• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মাটি চায় ভারত

সংগৃহীত ছবি

ভারত

কাশ্মীরের জনগণ নয়

মাটি চায় ভারত

৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পিটিশন

  • প্রকাশিত ০৮ আগস্ট ২০১৯

স্কুল-কলেজ ছুটি। বন্ধ হাট-বাজার, দোকানপাট ও অফিস-আদালত। মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ বেশ কয়েকদিন ধরে। সড়কে ব্যারিকেড ও বন্দুকহাতে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। চলছে না যানবাহন। শুধু হাসপাতালের জরুরি সেবায় নিয়োজিত কিছু যানবাহন মাঝেমধ্যে সড়কে দেখা যাচ্ছে। এই চিত্র কাশ্মীরের। খবর বিবিসি, ডন, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকার কিছু একটা করতে যাচ্ছে কিছুদিন ধরেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু ঠিক কি করতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার তা বোঝা যাচ্ছিল না। তবে ভারত সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে দুই ধরনের মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছিল : ক্ষোভ অথবা আশা। কিন্তু গত সোমবার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল এবং জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ঘোষণা দেওয়ার পর স্তব্ধ হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের জনগণ। কাশ্মীরিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে শুধু পরাজয়ের চিহ্ন। দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তাদের মতে, মোদি সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তারা কাশ্মীরকে চায়, কাশ্মীরের জনগণকে নয়।

৩৫-এ ধারা অনুযায়ী এতদিন কাশ্মীরের বাসিন্দা নন এমন ভারতীয়রা সেখানে সম্পদের মালিক হওয়া ও চাকরি পেত না। কিন্তু এখন মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে সেই বাধা দূর হয়েছে। এখন ইচ্ছে করলেই যে কোনো ভারতীয় নাগরিক সেখান ভূমিসহ অন্যান্য সম্পদ কিনতে পারবে। বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীরিদের বিশেষ সুবিধা বাতিল করার মধ্য দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক চরিত্রে পরিবর্তন আনতে চাইছে বিজেপি। মোদি সরকার আদতে কাশ্মীরে হিন্দু বসতি ও শিল্প গড়ে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়কে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চাইছে। বিজেপি নেতাদের কথায় সেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

৩৭০ ধারা বাতিল করার পর বিজেপি নেতা বিক্রম সাইনি সুন্দরী কাশ্মীরি কন্যাদের বিয়ে ও সেখানে গিয়ে জমি কেনার আহ্বান জানিয়েছেন দলের অবিবাহিত কর্মীদের প্রতি। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের মুজাফফরনগরে এমন মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, বিজেপিতে যত অবিবাহিত কর্মী আছে তাদের এখন কাশ্মীরে গিয়ে সেখানে জমি ক্রয় করাসহ সেখানকার সুন্দরীদের বিবাহ করার জন্য স্বাগতম। আর এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য মোদিকে ধন্যবাদও জানান ওই বিজেপি নেতা।

তার এই ধরনের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নেটিজেনদের অভিযোগ, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই ফেসবুকে কাশ্মীরি মেয়েদের নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করছে বিজেপি সমর্থকরা। সেখানে একজন বিজেপি বিধায়কের এমন মন্তব্যে আরো সরগরম নেটদুনিয়া। সোমবার রাজ্যসভায় বিল পাস হওয়ার পর থেকেই কাশ্মীরে জমি কেনা এবং ওখানকার মেয়েদের বিয়ের বিষয়টি বারবার করে সামনে এসেছে। কিন্তু তা যে কেউ এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেননি। বিজেপি নেতাদের এ ধরনের মন্তব্যে আবারো একটাই প্রশ্ন সামনে চলে আসছে- ভারত কাশ্মীরকে দখল করতে চায়। সেখানকার জনগণকে নয়।  

রোববার থেকে কার্যত অচল শ্রীনগর। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধ, উপত্যকাজুড়ে বিধিনিষেধ এবং অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন দেখে মনে হচ্ছে শ্রীনগর দখল করা কোনো শহর। শ্রীনগরের লাল চকের কাছাকাছি এলাকার ৪৫ বছরের বাসিন্দা সাঈদ খানের কাছে ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বলেন, এখন আর মত জানতে চেয়ে কী লাভ? সবকিছুই তো শেষ। কাশ্মীর যেন এক ভুতুড়ে রাজ্যে পরিণত হয়েছে। শুধু সাঈদ নয়, এখানকার বাসিন্দাদের সবার মধ্যেই একই অনুভূতি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাস্তার পাশে বসা ফল বিক্রেতা থেকে শুরু করে জনমানবহীন ঈদগাহের পাশ দিয়ে ছেলেসহ হেঁটে যাওয়া কোনো এক বাবা কিংবা ব্যারিকেডের পাশে প্রহরায় দাঁড়ানো পুলিশ সদস্য- সবার চেহেরায় একই মনোভাব ফুটে উঠছে।

সাঈদ আরো বলেন, ২০১৬ সালের বিক্ষোভের পর গত বছর পরিস্থিতির বেশ ভালোই উন্নতি হয়েছে। স্বাধীনতাপন্থিরা জেলে, কোনো ধর্মঘট বা হরতাল নেই। ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা খুব কম হয়েছে। স্কুলগুলো চলছিল, দোকানপাট ছিল খোলা এবং পর্যটকদের আগমনও বেড়েছিল। সবাই খুশি ছিল। কিন্তু একটি সিদ্ধান্তে সব কাশ্মীরিকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে সরকার। জানি না, কবে কখন আমরা এ সিদ্ধান্তের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাঈদের এক প্রতিবেশী বলেন, তারা (সরকার) ক্ষমতায় এতই নিমজ্জিত যে আমাদের মানুষ হিসেবেই মনে করছে না। এ সিদ্ধান্তের ফল আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। সারাইবাল এলাকার বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ উনওয়ানিকে দেখে মনে হলো বেশ চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ। দক্ষিণ কাশ্মীরের ল্যাঙ্গেট কলেজের এই শিক্ষার্থী বলেন, কাশ্মীর রাজনীতির বারুদের এক আগ্নেয়গিরি। তারা ওমর ও মেহবুবাকে জেলে পাঠিয়েছে। আমাদের এমএলএ ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে। অথচ এই ব্যক্তিই আমাদের ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে বিরত থাকতে বলতেন। আর তার প্রতি ভারত সরকারের এখন এই সিদ্ধান্ত। মোদি সরকার জ্বলন্ত আগুনে বারুদ ঢেলে দিল।

উদ্বেগের ছায়া দেখা যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশের মধ্যেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কনস্টেবল বলেন, আমি সরকারি কর্মচারী। নির্দেশ পালন করি। কিন্তু আমার সন্তানের কাছে এর কী ব্যাখ্যা দেব? তাকে কীভাবে বুঝাব, ভারত রাষ্ট্র তার সম্পর্কে কী ভাবছে এবং কেন ইট-পাটকেল ছোড়ায় তার যুক্ত হওয়া উচিত না। শিক্ষার্থীরা বলছে, যখন মৃত্যু আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, স্কুলে গিয়ে কী হবে। 

পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত। আমরা আগে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। আমরা টিভি থেকে ঘটনা জেনেছি। আপাতত শুধু নির্দেশ পালন করছি। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যেও। কেউই জানেন না এই অচলাবস্থা কবে কাটবে। কতদিন বন্ধ থাকবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই অবস্থা তুলে নেওয়া হলে কী ঘটবে।

অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আমার বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে, ছোট ছেলে মালয়েশিয়ায় থাকে। দুই মাস ধরে আমি মালয়েশিয়ায় ছিলাম। মঙ্গলবার দিল্লিতে পৌঁছে হতবাক হয়ে যাই। বড় ছেলে বলছিল যুক্তরাষ্ট্র চলে যেতে। কিন্তু আমার মেয়ে থাকে শ্রীনগরে। কয়েকদিন ধরে তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। এ কারণে তাড়াহুড়ো করে রওনা দিই। আমি জানি না কীভাবে বাড়িতে পৌঁছাব। কারণ কাশ্মীরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

এম. টেক ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীর বলেন, আমার বাড়ি পুলওয়ামাতে। জানি না আমার বাবা-মা ৩৭০ ধারা বাতিলের খবর জানেন কি না। স্যাটেলাইটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। শ্রীনগর পৌঁছে যদি কোনো গাড়ি না পাই তাহলে আমাকে হেঁটেই পুলওয়ামা যেতে হবে। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত এই শিক্ষার্থী। বলেন, ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ করে কাশ্মীরের কোনো কলেজে শিক্ষকতা করব। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় এই সুযোগও শেষ। এমনিতেই কাশ্মীরে কর্মসংস্থানের খুবই সংকট। মোদি সরকার মনে করছে এভাবে তারা আমাদের মন জয় করতে পারবে। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড এটা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তারা শুধু কাশ্মীর চায়, কাশ্মীরিদের নয়। তারা কাশ্মীরিদের কখনোই আপন করে নেবে না।

এদিকে দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, ১৯৪৭ সালে জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়েছিল একটি রাজ্য হিসেবে। কোনো সরকারের ক্ষমতা নেই এ অবস্থা পরিবর্তন বা দ্বিখণ্ডিত করা অথবা কোনো অংশকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার। মোদি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে একতরফা, নির্লজ্জ ও সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক বলেও আখ্যায়িত করেছে তারা। এরপরও গত মঙ্গলবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের বিল কংগ্রেসে পাস হয়। এর আগে সোমবার রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়। 

কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি  জানিয়েছেন, আমরা কাশ্মীরিদের পাশে আছি। কাশ্মীরের মানুষ যেন নিজেদের বিচ্ছিন্ন না ভাবে। কাশ্মীরের মানুষ সন্ত্রাসী নয়। মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহসহ কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মমতা বলেন, আমরা এই বিলটিকে সমর্থন করতে পারি না। সরকারের উচিত ছিল সব রাজনৈতিক দল এবং কাশ্মীরিদের সঙ্গে কথা বলা। আলোচনার মধ্য দিয়ে যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। 

৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরের জনগণ যাতে রাস্তায় নামতে না পারে, বিক্ষোভ সমাবেশ করতে না পারে সে জন্য গত রোববার থেকে সেখানে ভারত সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। নতুন করে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। কিন্তু এতকিছু করেও দমাতে পারেনি কাশ্মীরের জনগণকে। সোমবার কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কাশ্মীর কার্যত বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। শ্রীনগরে কারফিউয়ের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৬ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ১০০ বিক্ষোভকারীকে। সোমবার থেকে এ পর্যন্ত রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাসহ চারশরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পুরো কাশ্মীরই যেন এক কারাগারে পরিণত হয়েছে। যেভাবে সর্বত্র অস্ত্র হাতে নিরপাত্তা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে সেখানকার বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি এবং বেসরকারি ভবনগুলো অস্থায়ী কারাগারে পরিণত হয়েছে। 

অন্যদিকে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার এমএল শর্মা নামের এক আইনজীবী ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। তার দাবি, এ ব্যাপারে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা অসাংবিধানিক। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ওই মামলার শুনানির আবেদনও করেছেন। 

শর্মা তার যুক্তিতে বলেন, ৩৭০ ধারা খারিজ করতে গেলে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় তা নিয়ে আলোচনা করতে হতো। কিন্তু তা না করেই একতরফাভাবে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে। যদিও  বিজেপি সরকার জানিয়েছে, ৩৭০ ধারা অস্থায়ী। তা যে কোনো সময় রদ হয়ে যেতে পারে। আর সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকেই। জম্মু-কাশ্মীরে এখন আর বিধানসভা নেই। সেখানে রাষ্ট্রপতির শাসন চলছে। তাই রাষ্ট্রপতি ওই নির্দেশিকা জারি করেছেন।

গত সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয় বিজেপি সরকার। সেইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে রাজ্যসভায় বিল পাস করে বিজেপি সরকার। পরদিন লোকসভায়ও পাস হয় বিলটি। জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল-২০১৯ নামের এ বিলের আওতায় জম্মু-কাশ্মীরকে দুভাগ করা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, কাশ্মীরের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারত। একই সঙ্গে কাশ্মীরে ভারতের জাতিগত নিধনের আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রায় সাত দশক ধরে ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছিল কাশ্মীর। ইমরান খান বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুটি বিশ্বের প্রতিটি ফোরামে তুলবেন। জাতিসংঘসহ প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন।

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে পৃথক করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া তারা স্থানীয় লোকজনকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করবে এবং বাইরে থেকে অন্যদের সেখানে নিয়ে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠ বানাবে। ফলে স্থানীয় লোকজন দাসে পরিণত হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। এর আগে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান বলেছিলেন, এই লড়াইয়ে কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়াবে তার সেনারা। প্রতিবেশী চীনও ভারতের এই পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করেছে।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে একে দ্বিখণ্ডিত করার একদিন পর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, সীমান্ত ইস্যুতে কথা বলা ও কর্মকাণ্ড ঠিক করার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানাই আমরা। দুপক্ষের মধ্যে এ সংক্রান্ত যে সমঝোতা হয়েছিল তা মেনে চলতে এবং সীমান্ত ইস্যুগুলো আরো জটিল করে তুলবে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানাচ্ছি। বিরোধপূর্ণ এলাকা লাদাখের নিয়ন্ত্রণ বেইজিংয়ের হাতে হলেও ভারত বরাবরই একে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে আসছে। তবে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল-২০১৯ এর আওতায় লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্তকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করেছে ভারত। এ ব্যাপারে মন্তব্য না করতে চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বেইজিং সফরকে সামনে রেখে মঙ্গলবার এ সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়। আগামী ১১ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত জয়শঙ্করের চীন সফরে থাকার কথা।

মোমেনা আক্তার পপি

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads