করে কচলানো হয়। হাত ঘষা হয়ে গেলে এবার ফের জলে ভালো করে হাতটা ধুয়ে নিন। এমনভাবে ধোবেন যাতে সাবান হাতে লেগে না থাকে। পারলে কব্জি পর্যন্ত হাতটা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাতটা মুছে নিন।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে হাত ধোয়ার কৌশল 

- হাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে পর্যাপ্ত সাবান নিন

- ডান হাতটি বাম হাতের ওপরে ঘষুন এবং আপনার আঙুলের মধ্যে পরিষ্কার করুন

- হাতের তালুতে তালু রাখুন। দুই হাতের তালু একসঙ্গে কয়েকবার ঘষুন

- হাতের আঙুল ও নখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন

- এবার আপনার এক হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করুন এবং অপর হাত দিয়ে ঘষুন

- সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাতটা ঘষে ভালো করে ধুয়ে মুছে ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিন

বাইরে থাকলে সব সময় পানি দিয়ে হাত ধোয়া সম্ভব হয় না। এজন্য সঙ্গে একটি ছোট স্যানিটাইজার রাখুন। প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করুন। বাড়ির ছোটদেরও নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নাক, চোখ ও মুখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। রান্নাবান্না করার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন। ঘরে ছোট শিশু থাকলে, তার ডায়পার পরিবর্তনের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। পশুপাখিকে স্পর্শ করার পর হাত ধুয়ে নিন। কারো জ্বর হলে তাকে বা তার ব্যবহূত কিছু ধরার পর হাত ধুতে হবে।

নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাসই আপনাকে রক্ষা করতে পারে করোনা ভাইরাসের জীবাণু থেকে।

ভুল প্রতিষেধক ব্যবহারের সতর্ক হোন

রসুন : ফেসবুকে এমন অসংখ্য পোস্টে দেখা গেছে যদি রসুন খাওয়া যায় তাহলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদিও রসুন একটা স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এটাতে এন্টিমাইক্রোবিয়াল আছে; কিন্তু এমন কোনো তথ্য প্রমাণ নেই যে রসুন নতুন করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রতিকারক ব্যবস্থা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু এর মাধ্যমেও ক্ষতি হতে পারে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে একজন নারী দেড় কেজি কাঁচা রসুন খেয়েছে। এতে করে তার গলায় ভয়াবহ প্রদাহ শুরু হয়। পরে ঐ নারীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।

ঘরে তৈরি জীবাণুনাশক : ইতালি এখন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি। সে দেশে যখন এই জেল ফুরিয়ে যাওয়ার খবর বের হলো তখন এই জেল কীভাবে ঘরে বানানো যায় সেটার রেসিপি দেওয়া শুরু হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু সেসব রেসিপি ছিল মূলত সেই সব জীবাণুনাশকের, যা ঘরের মেঝে বা টেবিলের ওপরিভাগে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এটা ত্বকের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড জেলগুলোতে ৬০%-৭০% অ্যালকোহল থাকে তার সাথে থাকে এমোলিয়েন্ট নামে এক ধরণের পদার্থ যেটা ত্বককে নরম রাখে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি ব্লুুমফিল্ড বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না ঘরে বসে হাতের জন্য উপযুক্ত জীবাণুনাশক তৈরি করা সম্ভব।

রুপার পানি : কলোইডিয়াল সিলভার মূলত এমন জল যেখানে রুপার ক্ষুদ্র কণিকা মেশানো থাকে। মার্কিন টেলি-ইভানজেলিস্ট ধর্মপ্রচারক জিম বেকার এই পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তার অনুষ্ঠানে এক অতিথি দাবি করেন যে এই জল কয়েক ধরনের করোনা ভাইরাস মেরে ফেলতে সক্ষম। অবশ্য তিনি স্বীকার করেন যে কোভিড-১৯-এর ওপর এটা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।  কলোইডিয়াল সিলভারের সমর্থকরা দাবি করেন যে এটা অ্যান্টিসেপটিক এবং নানা ধরনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা চলে। কিন্তু মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার ভাষায় বলেছে, এই ধরনের রুপা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যের কোনো উপকার হয় না। বরং এর ব্যবহারে কিডনির ক্ষতি হতে পারে ও জ্ঞান হারাতে পারে।

মিনিট অন্তর পানি পান :  ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে একজন ‘জাপানি ডাক্তার’কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের জীবাণু মুখের মধ্যে ঢুকে পড়লেও প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পানি খেলে তা দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এই পোস্টের একটি আরবি ভার্সন ২,৫০,০০০ বার শেয়ার হয়েছে। কিন্তু লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি ব্লুুমফিল্ড বলেছেন, এই দাবির পক্ষে সত্যিই কোনো প্রমাণ নেই।

তাপমাত্রা ও আইসক্রিম পরিহার : গরমে এই ভাইরাস মরে যায় বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গরম পানি পান করা, গরম পানিতে গোসল করা, এমনকি হেয়ারড্রায়ার ব্যবহারেরও সুপারিশ করা হচ্ছে। ইউনিসেফের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনি একটি পোস্ট নানা দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু ইউনিসেফ বলছে, এটা স্রেফ ভুয়া খবর। ফ্লু ভাইরাস মানব দেহের বাইরে বেঁচে থাকতে পারে না। আর দেহের বাইরে এই জীবাণুকে মেরে ফেলতে হলে ন্যূনতম ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লাগবে, যেটা গোসলের পানি থেকে অনেক বেশি গরম।

সংক্রমণ স্থল সামুদ্রিক খাবার ও পশুর হাট

চীনের উহান শহরে শনাক্তকৃত বেশিরভাগ রোগী শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুরবাজার থেকে আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি হেলথ অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেছেন, প্রাণীদেহে সংক্রমিত করোনা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করে না। চীনের উহান শহরে শনাক্তকৃত বেশিরভাগ রোগী শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুরবাজার থেকে আক্রান্ত হয়েছে।

বাইরে বের হলেই কি মাস্ক পরতে হবে?

এ বিষয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘মাস্ক ঢালাওভাবে যেটা আমরা রাস্তাঘাটে ব্যবহার করছি এটার কিন্তু দরকার নেই। যিনি আক্রান্ত তিনি ব্যবহার করবেন। তবে একই মাস্ক একবার ব্যবহার করে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ব্যবহারের পর এক জায়গায় রেখে দিয়ে আবার ব্যবহার করবেন এমন যেন না হয়। ‘আমরা যে মাস্ক পরে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াই এর কিন্তু দরকার নেই। এতে খামাখা খালি দাম বেড়ে যাচ্ছে। আর একটা কথা হলো, কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দোকানে-দোকানে ভিড় করে একটার দাম ১০ গুণ বেড়ে যাচ্ছে, এটা কিন্তু পরিহার করাই ভালো।’ ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ আরো বলেন, ‘অনেকের মধ্যে ভয় যে আক্রান্ত হলেই বুঝি মারা যাবে, আসলে কিন্তু তা না। এতে আক্রান্ত হলে মেজরিটি রোগী ভালো হয়ে যাবে। ঘরে বসে থাকলেও ভালো হয়ে যাবে, সাধারণ চিকিৎসায়ও ভালো হয়ে যাবে। ভয়ের কোনো কারণই নেই। সুতরাং আমি আবারো সবাইকে বলছি আপনারা ভীত হবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এটা কিন্তু খুব জরুরি।’

ফোন করুন হটলাইন নম্বরে

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে জানতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) চালু করা হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে- ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads