• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন

মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২০ নভেম্বর ২০২০

গত দশ বছরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট কোন দিকে গেছে, তা জানার জন্য সবজান্তা গুগল বা কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। রাজ্যের যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেই তিনি নির্দ্বিধায় উত্তর দেবেন, তৃণমূলের কাছে। কিন্তু এবার কঠিন প্রশ্ন হলো, আর মাস পাঁচেক পরে যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে, সেখানে মুসলিম ভোট কোন দিকে যাবে?

প্রশ্ন উঠছে কারণ, বিজেপি যেমন মুসলিম ভোটে তৃণমূলের আধিপত্য ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে, তেমনি বাম-কংগ্রেস জোটও মুসলিমদের মন পেতে তৎপর হয়েছে। সেই সঙ্গে এবারের ভোটে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম প্রধান সব আসনে প্রার্থী দেবে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম। ওয়াইসি বিহারে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি মুসলিম ভোট কাটতে পারেন, কিছু আসনে জিততে পারেন এবং তা করে তিনি বিজেপির জয়ের পথ মসৃণ করতে পারেন।

এছাড়াও ফুরফুরা শরিফের এক পিরজাদা আব্বাস চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি আগামী মাসেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। অন্তত ৪৫টি আসনে প্রার্থী দেবেন। এই দলগুলো তৃণমূলের মুসলিম ভোট কাটতে পারলে বিপাকে পড়বেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিরোধীদের অভিযোগ, আসাদুদ্দিন ওয়াইসির পেছনে আছে বিজেপি। তাকে বিজেপিই বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে লড়াইতে সাহায্য করে। উদ্দেশ্য, কংগ্রেস, আরজেডি বা যে দলগুলো মুসলিমদের সমর্থন পায়, তাদের সেই ভোট যতটা সম্ভব কম করা। ওয়াইসি অবশ্য এই অভিযোগ অতীতে বহুবার উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তিনি দলের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছেন। সব রাজ্যে তিনি ভোটে লড়বেন। বিজেপি তার আদর্শগত শত্রু। কিন্তু তাকে নিয়ে অভিযোগ থামছে না। অবশ্য বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন কলেজের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার শামিম আহমেদ বলেছেন, এমআইএম নামে হায়দরাবাদকেন্দ্রিক দল বিহারে সফল হয়েছে, তারা উগ্র মুসলিমদের ভোট পায়। যেমন বিজেপি পায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ভোট। মাঝখানে আমরা যারা উদার গণতান্ত্রিক দলকে জেতাবার জন্য পড়ে আছি, তারা শুধু এমআইএমকে গালি দিচ্ছি, কিন্তু আরএসএস-বিজেপির কথা ভুলে যাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গে এমআইএম বা ফুরফুরাকেন্দ্রিক দল আদতে বিজেপির সুবিধা করে দেবে।

তার মত হলো, বিজেপিকে জেতানোর জন্য মুসলিমদের গালি দিলে চলবে না। বাম ও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে পথে নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। বিজেপিকে জেতানোর জন্য দায়ী অ-বিজেপি দলগুলোই।

পশ্চিমবঙ্গে এবার বাম-কংগ্রেস জোট করে লড়ছে। তারা যৌথ কর্মসূচিও করবে। একসময় মুসলিম ভোটের অনেকটাই বামেদের কাছে যেত। বাকিটা পেত কংগ্রেস। বামেরা আবার হারানো ভোট ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা আগামী ১৮ ডিসেম্বর সংখ্যালঘু দিবস পালন করবে। কংগ্রেসকে তাতে শামিল হতে বলেছে বামরা।

কংগ্রেসের দুই নেতা অধীর চৌধুরী এবং আব্দুল মান্নান মঙ্গলবার ফুরফুরা শরিফে গিয়েছিলেন। পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়নি। কিন্তু পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে তারা কথা বলেন। আব্বাস জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে তিনি দল গড়ছেন। তিনি চান বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল সকলে তাকে সমর্থন করুক। আব্বাসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তার পেছনে আছে বিজেপি। আব্বাস অবশ্য এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান আলি হোসেন জানিয়েছেন, বিজেপির জুজু দেখিয়ে তৃণমূল, কংগ্রেস, বামরা মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছে। বিজেপির উন্নয়নের শরিক মুসলিমরাও। তাই সংখ্যালঘু ভোট ভেঙে গেছে। ওয়েইসি, আব্বাসরা যে লড়বেন বলছেন, তাতে তৃণমূলের ভোট আরো ভাঙবে।’ তবে ত্বহা সিদ্দিকী, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীরা এখনো তৃণমূলের সঙ্গে আছেন। ছোট-বড় আরো মুসলিম নেতাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে যাননি। ফলে মমতা বনাম ওয়াইসি, আব্বাস, বাম-কংগ্রেসের মুসলিম ভোট পাওয়ার লড়াই জমজমাট হতে বাধ্য।

ঘটনা হলো, বিজেপি নানাভাবে তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেসের কাছ থেকে মুসলিম ভোট বাগানোর চেষ্টা করবে। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, তৃণমূল যদি ৮০ শতাংশ মুসলিম ভোট পায়, তা হলে তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে থাকবে। বিজেপি তাই বিভিন্ন কৌশলে এই ভোট তৃণমূলের কাছ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করবে। সেই কাজটা অন্য রাজ্যে ওয়াইসিরা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে করতে পারলে বিজেপির লাভ হবেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মুসলিমরা যদি তৃণমূল, কংগ্রেস, বামেদের ভোট না দিয়ে অন্যদের দেয়, তা হলে বিজেপির কী করার আছে?

আবার বিজেপির কাছে যাতে হিন্দু ভোটের সিংহভাগ চলে না যায়, তৃণমূল ও অন্যরা তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ভোটে লড়ার কৌশল তো এইভাবেই ঠিক হয়। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট ভাঙাতে যারা বেশি সফল হবেন, তারাই নবান্নতে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে পারবেন।

অন্যবারের তুলনায় এবার মুসলিমদের সামনে দল প্রচুর। তার মানে বিকল্পও অনেক। এর মধ্যে থেকে মুসলিমরা কাকে বেছে নেবেন, বিহারের মতো ওয়াইসিকে ভোট দেবেন নাকি আব্বাস সিদ্দিকীর দিকে যাবেন, নাকি বাম-কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকবেন অথবা তৃণমূলকে বিজেপিবিরোধী মূল শক্তি হিসেবে দেখবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র : ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads