• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ৬৩৬০ টাকা দিতে চায় মালিকরা

ছবি : ইন্টারনেট

শ্রমশক্তি

পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ৬৩৬০ টাকা দিতে চায় মালিকরা

শ্রমিকদের প্রস্তাব ১২ হাজার ২০ টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০১৮

পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে মালিকপক্ষ। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের তৃতীয় সভায় এ প্রস্তাব দিয়েছেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল সোমবার মজুরি বোর্ড কার্যালয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভায় নিরপেক্ষ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সদস্য ফজলুল হক মন্টু, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। সভায় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১২ হাজার ২০ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করা হয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ১১টি বিষয় বিবেচনা করে মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি জানান, সর্বনিম্ন সপ্তম গ্রেডের জন্য ৬ হাজার ৩৬০ টাকা বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে।   পরে অন্যান্য গ্রেডের বেতন বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানান।

বিজিএমই প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে বলেন, শ্রমিকদের প্রয়োজন আর মালিকদের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। শ্রমিকপক্ষের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, যে কেউ যেকোনো পরিমাণে বেতন চাইতে পারেন। তবে উদ্যোক্তাদের সামর্থ্যের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, মজুরি বোর্ডে চেয়ারম্যান ও স্থায়ী প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তারা দুই পক্ষের প্রস্তাব বিবেচনা করে যৌক্তিক বেতন নির্ধারণ করবেন।

শামছুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, শ্রমিকদের অনেক সংগঠন ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছে। অনেকেই চাইছে ১৮ হাজার টাকা। তবে পোশাক শিল্পে সব শ্রমিকের সক্ষমতা সমান নয়। তা ছাড়া দেশে এখন অনেক নতুন প্রযুক্তি এসেছে। নতুন আসা যন্ত্র চালাতে অভিজ্ঞ শ্রমিক প্রয়োজন। এ অবস্থায় অনভিজ্ঞদের চাকরি রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া সব কারখানার আর্থিক সঙ্গতিও সমান নয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি আরো বলেন, শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবিত মজুরিতেও পোশাক শ্রমিকরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারবে না। জীবন ধারণের খরচ, সন্তানদের পড়াশোনা, খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় এ প্রস্তাব মেনে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সূত্র জানায়, দুই পক্ষের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে। মজুরি কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রস্তাব বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ প্রকাশ করা হবে। কারখানা পরিদর্শনসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে নভেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড আর রানা প্লাজা ধসের পেক্ষাপটে শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে ২০১৩ সালে আন্দোলনে নামে। সরকার নির্ধারিত বোর্ড ১০টি সভা শেষে ওই বছরের নভেম্বরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে। এর পাঁচ বছর পর ন্যূনতম মজুরি ১ হাজার ৬০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিজিএমইএ। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে ২০ শতাংশ।

মালিকপক্ষের প্রস্তাবকে প্রহসন হিসেবে দেখছেন পোশাক শ্রমিক নেতারা। গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, রাজধানীর বস্তিতে একটি ছোট ঘরের ভাড়া এখন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ৬ হাজার টাকা আয়ে শ্রমিকরা খাবে কী। নিত্যপণ্যের দাম, সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয়সহ সবকিছু বিবেচনা করলে ৬ হাজার ৩৬০ টাকায় জীবনযাপন অসম্ভব।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো মালিকদের প্রস্তাবে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। পর্যালোচনা শেষে ছয় মাসের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের মজুরির বিষয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দিতে শ্রম মন্ত্রণালয় কমিশনকে ছয় মাসের সময় বেঁধে দেয়।

এদিকে অবিলম্বে মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে রাজধানীর পল্টনে মজুরি বোর্ড কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে পোশাক শ্রমিকদের বেশ কয়েকটি সংগঠন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, শ্রমিক প্রতিনিধির প্রস্তাবের সঙ্গে শ্রমিকদের বড় একটা অংশ একমত নয়। ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি যা হওয়া উচিত তা দেওয়া হচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads