• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য ফেরানোর উদ্যোগ

উপযুক্ত বাজার থাকলে তাঁতিরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন

সংরক্ষিত ছবি

শিল্প

তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য ফেরানোর উদ্যোগ

আজ একনেকে উঠছে প্রকল্পের প্রস্তাব

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০১৮

বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে তাঁত শিল্পের নাম। বিলুপ্ত মসলিন, ঢাকাই জামদানিসহ উন্নতমানের বিভিন্ন কাপড় তৈরি হয়েছে তাঁত শিল্পের হাত ধরে। সময়ের ব্যবধানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কমে আসছে হস্তচালিত তাঁতের আবেদন। বসেছে বিদ্যুৎচালিত পাওয়ার লুম। স্থাপন করা হয়েছে বস্ত্র খাতের অত্যাধুনিক কারখানা। এত কিছুর পরও অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার ৪০ ভাগ জোগান দিয়ে আসছে তাঁত শিল্প। ২০০৩ সালের শুমারি অনুযায়ী ৫ লাখ ৫ হাজার ৫৬৫ তাঁতে প্রায় ৯ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন। এ অবস্থায় খাতটির আধুনিকায়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ প্রকল্পের প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টারে ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবটি পাঠিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় তাঁত অধ্যুষিত এলাকায় পাঁচটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হবে। ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে জামালপুরের মেলান্দহে। এছাড়া ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। একনেকে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পদ্ধতির কারণে প্রান্তিক তাঁতিরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মহাজনদের কাছ থেকে তারা উচ্চমূল্যে সুতা ক্রয় করেন। এ সুতা থেকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয় কম দামে। উপযুক্ত বাজার থাকলে তারা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন। এটি করা হলে দেশে-বিদেশে তাঁত শিল্পীদের আত্মকর্মসংস্থান এবং তাঁত বস্ত্রের ব্যবহার বাড়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় হবে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অধিক অবদান রাখতে পারবে এটি।

এতে আরো বলা হয়, সর্বশেষ তাঁত শুমারি অনুযায়ী দেশে ৫ লাখ ৫ হাজার ৫৬৫ তাঁত কলে ৮ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। তাদের অর্ধেক আবার নারী শ্রমিক। জাতীয় অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ১ হাজার ২২৭ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হচ্ছে তাঁত শিল্পের হাত ধরে। খাতটিকে আরো এগিয়ে নিতে মধ্যম পর্যায়ে দক্ষ বস্ত্র প্রযুক্তিবিদ তৈরি এবং তাঁতিদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। ভোক্তার রুচি ও পছন্দ এবং চাহিদা অনুসারে নতুন নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন, প্রান্তিক তাঁতিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাঁতিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করাও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে এ বিষয়ে কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিপুলসংখ্যক গ্রামীণ নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রান্তিক তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত তাঁত বস্ত্র ন্যায্য মূল্যে বিপণনের সুযোগ পাবেন। সর্বোপরি দেশের গরিব তাঁতিদের জীবন-মান উন্নত হওয়ার মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। এসব বিষয় বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রস্তাব পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হবে তাঁত অধ্যুষিতসংশ্লিষ্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, টাঙ্গাইল সদর, সিরাজগঞ্জ সদর, বগুড়ার কাহালু এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। জামালপুরের মেলান্দহে প্রস্তাবিত ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রতিবছর ৫০ জনকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হবে। ২৪০ জনকে সার্টিফিকেট কোর্স প্রশিক্ষণ, ১৫০ জনকে শর্ট কোর্স প্রশিক্ষণ এবং ১৫০০ তাঁতিকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সব মিলে বছরে এ খাতে প্রায় ২ হাজার দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্র জানায়, হস্তচালিত তাঁত ও পাওয়ার লুম মিলে এ খাতে প্রায় ১৫ লাখ লোক নিয়োজিত আছেন। কর্মসংস্থানের দিক থেকে কৃষি ও গার্মেন্ট শিল্পের পরই তৃতীয় অবস্থানে আছে এ খাত। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহৎ খাত তাঁত শিল্প। এ খাতে প্রতিবছর ৬৮ কোটি ৭৯ লাখ মিটার কাপড় উৎপাদন হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads