• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে হবে ট্যানারি শিল্পাঞ্চল : প্রধানমন্ত্রী

ছবি : সংগৃহীত

শিল্প

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে হবে ট্যানারি শিল্পাঞ্চল : প্রধানমন্ত্রী

  • বাসস
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার পুনরায় নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আধুনিক ট্যানারি ও স্বতন্ত্র চামড়া শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

সরকার ইতোমধ্যে শিল্পাঞ্চলের উপযোগী স্থান নির্ধারণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল পুনঃনির্বাচিত হলে চামড়া শিল্পাঞ্চল ও ট্যানারি নির্মিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা চামড়া শিল্প নেতৃবৃন্দকে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে শিল্পাঞ্চল ও ট্যানারি নির্মাণ করব। অন্যথায় আপনারা নিশ্চিত করবেন যে নতুন সরকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।

প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রত্যেকটিতে বিশেষ করে চামড়া শিল্পের জন্য একটি করে স্থান রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শুভাশিষ বসু, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি সফিউল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন।

দেশে বিভিন্ন চামড়া শিল্প গড়ে তোলায় ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে, যেগুলো তারা তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে ফিনিশিং দিয়ে মার্কেটে দিচ্ছে।

তিনি চামড়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, এ কাজগুলো যেন আরো ভালোভাবে করা যায় আপনারা তা খেয়াল রাখবেন। এজন্য যা কিছু সহযোগিতা দরকার, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে, আমরা তা করব।

সরকারপ্রধান বলেন, এ সেক্টরকে আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সেই সম্ভাবনাটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সেইদিকে দৃষ্টি দিয়েই আমাদের সবরকম ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি রফতানি বাস্কেট বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘সবসময় আপনাদের মাথায় রাখতে হবে আরো কোন কোন দেশে আমরা রফতানি করতে পারি। কোন দেশের চাহিদা কী, কোথায় আমরা আমাদের রফতানিটা বাড়াতে পারি। তাহলে আমাদের উৎপাদনও যেমন বাড়বে, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এবং রফতানি উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।’

‘এজন্য আমাদের বাজেটও বাড়াতে হবে এবং প্রণোদনাও দিতে হবে’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার নিজেরা ব্যবসা করে না, বরং ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।’

তিনি জানান, এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই তার সরকার সব দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের বাংলাদেশে ডেকে তাদের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় কূটনীতিটা ছিল পলিটিক্যাল আর এখন হয়ে গেছে ইকোনমিক্যাল। কী ধরনের বিনিয়োগ আমাদের দেশে আসতে পারে, সেটাকেই খুঁজে নিয়ে আসা এবং সেভাবেই কাজ করতে হবে।’

তার সরকার রফতানির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত যে চারটি খাতের উন্নয়নে ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার মধ্যে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প অন্যতম।

রাজধানীর হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছিটিয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পসমূহকে একটি পরিবেশবান্ধব জায়গায় স্থানান্তরের জন্য ঢাকার সাভারে ধলেশ্বরী নদীর তীরে ২০০ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ১১৫টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। তবে এটাকে আরো আধুনিকায়ন করা দরকার।

এ সময় চামড়া সংগ্রহে কসাইদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে সংগ্রহকালে একটি বড় অংশ যে নষ্ট হয়ে যায়, তা আর নষ্ট হতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আনা জার্মান ব্র্যান্ড পিকার্ডের তৈরি চামড়ার ভ্যানিটি ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, এটি বাংলাদেশে তৈরি এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকেও তিনি এটা দেখিয়েছেন যে, এসব পণ্যও বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। তিনি বিদেশে যেখানেই যান এসব বাংলাদেশি পণ্য সঙ্গে করে নিয়ে যান বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের জনগণ অনেক মেধাবী একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা সুন্দর কাজ করতে পারে, বিশেষ করে মহিলারা চমৎকার হাতের কাজ করতে পারে। কাজেই এভাবে ব্র্যান্ডগুলোকে আমরা আরো সুন্দর রূপ দিতে পারি।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, দেশে আরো বেশি বেশি পাদুকা শিল্প গড়ে উঠুক, দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড এখানে আসুক, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসুক। এর ফলে একদিকে আমাদের যেমন কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে যারা কাজ করাবেন তারা অত্যন্ত সস্তা শ্রমে এবং সুন্দর পরিবেশে কাজটা করিয়ে নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে এখানকার ব্যবসায়ীরা বিশ্বে একটি বিরাট বাজার সুবিধা পেতে পারেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত করেছি। দেশে অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমরা ইতোমধ্যে কানেকটিভিটি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছি। যার ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিশাল বাজারেও আমাদের প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জিএসপি সুবিধা এবং বিভিন্ন দেশের ডিউটি ফ্রি বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার সুবিধা থাকারও উল্লেখ করে বলেন, ‘এইভাবে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আমাদের প্রচেষ্টার শুভফল দেশের মানুষ যেমন পাচ্ছে তেমনি আপনারা ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছেন।’

তার সরকার দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কর্মক্ষম যুবসমাজই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি। যে কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুমুখীকরণ করে যুবকদের প্রশিক্ষিত করে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads