• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কারফিউ ভেঙে রাজপথে হাজারো জনতা

সংগৃহীত ছবি

ভারত

উত্তাল আসাম

কারফিউ ভেঙে রাজপথে হাজারো জনতা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

রাজ্যসভায় পাস হওয়া নাগরিকত্ব বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের রাজধানী গৌহাটিতে কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছে হাজারো জনতা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। আসামের ছাত্র সংগঠন এএএসইউ ও কেএমএসএস লোকজনকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানায়। গৌহাটির শহরতলির কোনো কোনো এলাকায় পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। খবর : আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি ও বিবিসির।

বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সিএবি পাস হওয়ার পরপরই আসামের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। জনতার বিক্ষোভের মুখে আসাম ও প্রতিবেশী ত্রিপুরায় সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড়গামী বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়। বুধবার রাতে ডিব্রুগড়ের চাবুয়ায় প্রতিবাদকারীরা একটি রেলস্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনসুকিয়া জেলার পানিতোলা রেলস্টেশনও আগুন দিয়েছে বলে নর্থইস্টান ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের মুখপাত্র জানান। এরপর আসামের চারটি এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

ইন্ডিগো বৃহস্পতিবার তাদের ডিব্রুগড়গামী ও সেখান থেকে ছেড়ে আসার কথা থাকা সব ফ্লাইট বাতিল করে। স্পাইসজেটও গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড়ের সব ফ্লাইট শুক্রবার পর্যন্ত বাতিল করেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য পুরো আসামজুড়ে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী ত্রিপুরায় বন্ধের ডাক দিয়েছে বিরোধীদল কংগ্রেস। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে এ রাজ্যটিতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে আসাম রাইফেলের ২১০ জন আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে রাজ্যটিতে সেনাবাহিনীর ১৪০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয় বলে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। প্রতিবেশী আসামের ছাত্র সংগঠন এএএসইউ ও কেএমএসএস লোকজনকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানালে কারফিউ অমান্য করে হাজারো জনতা রাস্তায় নামে।

নাগরিকত্ব বিল নিয়ে গত কদিন ধরেই রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বুধবারও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সেখানকার পরিস্থিতি। বিলের প্রতিবাদে করা আন্দোলন যেন মুহূর্তে সহিংস রূপ পায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষোভের মধ্যেই লোকসভার পর বুধবার রাজ্যসভাতেও পাস হয় বিতর্কিত এ নাগরিকত্ব বিল। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯৯টি।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ধারাবাহিকভাবে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিলটি পাস হলে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন দমনে সেনা মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ১৫-১৬ ডিসেম্বর গৌহাটিতে ভারত ও জাপানের দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বৈঠক।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাসভবন লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করায় জোরদার করা হয় ডিব্রুগড়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। লক্ষ্মীনগর এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা দুলিয়াজনে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় টায়ার আর গাছপালা ফেলে তাতে আগুন দিচ্ছে।

ভারতের বিজেপি সরকার বলছে, এ বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত অমুসলিমদের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, দেশটির মুসলমানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতেই এ বিল আনা হয়েছে। বিলটিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

ওই বিলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে বসবাসরত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটিকে মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, বিলে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হলেও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে। ভারত সরকার মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী আর বাকিদের শরণার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। বিল উত্থাপনের পর বিজেপি প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, শরণার্থী ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এ বিল শরণার্থীদের জন্য। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দিল্লির অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে।

এদিকে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আসামে উত্তাল-বিক্ষোভের মুখে রাজ্যটির বাসিন্দাদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল বৃহস্পতিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, আসামের ভাই-বোনদের আশ্বস্ত করতে চাই- পাস হওয়া সিএবি বিল নিয়ে তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। আপনাদের অধিকার, অন্যান্য পরিচয় ও সুন্দর সংস্কৃতি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এটি ক্রমবর্ধমান এবং আরো বাড়তে থাকবে। অসমিয়া ভাষায় দেওয়া আরেক টুইটে মোদি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ও আমি সংবিধান অনুযায়ী আসামের মানুষের রাজনৈতিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও ভূমি সংক্রান্ত অধিকারগুলোর সুরক্ষা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads