• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মাঠে বসেই কৃষক পাচ্ছেন ডিজিটাল কৃষিসেবা

মিরপুরে মাঠে বসেই ডিজিটাল কৃষি সেবা পাচ্ছেন কৃষকেরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

তথ্যপ্রযুক্তি

মাঠে বসেই কৃষক পাচ্ছেন ডিজিটাল কৃষিসেবা

  • জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া
  • প্রকাশিত ২৩ এপ্রিল ২০১৯

কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ও কৃষককের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ কাজ করে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস। মিরপুরের কৃষির সার্বিক উন্নয়নের ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাধারণ কৃষকদের সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন করেছেন এই অফিসের কর্মকর্তারা। ফসলের রোগবালাই, কোন সময়ে বা কোন মাসে মাঠ ফসলের জন্য কী করণীয় সেটা তাৎক্ষণিক কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে প্রচারণা। তাদের ফেসবুক পেজ উপজেলা কৃষির সব তথ্য কৃষকের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছে খুব সহজেই। এতে কৃষকের একদিকে বাঁচছে সময়, অন্যদিকে অর্থও। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়িত কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উপজেলা এবং ইউনিয়ন কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তারা কৃষকদের ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে সেবার মান আরো বাড়ছে।

সরেজমিন গিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের শাহাপুর মাঠে দেখা যায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বেশ কয়েকজন কৃষককে ডিজিটাল ট্যাবের মাধ্যমে কৃষিসেবা দিচ্ছেন। সেখানে তিনি বোরো ধানের জমিতে যাতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ না হয় ও হলে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং তার প্রতিকার কী- সে সম্পর্কে কৃষকদের আগাম সতর্কতা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ফসল ব্যবস্থাপনা, রোগ, পোকা-মাকড় সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছেন তিনি। মাঠে বসেই অ্যাপের মাধ্যমে নিজের ধানের জমিতে কোনো রোগ দেখা দিয়েছে কিনা তা মিলিয়ে দেখছেন শাহাপুর এলাকার কৃষক খাইরুল মালিথা। তিনি জানান, মোবাইল ফোনে কীভাবে ধানের চাষ করা হয় দেখা যায়। পোকা লেগেছে কিনা দেখা যায়। রোগ হয়েছে কিনা তা দেখা যায়। সেটাই আজকে নিজে হাতে-কলমে দেখলাম। এই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আমাদের শেখালেন ধানের কোন সময় কী দিতে হবে এবং ব্লাস্ট রোগ হওয়ার আগে আমাদের কী করতে হবে যাতে এ রোগ না হয়।

কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। তাই আমরাও এখন ডিজিটাল। কৃষি অফিসের লোকজন আমাদের মাঠে এসেই পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরাও আমাদের যেকোনো অসুবিধা হলেই কৃষি অফিসে ফোন দিয়ে সমাধান পাই। এছাড়া আমাদের এখন আর টাকা খরচ করে কৃষি অফিসে যেতে হয় না। ফোন দিয়েও আমরা সেবা নিতে পারছি। এতে আমাদের সময় এবং টাকা দুটোই বেঁচে যাচ্ছে।

কৃষক মনোয়ার মণ্ডল জানান, আমার বেগুনের জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। আমি কৃষি অফিসে গিয়ে তাদের বিষয়টি জানাই। তারপর তাদের পরামর্শ নিয়ে ভালো উপকার পেয়েছি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, বিভিন্ন ফসল চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরা চেষ্টা করি তাৎক্ষণিক সেটার সমাধান করার জন্য। নিরাপদ উপায়ে চাষাবাদ এবং আধুনিক চাষাবাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষি বিভাগ বর্তমানে কৃষকদের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে জোর দিয়েছে। কৃষি কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আমরা কৃষকের কাছে সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কৃষি বিভাগও এগিয়ে রয়েছে। মিরপুর উপজেলায় ২৩টি ডিজিটাল ট্যাবে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এবং উপজেলার সব উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার স্মার্টফোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক কৃষিসেবা নিশ্চিত করছি। এছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা সেবা দিচ্ছি। বতর্মানে অনেক কৃষক স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। আমরা তাদের কাছে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপ পৌঁছে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং মাঠে গিয়ে কৃষকদের সেবা দেওয়ার দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। উপজেলায় কর্মরত প্রতিটি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ সবাই মাঠে গিয়ে হাতে-কলমেও কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। কৃষক আমাদের কাছে পরামর্শ চাইতে আসার আগেই আমরা চেষ্টা করছি তাদের কাছে গিয়ে পরামর্শ পৌঁছে দেওয়ার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads