• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অর্থনৈতিক কূটনীতি বাড়ানোর উদ্যোগ

ছবি : সংগৃহীত

শ্রমশক্তি

অর্থনৈতিক কূটনীতি বাড়ানোর উদ্যোগ

দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০১৯

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত দেশ বিনির্মাণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কূটনীতি আরো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সম্প্রসারণের পাশাপাশি, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আর্থিক বুনিয়াদের ভিত্তি আরো মজবুত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এজন্য উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন-ফ্রান্সের পাশাপাশি ভারত-চীন, রাশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সস্পর্ক আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই—এমন

 বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া রাশিয়া, চীন, জাপান ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার করা হচ্ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের এক সম্মেলনে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের কার্যকর ও সময়োপযোগী অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণের পরামর্শ দেন, যাতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর  হয়।

কূটনীতিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে। রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের ও  দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশি কূটনীতিবিদদের ওইসব দেশের বাজার পরিবীক্ষণ করে তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধোনের পরামর্শ  দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপাী সহযোগিতা সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে একটি রিজিওনাল ইকোনমিক করিডর গঠনের বিষয়েও উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

জানা গেছে, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উন্নত-অনুন্নত সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন, প্রতিবেশী সার্কভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি জাপান-চীন-ভিয়েতনাম এবং ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও সহযোগিতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশের পাশাপাশি আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ল্যাটিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, কলম্বিয়া এবং আফ্রিকার উগান্ডা, তানজানিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার বিষয়টির অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। গত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছে সরকার। এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হলে উন্নত দেশ বিনির্মাণের কাজ অনেকাংশে সহজ হবে বলে সূত্র জানায়।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক কূটনীতি সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মার্কোসাভুক্ত দেশগুলো সফর করছেন। এ সফরের মূল উদ্দেশ্য, এসব দেশে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার সহজ করা। 

এ ব্যাপারে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের পাশাপাশি ও রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শ্রমবাজার অনুসন্ধানেরও কাজ চলছে। বিদেশগামী শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানো এবং নতুন শ্রম বাজারে ঢুকতে পারলে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করেন তিনি। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের চলতি মেয়াদেই উন্নত দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে নেওয়াই এসব উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিতাড়িত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ইমেজ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের পুরোটাই ‘ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি’ (অর্থনেতিক কূটনীতি)। তিনি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সম্প্রসাণের বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ, নতুন রপ্তানি বাজার অনুসন্ধানের কাজও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি দেশে দূতাবাস স্থাপনের কাজ চলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা সম্প্রসারণে সরকারের এসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই দশকের মধ্যে বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads