• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
‘পাটের সঙ্গে প্লাস্টিকের কোনো প্রতিযোগিতা নেই’

প্লাস্টিক গুডস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন

শিল্প

সাক্ষাৎকার

‘পাটের সঙ্গে প্লাস্টিকের কোনো প্রতিযোগিতা নেই’

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৮

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের প্লাস্টিক শিল্পে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মো. জসিম উদ্দিন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি। এই নিয়ে ১০ বার তিনি বাণিজ্যিক সংগঠনটির সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ২০১০-১২ সেশনে তিনি দেশের বণিক ও উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৮-১০ ও ২০১৫-১৭ সেশনে তিনি এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ছিলেন। দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। দেশের প্লাস্টিক শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশের খবরের সিনিয়র রিপোর্টার কাওসার আলম

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্লাস্টিক রফতানি আয় প্রায় ১৬ শতাংশ কম হয়েছে। এর কারণ কী?

বাংলাদেশ থেকে প্রচুর প্লাস্টিক স্ক্র্যাপ আমদানি করত চীন। বিশেষ করে পিইটি বোতল। কিন্তু চীন আর এখন আগের মতো স্ক্র্যাপ আমদানি করছে না। স্ক্র্যাপের যে গুণগতমান সে মানের চেয়ে আরো উন্নতমানের পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী চীন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা বন্ধ থাকার কারণেও প্লাস্টিক রফতানিতে আয় কমছে।

প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে সরকারের নগদ প্রণোদনার প্রভাব কেমন?

প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ নগদ প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, যাদের বন্ড লাইসেন্স সুবিধা রয়েছে, ইপিজেডে যাদের কারখানা রয়েছে এবং ডিউটি ড্র ব্যাক সুবিধা পায়, তারা নগদ প্রণোদনা পাবে না। এসব শর্তের কারণে প্লাস্টিক শিল্প উদ্যোক্তারা এ সুবিধা নিতে পারছেন না। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বন্ড সুবিধা পেলেও তারা নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পণ্য বহুমুখীকরণের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের পণ্য রফতানিতে তৈরি পোশাক খাতের নির্ভরতাই বাড়ছে। এতে এক ধরনের ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিক শিল্প কারখানাগুলোকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হচ্ছে, কিন্তু তৈরি পোশাক খাতে এ হার ১৫ শতাংশ।

প্লাস্টিক পণ্যকে পরিবেশ দূষণের বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা আপনারা কীভাবে দেখছেন?

প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণের যে কথা বলা হয়, তার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। প্লাস্টিকের কারণে পানি দূষিত হয় না। এমনকি প্লাস্টিক শিল্প থেকে যেসব বর্জ্য তৈরি হয় সেগুলোও পরিবেশের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে না। প্লাস্টিক নিয়ে যেসব সমালোচনা তার বড় অংশই হচ্ছে ব্যবহার পরবর্তী ব্যবস্থাপনা সমস্যা। সিঙ্গাপুরে জনপ্রতি বছরে ১৩০ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে, যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ কেজির মতো। কিন্তু সেসব দেশে প্লাস্টিকের কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ব্যবহারের পর প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থসহ যেসব বর্জ্য তৈরি হয় সেগুলোকে যদি আলাদা করা হয়, তাহলে সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। এতে পরিবেশও সুন্দর থাকবে। জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।

প্লাস্টিককে অনেকে পাটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে আনতে চান। কিন্তু পাটের সঙ্গে প্লাস্টিকের কোনো প্রতিযোগিতা নেই। পাট একটি সেক্টর, প্লাস্টিক আরেকটি সেক্টর। দুই সেক্টর থেকেই সরকার রাজস্ব পাচ্ছে, জনগণ উপকৃত হচ্ছে। ২০০২ সালে সরকার প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ না থাকলেও নানাভাবে পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। এটা থামানো যাচ্ছে না। শুধু নিষিদ্ধ করেই কোনো কিছু থামানো যায় না, এর জন্য বিকল্প থাকতে হয়। কিন্তু ১৬ বছর পার হয়ে গেছে এখনো আমরা বিকল্প তৈরি করতে পারিনি।

প্লাস্টিকের জন্য আলাদা শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে বিশেষ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে প্লাস্টিকের কারখানা গড়ে ওঠে। বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি আলোর মুখ দেখেনি। জমি অধিগ্রহণ কাজও শেষ হয়নি। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০৫ একর জায়গা চেয়ে আমরা বেজার (বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি) কাছে আবেদন করেছিলাম। বেজার পক্ষ থেকে এজন্য ১৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। আমরা রাজিও হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেজার পক্ষ থেকে জানানো হয়, জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। আইটির জন্য ওই জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আইটির জন্য বিভিন্ন স্থানে আলাদা শিল্পপার্ক গড়ে উঠেছে। প্লাস্টিক শিল্পের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বরাদ্দ দেওয়া যেত বলেই আমরা মনে করি।

বড় বড় করপোরেট হাউজগুলো প্লাস্টিক খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। এটি কীভাবে দেখছেন?

এটি এ খাতের জন্য একটি ইতিবাচক ঘটনা। বড় বড় করপোরেট গ্রুপগুলো এগিয়ে আসার ফলে এ খাতে রফতানি বাড়বে। এ খাতে রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। রফতানিতে নগদ প্রণোদনার যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলো শিথিল করলে ও সরকারের নীতিগত সহায়তা পাওয়া গেলে এ খাত আরো এগিয়ে যাবে।

রফতানিতে প্লাস্টিক পণ্যের কী ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে?

রফতানিতে এখন আর যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের বাজার বলে বিবেচনা করছি না। এশিয়ার দেশগুলোই প্লাস্টিক রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনাময় বাজার। আমাদের নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে, কিন্তু নতুন বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে বা রফতানির ক্ষেত্রে যদি সুবিধা পাওয়া না যায়, তাহলে উদ্যোক্তারা তাতে কেন আগ্রহী হবেন? নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে, ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নত হওয়ায় বিভিন্ন পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। এতে আমাদের বাণিজ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে। এ জন্য আমাদের রফতানি বাড়াতে হবে। রফতানির যেসব সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে সেদিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য সরকারকে এসব খাতে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুধু রাজস্ব আয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া দরকার সেটি নির্ধারণে স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি থাকা দরকার বলে আমি মনে করছি।

আগামীতে প্লাস্টিক শিল্প খাতের জন্য কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এসডিজির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্লাস্টিক খাতের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। কর্মপরিকল্পনায় প্লাস্টিক খাতের সম্ভাবনা, সঙ্কট  এবং  সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া দরকার, তার সব কিছুই উল্লেখ থাকবে এতে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রতি বছরে ৬ থেকে ৭ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে থাকে। আমাদের জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি, ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি, উন্নয়নের যে গতিধারা তাতে আগামী ২০৩০ সালে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩০ থেকে ৩৫ কেজিতে উন্নীত হবে। এতে এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ হবে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads