• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
প্যাকেটজাত সব তরল দুধ পরীক্ষার নির্দেশ

বাজারে বিক্রীত প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধ

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

প্যাকেটজাত সব তরল দুধ পরীক্ষার নির্দেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ মে ২০১৮

বাজারে বিক্রীত সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধ (প্যাকেটজাত তরল দুধ) বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি করে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে পাস্তুরিত দুধ নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা দিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গতকাল সোমবার রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিএসটিআই, আইসিডিডিআরবি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ২৭ জুন। এ সম্পর্কিত একটি জনস্বার্থ-বিষয়ক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। রিটটি করেন আইনজীবী তানভির আহমেদ।

শুনানিতে তানভির আহমেদ বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (১)-এ বলা হয়েছে, জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করবে। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা রয়েছে। তাদের নিষ্ক্রিয়তা সংবিধানে ১৫ (ক), ১৮ (১) ও ৩২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের শামিল।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ‍শুনানি করেন আবদুল্লাহ আবু সাঈদ, মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ) ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মনিরুজ্জামান।

বাজারে বিক্রীত পাস্তুরিত দুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইসিডিডিআরবি। ওই প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারা দেশে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। এরপর জনস্বার্থে এ রিট করা হয়।

গবেষণায় আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা দেশের ৪৩৮টি কাঁচা দুধের নমুনা এবং বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত দুধের ৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেন। ওই গবেষণার ফলাফল গত ২৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাস্তুরিত তরল দুধ অনিরাপদ। শিশুদের পুষ্টির প্রাথমিক উৎস এই দুধ নিয়ে গবেষণার ফলাফলকে আইসিডিডিআরবির গবেষণায় ‘অপ্রীতিকর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

কেয়ার বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় ‘স্ট্রেনদেনিং দ্য ডেইরি ভ্যালু চেইন (এসডিভিসি)’ প্রকল্পের আওতায় দেশের বগুড়া, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রংপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে আইসিডিডিআরবি এসব নমুনা সংগ্রহ করে। দেশের পাস্তুরিত দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ওই এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক দুধ উৎপাদনকারী পর্যায়ে ৭২ শতাংশে কলিফর্ম এবং ৫৭ শতাংশ নমুনায় ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। নমুনাগুলোর ১১ শতাংশ উচ্চসংখ্যায় ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া দূষিত। ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং দুধে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির ফলে বোঝা যায় যে, দুধ জীবাণু বা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা দূষিত। এসব ভাইরাস প্রাণীর মলে থাকতে পারে যা দুধ দোয়ানোর সময় দুধে মিশতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও দুধ পানের জন্য নিরাপদ করতে একে পাস্তুরিত করা হয়। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় মানদণ্ডে পাস্তুরিত দুধে এ ধরনের মলবাহিত কলিফর্মের উপস্থিতি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দেশে ডিটারজেন্ট পাউডার, সোডা, সয়াবিন তেল, লবণ, চিনি, গুঁড়াদুধসহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশিয়ে দুধ তৈরি হয়- এমন তথ্যও নতুন নয়। আর এসব দুধই দুগ্ধ ক্রয়কারী কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করছে স্থানীয় কয়েকটি চক্র, যা পরে পাস্তুরিত করা হয়।

গত মাসে রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভেজাল দুধ তৈরির বিষয়ে খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছিল বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে সম্পৃক্ত যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইনে মামলা করারও পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads