• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মণিপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা, লন্ডনে প্রবাসী সরকার গঠন

ফাইল ছবি

ভারত

মণিপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা, লন্ডনে প্রবাসী সরকার গঠন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৯

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের মণিপুর রাজ্যের ভিন্নমতাবলম্বী রাজনীতিকরা। গত মঙ্গলবার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ব্রিটেনে প্রবাসী সরকার গঠনের কথাও জানান। খবর দ্য হিন্দু, আলজাজিরা। সংবাদ সম্মেলনে মনিপুরের মহারাজার পক্ষ থেকে মনিপুর রাজ্য পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেন বিরেন এবং মণিপুর রাজ্য পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা বিষয়কমন্ত্রী নরেংবাম সমরজিত প্রবাসী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। প্রবাসী সরকারের নাম দেওয়া হয়েছে মণিপুর স্টেট কাউন্সিল। এ বিষয়ে লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি। 

প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নরেংবাম সমরজিত বলেন, আমরা জাতিসংঘের সমর্থন লাভের চেষ্টা করব। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আজ এখান থেকেই প্রবাসী সরকার পরিচালনা করব। জাতিসংঘের সদস্য হতে বিভিন্ন দেশের সমর্থন চাইব। আশা করছি, বহু দেশ আমাদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেবে। আমরা সেখানে স্বাধীন নই। আমাদের ইতিহাস ধ্বংস করা হচ্ছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে আমাদের সংস্কৃতি। সে কারণে জাতিসংঘকে আমাদের বক্তব্য শুনতে হবে। সারা বিশ্বের কাছে জোরালোভাবে বলছি, মনিপুরে বসবাস করা জনগোষ্ঠীও মানুষ।

মনিপুর রাজ্যের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে মহারাজা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার দিয়েছেন বলে একটি নথি তারা দেখান। বলেন, ভারতের দমন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে তারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। চলতি বছরের আগস্ট থেকে তারা ব্রিটেন রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন বলে তারা জানান। ভারতে থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তারা হয়তো গ্রেপ্তার হতো বা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের হত্যা করতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে লন্ডনে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয় বলে তারা দবি করেন।

তারা আরো বলেন, আমরা ভারত সরকারের কাছ থেকে ঘৃণা এবং শত্রুতা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। ভারতে অবস্থানের সময় আমাদের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা মোটেও সহজ ছিল না। কারণ এমন কিছু ঘটলে ভারত সরকার ব্যবস্থা নিত। নরেন্দ্র মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় ছোট জাতি এবং সম্প্রদায়ের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ করছে। তারা এসব সম্প্রদায়ের বিনাশ সাধনে বিশ্বাসী। তাই ভারতে থেকে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করা আমাদের জন্য মোটেও নিরাপদ ছিল না। মনিপুরে গত ১০ বছরে অন্যায়ভাবে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেড় হাজারের বেশি মানুষকে বন্দি করা হয়েছে। গত কয়েক দশকে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

ভারতের অন্যতম ছোট রাজ্য মনিপুর। সেখানকার জনসংখ্যা মাত্র ২৮ লাখ। সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের একটি মনিপুর। এটির অবস্তান মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায়। স্বাধীনতার দাবিতে কয়েক দশক ধরে রাজ্যটিতে লড়াই করছে শতাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারা বিভিন্ন মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে। স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লড়াইজনিত সহিংসতা মনিপুরের বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যটিতে নাগা, কুকি, পাঙ্গালসহ নানা নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বাস। প্রত্যেক গোষ্ঠী নিজেদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চায়।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় মনিপুর ছিল প্রিন্সলি স্টেট বা রাজা শাসিত স্বতন্ত্র অঞ্চল। দুই বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালে অঞ্চলটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও তখন থেকেই স্বাধীনতার দাবিতে সেখানে আন্দোলন চলছে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রবাসী মনিপুর সরকার গঠনের ঘোষণা এলো।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads