• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সিইটিপির অর্থ পরিশোধ নিয়ে টানাপড়েন

ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার কারণে আর্থিক ক্ষতির মুুখে পড়েছেন ট্যানারি মালিকরা

সংরক্ষিত ছবি

শিল্প

সাভার চামড়া শিল্পনগরী

সিইটিপির অর্থ পরিশোধ নিয়ে টানাপড়েন

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ২২ জুলাই ২০১৮

সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপনের অর্থ পরিশোধ নিয়ে সরকার ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। সিইটিপি স্থাপনে সরকারের কোষাগার থেকে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা পরিশোধে নারাজ ট্যানারি মালিকরা। অপরদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মালিকরা ওই অর্থ পরিশোধে বাধ্য। তাদের বার বার তাগিদও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে সাড়া দিচ্ছেন না মালিকরা।

ট্যানারি মালিকরা জানান, হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুুখে পড়েছেন তারা। সব ধরনের যন্ত্রপাতি প্রায় নতুন করেই স্থাপন করতে হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ করে সাভারে কারখানা চালু করতে পুঁজির সঙ্কটে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সিইটিপি স্থাপনে অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তারা আরো জানান, সরকারের অর্থায়নে সিইটিপি নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন মালিকদের ওপর জোর করে তা চাপানোর চেষ্টা চলছে। সাভারে শিল্পপ্লট বরাদ্দ পাওয়া গেলেও নিবন্ধন না হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছেন না তারা। ফলে কারখানা চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান মালিকরা।

ট্যানারি বর্জ্য থেকে বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষা এবং আধুনিক ও পরিবেশসম্মত উপায়ে উৎপাদনে সহায়তা করার লক্ষ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রকল্প গ্রহণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বিসিক। ২০০৩ সালে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায়। শিল্পনগরীর ২০৫টি প্লট ১৫৫টি চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্লটের প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয় ১৯৭ টাকা। কিন্তু তখন সিইটিপি নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে সংশোধনী এনে ৬০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সিইটিপি নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে যোগ করা হয়। সিইটিপি নির্মাণব্যয় উদ্যোক্তারা পরিশোধ করবেন, এটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বর্গফুটের দাম ১ হাজার ৭৬৮ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়। ১৫ বছরে এ অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয় তাদের। অর্থ পরিশোধের জন্য পরে মালিকদের বাড়তি আরো দুই বছর সময় দেয় সরকার। ৮০ শতাংশ ইক্যুইটি হিসাবে এবং বাকি ২০ শতাংশ অর্থ ৫ শতাংশ সুদে পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ মোট ১০০ টাকা ব্যয় হলে ৮০ টাকার জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। বাকি ২০ টাকা ৫ শতাংশ হারে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

কিন্তু সিইটিপি নির্মাণব্যয় পরিশোধ উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে আমরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও সেটা খুবই সামান্য। সাভারে কারখানা চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে সিইটিপি নির্মাণব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। দীর্ঘ মেয়াদে এবং প্রায় সুদ ছাড়াই ব্যয় পরিশোধের সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে তো আমাদেরই পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। সিইটিপি নির্মাণব্যয় যাতে শিল্পমালিকদের পরিশোধ করতে না হয় সেজন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সিইটিপি নির্মাণের ব্যয় সরকার বহন করবে— অর্থমন্ত্রী ট্যানারি মালিকদের এ আশ্বাস দিয়েছেন বলে দাবি করেন বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অর্থমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন সিইটিপি সরকারই করে দেবে। কিন্তু এখন আমাদের ওপর জোরপূর্বক তা চাপিয়ে দিতে চাইছে।

তবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকারের অনুদানেই যাতে সিইটিপি নির্মাণ করা হয়, এ ধরনের অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল বিটিএ। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ অনুদান দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী হয়তো ট্যানারি মালিকদের মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠিতে সরকারের অনুদানে সিইটিপি নির্মাণ বিষয়ে কোনো কথা উল্লেখ ছিল না বলেও দাবি করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তাই আমরা ট্যানারি মালিকদের অর্থ পরিশোধে তাগিদ দিচ্ছি।

এদিকে, কেউ কেউ প্লটের মূল্য পরিশোধ করছেন। ফাইন্যাক্স লেদারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিএস আইয়ুব বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে এক বছরের কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছেন বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া সাভার চামড়া শিল্পনগরীর সার্বিক পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে টিএস আইয়ুব বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে বাধ্য হয়েই আমরা হাজারীবাগ থেকে সাভারে যাই। হাইকোর্ট আমাদের বার বার সময় দিয়েছে; কিন্তু আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিইনি। বিদ্যুৎ, সিইটিপি চালু না করেই সাভারে চামড়া কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাই গড়ে তোলা হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে। রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক। গ্যাসলাইনও পর্যাপ্ত নয়। ফলে সবগুলো কারখানা এখনো পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার কারণে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে ছাড়া ১৫৫টি কারখানার অনুকূলে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে শিল্পপ্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ১১১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ না পাওয়ায় অন্যরা উৎপাদনে যেতে পারেনি। এ ছাড়া এখনো সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। চামড়া কারখানার কঠিন (সলিড) বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও ঝুলে আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads