• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ঝুলে রয়েছে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ প্রকল্প

২০১০ সালের জুনে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে

শিল্প

ঝুলে রয়েছে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ প্রকল্প

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০১৮

# ৭ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি ডিপিপি

# মেলেনি জমি প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা

 

কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণে গত ৭ বছরেও ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) চূড়ান্ত করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এরই মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক কোড ও পরিবর্তিত রেট শিডিউল অনুযায়ী হালনাগাদসহ বেশ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গত জুলাইয়ে ডিপিপি সংশোধনে বিসিককে নির্দেশনা দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এখনো নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেনি বিসিক।

অপরদিকে কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ ব্রাহ্মণকৃর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর এলাকায় কেমিক্যাল পল্লী গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও জমির প্রাপ্যতার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এখনো প্রত্যয়নপত্র পাওয়া যায়নি। ফলে নানা জটিলতায় ঝুলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষিত কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণ প্রকল্প। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে চলতি অর্থবছরেই প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা’ নামে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপি সম্প্রতি বিসিকের পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ডিপিপির বেশ কিছু বিষয়ে অসম্পূর্ণতা ধরা পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- জমির প্রাপ্যতার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র না পাওয়া, প্রাক্কলিত বরাদ্দের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কাজের সংখ্যা ও পরিমাণের উল্লেখ না থাকা, পরিকল্পনা পরিপত্র-২০১৬ অনুযায়ী পিএসসি ও পিআইসি কমিটির গঠন এবং কার্যপরিধি পুনর্গঠন না করা। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নতুন অর্থনৈতিক কোড চালু হওয়ায় এবং পূর্ত কাজের দর পরিবর্তন হওয়ায় উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের ডিপিপি জরুরি ভিত্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফররুখ আহম্মদের সই করা চিঠিটি গত ৪ জুলাই পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফররুখ আহম্মদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ডিপিপির বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সেগুলোর ব্যাপারে বিসিককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি, বেতন-মজুরি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পূর্ত কাজের জন্য ২০১৮ সালে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেট বরাদ্দে চলতি অর্থবছরে নতুন কোড চালু করা হয়েছে। এ কারণে বিসিককে ডিপিপি হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। নতুন শিডিউলের কারণে পূর্ত কাজের দর ২২ শতাংশ বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। তবে ডিপিপি চূড়ান্ত করে চলতি অর্থবছরেই প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

২০১০ সালের জুনে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনার পর ২০১১ সালে নিমতলী থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো সরিয়ে ঢাকার বাইরে একটি আলাদা কেমিক্যাল পল্লী গঠনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

প্রথম দফায় কেরানীগঞ্জের সোনাকান্দা মৌজায় ২০ একর জমিতে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণে ২০১৫ সালে ডিপিপি চূড়ান্ত করে বিসিক। প্রকল্প এলাকায় সাত তলাবিশিষ্ট ১৭টি সুপার স্ট্রাকচার ভবন তৈরি করে কেমিক্যাল গুদাম ও দোকান সরানোর পরিকল্পনা ছিল ওই ডিপিপিতে। এজন্য ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের ব্যয় ব্যবসায়ীদের বহন করার কথা ছিল। কিন্তু বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। এ ছাড়া বহুতলবিশিষ্ট ভবনে কেমিক্যালের গুদাম ও দোকান গড়ে তোলা হলে তা মোটেও নিরাপদ হবে না, বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। বহুতলবিশিষ্ট ভবনের পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল পল্লীর জন্য শিল্প প্লট দাবি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই ডিপিপি বাতিল করে দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ ব্রাহ্মণকৃর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জায়গায় কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই কেমিক্যাল পল্লীতে প্রায় ৩০০ প্লট গড়ে তোলা হবে। সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুট ও ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের দুই ধরনের প্লট থাকবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads