• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সৌদিফেরত নারীরা

নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সৌদিফেরত নারীরা

সংগৃহীত ছবি

শ্রমশক্তি

নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সৌদিফেরত নারীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৮

বড় স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মৌসুমী, লতা, কুলসুম, শারমিনসহ অনেকেই। আশা ছিল পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটাবেন। দালালদের মিষ্টি কথায় ভাগ্য ফেরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদিতে। তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি, ভয়াবহ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো রকমে দেশে ফিরে এসেছেন কুলসুম-শারমিনরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সৌদিফেরত নারীরা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন তাদের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা। সৌদিফেরত শতাধিক নারীকে নিয়ে কয়েকটি এনজিও ‘সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেশনের (বিসিএসএম) পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ভাগ্য বদলাতে নারীরা বিদেশে যাচ্ছেন একটু সুখের আশায়। সেখানে তাদের কপালে জুটছে ভয়াবহ শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা এই নারীর সংখ্যা বাড়ছেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নির্যাতিত হয়ে হাজারখানেক নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার অপেক্ষায় সেখানে সেফ হাউজ ও বিভিন্ন জেলে আছেন আরো অনেকে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশে ফিরে আসা নারী কর্মীরা তাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছেন। তাতে অধিক সময় ধরে কাজ করানো, সময়মতো ঘুমাতে না দেওয়া, ঠিকমতো খাবার না দেওয়া, মাস শেষে নির্ধারিত বেতন না দেওয়া, গৃহকর্তা এবং বাড়ির অন্যদের দ্বারা ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ যৌন নির্যাতনের ফলে গর্ভবতী হয়ে দেশে ফেরত আসার মতো ঘটনাও ঘটছে। ফেরত আসা নারীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে। গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাথায় গরমপানি ঢেলে দেওয়া হয়। চুল টেনে তুলে ফেলা হয়। গরম আয়রন দিয়ে শরীরে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। এসব ঘটনার প্রতিকারের জন্য সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুপারিশগুলো হলো- প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে ফেরত আসা গৃহশ্রমিকের ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্তা বা গন্তব্য দেশের এজেন্সি কর্তৃক নারী শ্রমিক ও তার শিশুর সম্পূর্ণ দায়িত্ব বহন করতে হবে। দোষী গৃহকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দূতাবাসকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ আরো যুগোপযোগী করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সৌদিফেরত শারমিন, মৌসুমী, কুলসুম, লতারা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তারা বলেন, সকাল ৬টা থেকে রাত একটা-দেড়টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কিন্তু ঠিকমতো খাবার পাওয়া যায় না। এক হাজার রিয়াল বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো বেতন দেওয়া হয় না। মালিকের কাছে টাকা চাইলেই মারধর করে। দেশে ফিরে আসার কথা বললে টাকা চায়। বলে, তোদের টাকা দিয়ে কিনে এনেছি। টাকা ফেরত দে, নইলে দেশে যেতে পারবি না।

বাংলাদেশের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, তোমরা ওখানে যাওয়ার পরে আমাদের আর দায়দায়িত্ব নেই। মালিকদের ম্যানেজ করে চলতে হবে।

নির্যাতিতরা বলেন, এখনো সেখানে অনেক নারী সমস্যায় আছে, জরুরি ভিত্তিতে তাদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে নারীদের ওপর কী ধরনের নির্যাতন হয় তা শুধু যে গেছে সে-ই বলতে পারবে। যারা না গেছে তারা বুঝবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রোগ্রাম পরিচালক মেরিনা সুলতানা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায়, ব্র্যাকের শরীফুল হাসান, ওকাবের ওমর ফারুক চৌধুরী, সৈয়দ সাইফুল হক প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads