প্রযুক্তির উন্নয়নের সুবাদে বিশ্বব্যাপী কাজের ধরনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। ইন্টারনেটের সুবাদে ভৌগোলিক দূরত্ব মানুষের যোগাযোগে আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। এর বড় উদাহরণ অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করা বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তি। বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশের প্রায় ছয় লাখ ৫০ হাজার তরুণ আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটভিত্তিক শ্রমশক্তির প্রায় ১৫ শতাংশ জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ১৬ বছরে বাংলাদেশে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ২০ শতাংশ কমেছে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন থেকে প্রতিবেদনের খসড়াটি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে কাজের প্রকৃতি পরিবর্তনের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উৎপাদনের প্রযুক্তিগত ব্যবহার বাড়ানোর সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণ এবং সামাজিক অংশগ্রহণ বাড়ছে। এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা অনেক বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশেও দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ার বিপরীতে থমকে আছে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা। আর বাংলাদেশে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ব্যাপক হারে কমছে। ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে আফ্রিকার দেশগুলোতেও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে এর চাহিদা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। একই সময়ে জর্ডানে আধা-দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে মাত্র সাড়ে ৭ ভাগ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রসারের কারণে উন্নত বিশ্বে কারখানায় শ্রমিক নিয়োগের প্রবণতা কমেছে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নিয়োগ খুব একটা বাড়ছে না। তবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কারখানায় শ্রমিক নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে।
সময়ের ব্যবধানে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একটি চমৎকার উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, চীনের হিলটন হোটেলে ১৯৮৬ সালে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বয়স ২০ থেকে ২৬ বছর, স্নাতক সনদ, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, আবাসস্থল হোটেলের কাছাকাছি হওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। একই পদের জন্য ২০১৮ সালে সেবা খাতে চাকরির অভিজ্ঞতা, চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি চাওয়া হয়েছে। দক্ষতায় বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা ছাড়াও দলীয়ভাবে কাজ করার মানসিকতা, গ্রাহকসেবায় মনোনিবেশ করতে সক্ষম প্রার্থী চাওয়া হয়েছে।
মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়াতে বিশ্বের সব দেশের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শিশুদের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে এতে বলা হয়, গ্রামীণ অঞ্চলে প্রাক-প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া শিশুরা পরবর্তী সময়ে স্কুল শিক্ষায় ভালো ফল করেছে। শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ করা হলে সেটি পরবর্তী সময়ে ভালো ফল বয়ে আনে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এতে আরো বলা হয়, মানবসম্পদে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে দেশগুলোর আয়ও বাড়াতে হবে। নতুন আয়ের উৎস খুঁজতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। মূল্য সংযোজন কর, আবগারি শুল্ক, কার্বন কর, করপোরেট কর, সম্পত্তি কর আহরণে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি খাতে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।