• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

শিল্প

সাবাহ বাংলাদেশ

নারীরা আজ প্রশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এক হাজারের বেশি নারীকে সেলাই, ব্লক, বাটিক, টেক্সটাইল পণ্য, পাট পণ্য, বাঁশ-বেতের পণ্য উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছে সার্ক ফান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত অলাভজনক সংস্থা ‘সার্ক বিজনেস অ্যাসোসিয়েট অব হোম বেজড ওয়ার্কার্স বাংলাদেশ’। সংগঠনটি ‘সাবাহ বাংলাদেশ’ নামেই বেশি পরিচিত। এর সদস্যদের উৎপাদিত পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে। অল্প দামে পছন্দের পণ্য পেয়ে খুশি ক্রেতারাও।

 

দেশের ১৫ জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে সাবাহ বাংলাদেশ। সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৫৮১। বেশির ভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত, দুস্থ নারী। সাবাহ বাংলাদেশের বিভিন্ন কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারে (সিএফসি) এসে কাজ করেন তারা। সারা দেশে এমন ১৮টি সিএফসি রয়েছে। অনেকে আবার ঘরে বসেই কাজ করেন। সাবাহ বাংলাদেশের সদস্যদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি স্টল দিয়েছে সংগঠনটি। এতে বিছানার চাদর, নকশিকাঁথা, হ্যান্ডিক্র্যাফট, ফতুয়া, শার্ট, ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ, শাড়িসহ স্থান পেয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্য, বিভিন্ন ধরনের পাটজাত পণ্য, শোপিস ও ব্যাগ। তাদের হস্তশিল্পের কারুকাজ নজর কাড়বে যে কারো।

 

সাবাহ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা অনেক প্রতিভাবান। একটু প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনায় তারা ভালো কাজ করতে পারেন। অনেকে আবার কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নানা ধরনের কাজ করেন। কিন্তু সমস্যা হয় বাজার ধরতে গিয়ে। তারা নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন করছেন ঠিকই, কিন্তু জানেন না কোথায় গেলে সেসব পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিক্রি করতে পারবেন ও সঠিক দাম পাবেন। সাবাহ বাংলাদেশ দেশ-বিদেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের সংযোগ ঘটিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

 

বরিশালের বিথী আক্তার (২০) সাবাহ বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর সেখানেই চাকরি নিয়েছেন। থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির পাশাপাশি সেগুলো বিপণনের কাজও করছেন নিজেই। গতকাল বাণিজ্য মেলার স্টলে নিজের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করছিলেন তিনি। বিথী বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিয়ে দেড় বছর ধরে আমি সাবাহ বাংলাদেশে চাকরি করছি। এখানে আমি বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও বিক্রি করি। পাশাপাশি সাবাহ বাংলাদেশের বিভিন্ন কাজও করি। সংস্থাটি আমার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করছে।’

 

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ছাড়াও সার্কভুক্ত দেশগুলোয় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নেয় সাবাহ বাংলাদেশ। এসব প্রদর্শনীতে থাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদিত নানা পণ্যের সমাহার। পাশাপাশি রাজধানীর পল্লবীতে সংস্থাটির একটি স্থায়ী বিপণন কেন্দ্র রয়েছে।

 

সাবাহ বাংলাদেশের অফিশিয়াল ডিসপ্লে ইউনিটের ইনচার্জ হিসেবে কাজ করছেন আফসানা হক। এ সংগঠন থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। নানা ধাপ পেরিয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা সাগরিকা ইন্দু জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ নারীদের নিয়েই কাজ করছেন তারা। তাদের মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা।

 

তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত নারী স্বাধীনতার প্রকৃত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য আমরা বেছে নিয়েছি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের। তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানীয় এনজিওর সহযোগিতাও নেয়া হয়।’

 

ভবিষ্যতে সারা দেশে সাবাহ বাংলাদেশের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার কথা জানিয়ে সাগরিকা ইন্দু বলেন, ভালো মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। এর পরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সারা দেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার। আমি চাই দেশের মানুষের কাছে সাবাহ বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠুক। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামীণ নারীদের পণ্য ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads