• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : সংগৃহীত

তথ্যপ্রযুক্তি

থ্রিডি প্রিন্টিং ও এর ইতিহাস

  • সৈয়দ মাসরুর রহমান
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০১৮

একুশ শতকে প্রযুক্তিভিত্তিক যত উদ্ভাবন হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো থ্রিডি প্রিন্টার। প্রকৌশলী থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবারই চিন্তার জগৎকে বাস্তবে রূপ দিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি।

থ্রিডি প্রিন্টারে ছোটখাটো বিভিন্ন বস্তু থেকে শুরু করে তৈরি করা হয়েছে আস্ত বাড়ি পর্যন্ত। এ ছাড়া মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করার জন্যও থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন অনেক গবেষক।

থ্রিডি প্রিন্টার একেবারেই আধুনিককালের হলেও এর শুরুটা কিন্তু হয়েছিল সেই আঠারো শতকে। দুশ’র বেশি বছর ধরে কেমন ছিল এই পথচলা? চলুন দেখা যাক-

১৮৫৯ সালে ফরাসী ফটোস্কাল্পটর ফ্রান্সিস উইলিয়াম ইতিহাসের প্রথমবারের মতো থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি তুলে ধরেন। একটি বস্তুকে বিভিন্ন দিক থেকে একই সঙ্গে তুলে ধরার জন্য তিনি একসঙ্গে ২৪টি ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলেন।

এর আরো কয়েক বছর পর ১৮৯২ সালে যোশেফ ই ব্লান্থার থ্রিডি ফটোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য স্বীকৃতি পান। বর্তমান সময়ের থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির আদলেই ছিল তার এই উদ্ভাবন।

বলা যায় থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির বীজ বুনেছিলেন এই দুজনই।

১৯৮০ সালে প্রথম থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি নিয়ে পেটেন্ট আবেদন করা হয়। আবেদনটি করেছিলেন ড. হিডিও কোদামা নামক একজন গবেষক। এতে তিনি তুলে ধরেছিলেন ফটোপলিমার র্যাপিড প্রোটোটাইপিং সিস্টেম। মূলত ফটোপলিমার ম্যাটেরিয়ালকে অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে একত্রিত করে শক্ত করার মাধ্যমে তিনি কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি এই উদ্ভাবনকে কখনই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেননি।

১৯৮৬ সালে অপর গবেষক চাক হাল স্টেরিওলিথোগ্রাফি অ্যাপারেটাস আবিষ্কার করেন। এই প্রযুক্তিতে পলিমার অণু একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় চেইন তৈরি করার মাধ্যমে একাধিক স্তর তৈরি করে যেগুলোকে একত্রিত করার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি তৈরি করা সম্ভব ছিল।

পরবর্তীতে তিনি থ্রিডি সিস্টেমস করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন যেখান থেকে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক থ্রিডি প্রিন্টার এসএলএ-১ বাজারে আনা হয়।

চাক হাল তরল পলিমার ব্যবহার করলেও ১৯৮৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের আরেক গবেষক কার্ল ডেকার্ড বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে কোনো বস্তু তৈরির জন্য পলিমার পাউডারের ব্যবহার দেখানো হয়। পলিমার পাউডারকে আটকে রাখার জন্য তিনি লেজার রশ্মি ব্যবহার করেন। এর জন্য তিনি ‘বেটসি’ নামের একটি যন্ত্রও তৈরি করেন।

১৯৮৯ সালে থ্রিডি বস্তু তৈরি করার জন্য নতুন একটি প্রযুক্তির ব্যবহার দেখিয়েছিলেন স্কট ক্রাম্প এবং তার স্ত্রী লিসা ক্রাম্প। তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির নাম ছিল ফিউজড ডিপোজিশন। এ প্রযুক্তিতে পলিমার ফিলামেন্ট গলিয়ে এরপর একটি আস্তরের উপর রেখে একটির পর একটি স্তর জুড়ে দেওয়া হতো। পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন স্ট্রাটাসিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

১৯৯৯ সালে একটি গবেষণাগারে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে মূত্রথলি তৈরি করা হয় যা সফলভাবে একজন রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।

২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের গবেষক আদ্রিয়ান বোয়ার রেপরাপ নামের একটি প্রকল্প চালু করেন। তিনি এ প্রকল্পের অধীনে এমন একটি থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি যেটি এর নিজস্ব বিভিন্ন কমপোনেন্টও প্রিন্ট করতে সক্ষম ছিল। তার লক্ষ্য ছিল সকলের জন্য থ্রিডি প্রিন্টার আরো সহজলভ্য করা।

এ প্রকল্পে তৈরি করা প্রথম থ্রিডি প্রিন্টারের নাম ছিল ‘ডারউইন’। এ ছাড়া মেন্ডেল, প্রুসা মেন্ডেল, হাক্সলে নামের আরো তিনটি থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করা হয় প্রকল্পের অধীনে।

২০০৮ সালে নেদারল্যান্ডসে চালু হয় শেপওয়েজ নামে একটি থ্রিডি প্রিন্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিউইয়র্কে একটি কারখানা স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বানানো বিভিন্ন বস্তু নিয়ে একটি মার্কেটপ্লেসও চালু করে শেপওয়েজ। একই বছর থ্রিডি প্রিন্টেড পা তৈরি করা হয় মানবদেহের জন্য।

এতদিন পর্যন্ত সবাই ভেবেছিলেন শুধু ছোটখাটো বিভিন্ন বস্তু তৈরি করা সম্ভব থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে। তবে ২০১১ সালে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে এয়ারক্রাফট তৈরি করে সবাইকে চমকে দেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের একদল প্রকৌশলী। আর এজন্য খরচ হয়েছিল সাত হাজার ডলারেরও কম।

পরবর্তী বছরগুলোয় থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি আরো উন্নয়ন ঘটতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর একটি বাড়ি তৈরি করা হয় থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads