• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ছবি : কাল্পনিক

আইন-আদালত

থামছে না জামিন জালিয়াতি

* গুরুতর অপরাধের আসামিরা বেরিয়ে যাচ্ছে অনায়াসে * নেই উপযুক্ত নজরদারি

  • নাজমুল আহসান রাজু
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

বিচারিক আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত জামিন জালিয়াতি চলছেই। একের পর এক ঘটে চলেছে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। হত্যা, অস্ত্র ও মাদকের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত আসামিরা আদালত অঙ্গনের একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে কাগজপত্র ও তথ্যের হেরফের করে অনায়াসে জামিনে বেরিয়ে আসছে। উপযুক্ত নজরদারি না থাকায় অনৈতিক ও বেআইনি এই কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে জামিন জালিয়াতির সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি।

আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায়ই জামিন জালিয়াতির মতো জঘন্য অপরাধের ঘটনা ঘটছে। ধরা পড়ছে খুব কম। গত পাঁচ বছরে জামিন জালিয়াতির ২৫টি চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। তবে এ সংখ্যা সম্পূর্ণ চিত্র নয় বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। গত বছর উচ্চ আদালতে ১২টি জামিন জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে।

জামিন জালিয়াতির দায়ে উচ্চ আদালতের একজন বেঞ্চ কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন, বিচারিক আদালতে বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সাজা হয়েছে, আইনজীবী গ্রেফতার হয়েছেন। মামলা, সাজার পরও রোধ করা যাচ্ছে না এ ধরনের জালিয়াতি।

বিচারিক আদালতেও জামিন জালিয়াতির ঘটনা অহরহ ঘটছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ২০১৫ সালের ২১ আগস্টের। কর্মচারীদের যোগসাজশে ৭৬ মামলায় অবৈধভাবে জামিননামা তৈরি করে ১০৬ আসামিকে কারামুক্ত করা হয়। জালিয়াতির এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বছর ২২ মার্চ আদালতের পাঁচ কর্মচারীর ১৪ বছরের সাজা হয়।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও উচ্চ আদালতে মাদকদ্রব্য আইনের একটি মামলায় জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে বিচারপতিদের হাতে। এ ঘটনায় আসামির জামিন বাতিলের পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) জালিয়াতির ঘটনা তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

ইয়াবা মামলায় জামিন জালিয়াতির দায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামকে গত বছর জুলাই মাসের শেষের দিকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কোনো আদেশ না হওয়া সত্ত্বেও মামলার আসামি এবং অন্যান্য মহলের কারসাজি ও সহায়তায় জাল-জালিয়াতিপূর্ণ রুল এবং জামিন আদেশ তৈরি করায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন বকতার আহমেদকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর খিলগাঁও থেকে গ্রেফতারের মামলায় এমন জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

ভুয়া জামিননামা তৈরি করে আসামিদের জামিনে মুক্ত করার অভিযোগে আইনজীবী মো. আবদুস সামাদ ও তার সহযোগী মো. বনি আমিনকে ২০১৬ সালে চানখাঁরপুল থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্ট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং বিভিন্ন জেলখানার ডেপুটি জেলারদের ৮১টি সিল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ১৩ মামলার আসামিদের নথিও পাওয়া যায় তাদের কাছে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন মুঠোফোনে বাংলাদেশের খবরকে এ বিষয়ে বলেন, মাঝেমধ্যে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ছে। আদালতের আদেশ জালিয়াতি কাম্য নয়। তারপরও যখনই ধরা পড়ছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে একাধিক জালিয়াতির ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। যারাই জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।

বগুড়ার একটি হত্যা মামলায় বিচারপতির সই জাল করে জামিন নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত বছর ৩০ জুলাই পাঁচ আসামিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। নথিতে দেখা যায়, আসামিরা ওই দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করেছেন। যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান আদালত।

একটি হত্যা মামলায় নাম আসে শিবগঞ্জের তোয়াব আলীসহ পাঁচজনের। আর নাম আসতেই গত বছরের মার্চে হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেন তারা। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে জামিন না মিললেও ভুয়া জামিনের কাগজ দিয়ে মামলার মূল নথি তুলতে এসে ধরা পড়েন তাদেরই এক আইনজীবী। 

মো. আরাফাত হোসেনকে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট খুনের ঘটনায় আবদুর রউফ ওরফে আজাদ হোসেনসহ ১০ জনকে আসামি করে জয়পুরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের মা। এজাহারে বলা হয়, আসামি আজাদ হোসেন সামুরাই (জাপানি তলোয়ার) দিয়ে আরাফাতকে কোপ দিলে তার গলা কেটে যায়। পরে অন্য আসামিরা আরাফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে।

আসামি আবদুর রউফ ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। আবেদনে মামলার এজাহার পরিবর্তন করা হয়। জামিনের আবেদনের সঙ্গে মামলার অভিযোগপত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়নি। ওই আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজাদকে ছয় মাসের জামিন দেন। পরে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে জামিন আদেশ প্রত্যাহার করেন আদালত। একই সঙ্গে আসামির আইনজীবী প্রদীপ কুমার সরকার, আসামি, জামিন আবেদনের হলফনামাকারী এবং বিচারিক আদালত থেকে সত্যায়িত অনুলিপি ইস্যুকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন।

গত ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার মাদকের এক মামলায় জামিন জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে সিআইডিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বাবু নামের এক আসামির জামিন বাতিল করা হয়। জালিয়াতির বিষয়টি নজরে এলে হাইকোর্ট এই আদেশ দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads