• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দণ্ডাদেশের মামলায় জামিন পেয়েও সুফল পাননি খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

দণ্ডাদেশের মামলায় জামিন পেয়েও সুফল পাননি খালেদা

  • নাজমুল আহসান রাজু
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই ২০১৮

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে এখন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডাদেশের পরপর এই মামলায় কারাগারে গিয়ে গত সাড়ে পাঁচ মাসেও আর মুক্ত আলোয় ফিরতে পারেননি তিনি। মামলাটিতে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েও অন্য মামলার ‘গ্যাঁড়াকলে’ পথ হারিয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কারামুক্তি। ইতোমধ্যে হাইকোর্টে পাওয়া চার মাসের জামিনের মেয়াদও শেষ হয়েছে। ফলে এই মামলায় আইনি লড়াইয়ে পাওয়া জামিনের সুফল ঘরে তুলতে পারেননি তিনি।

আইনজীবী সূত্র জানিয়েছে, আরো অন্তত ছয়টি মামলায় জামিন পেলেই কারামুক্ত হতে পারবেন বিএনপি নেত্রী। কিন্তু এসব মামলায় জামিন পাওয়া সময় সাপেক্ষ। এদিকে দণ্ডাদেশের মামলায় জামিন পেয়েও তার কারামুক্তি না মেলায় অনেকে দুষছেন বিএনপির আইনজীবীদের। তাদের মতে, ভুল কৌশল ও অন্য মামলায় কম গুরুত্ব দেওয়ায় জামিনপ্রাপ্তির সুবিধা অনেকটা ভেস্তে গেছে। বিএনপির আইনজীবীদের ধারণা ছিল, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেলেই বেরিয়ে আসবেন তাদের নেত্রী। কিন্তু জামিনের পরপরই বাকি ছয়টি মামলা দৃশ্যপটে হাজির হয়; সেগুলোতেও জামিনের চেষ্টা করেননি তারা। ফলে এক মাস চার দিন পর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে চার মাসের অন্তর্বর্তী জামিন পেলেও অন্য মামলাগুলোতে জামিন না থাকায় তার কারামুক্তি বিলম্বিত হতে থাকে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে চেয়ারপারসনের কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তার কারামুক্তি নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। কারণ একটি মামলায় জামিন হলেই সরকারপক্ষ ছুটে যাচ্ছে জামিন ঠেকাতে। এ অবস্থায় তার কারামুক্তি যতটা না আদালতের ওপর নির্ভরশীল তার চেয়ে বেশি নির্ভরশীল সরকারের সদিচ্ছার ওপর। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করতে হবে। সেটা যত দীর্ঘ প্রক্রিয়াই হোক। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া কাউকে কারামুক্ত করা সম্ভব নয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানসহ পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২ কোটি ৭০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল ও জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। দুদিন পর মামলাটিতে অর্থদণ্ড স্থগিত করে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের এক মাস পর ১২ মার্চ মামলায় হাইকোর্টে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান খালেদা জিয়া। তুলনামূলক কম সাজা, বিচারিক আদালতে মামলা মোকাবেলা করা ও তখন জামিনের অপব্যবহার না করা, বয়স ও জটিল শারীরিক অসুস্থতা এবং বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে এসেছে কিন্তু শুনানির জন্য প্রস্তুত নয়- এমন সব যুক্তিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ তার অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। পরদিনই দুদক ও সরকারপক্ষ জামিন স্থগিতের আবেদন করলে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত তা নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ১৯ মার্চ সরকার ও দুদকের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত চার বিচারপতির বেঞ্চ। আর আপিল আবেদনের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেন দুদক ও সরকারকে। এরপর গত ১৬ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার করা আপিল নিষ্পত্তি করতে জামিন প্রদানকারী হাইকোর্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেন। ফলে মামলায় তার জামিন বহাল থাকে। তবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রোল বোমা দিয়ে বাসের আট যাত্রীকে হত্যার মামলা, বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা পৃথক দুটি মামলা, নড়াইলে দায়ের মানহানির মামলা, ঢাকার আদালতে ভুয়া জন্মদিন উদযাপন ও স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়ার অভিযোগে করা মানহানি মামলায় তার জামিন নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। গত ২৮ মে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জেবিএম হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার দুই মামলায় জামিন দেন। এরপর গত ২ জুলাই আপিল বিভাগ কুমিল্লার হত্যা মামলায় জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ বহাল রেখে চার সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। তবে আপিল বিভাগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বহাল থাকে। এ ছাড়া ভুয়া জন্মদিন উদযাপন ও জাতীয় পতাকার মানহানির মামলায় হাইকোর্ট বিচারিক আদালতকে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। আর নড়াইলের মামলায় গত মঙ্গলবার তার জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads