• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
হাইকোর্টও মানছেন না ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার!

হাইকোর্ট

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

হাইকোর্টও মানছেন না ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার!

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ১৩ আগস্ট ২০১৮

ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার হাইকোর্টের নির্দেশনা মানছেন না মর্মে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, একের পর এক তিনি লঙ্ঘন করে চলেছেন হাইকোর্টের রুল, স্থগিতাদেশ, স্থিতি আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা। বিচারাধীন বিষয়ের ওপর কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি বেপরোয়াভাবে। একটি সিন্ডিকেটের হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি আদালত অবমাননার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার দোহাই।

রিটের আর্জিতে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে রাজধানীর ডেমরার পাড়াডগাইর ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মাশকুর রহমান অস্থায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৭ সালে এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে (নং-১৫৬১১/২০১৭) হাইকোর্ট অস্থায়ী এ নিয়োগাদেশের ওপর স্ট্যাটাসকো দেন, যা এখনো বহাল আছে। এ আদেশটি গোপন রাখেন ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার। গত ১৭ জুলাই ওই ওয়ার্ডে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী এ বিজ্ঞপ্তি জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দিতে হয়। অথচ বিজ্ঞপ্তিটি যাতে আগ্রহী প্রার্থীদের দৃষ্টিতে না পড়ে সেজন্য তিনি সেটি বোর্ডে ঝোলাননি। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে তিনি আশ্রয় নেন আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় ঘুপচি বিজ্ঞাপনের। ফলে জেলা রেজিস্ট্রারের পছন্দসই প্রার্থী ছাড়া আর কেউ ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির খবর জানতে পারেননি।

আরেক রেকর্ডে দেখা যায়, একই কাণ্ড তিনি করেছেন দক্ষিণখান ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (বর্তমানে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড) নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের ক্ষেত্রেও। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর এই অধিক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয় {(স্মারক নং-বিচার-৭/২ এন-৮২/২০১৩ (অংশ) ১৩৭২} এইচএম গোলাম ছাদেককে। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুটি রিট এখন বিচারাধীন (রিট নং-৫৭১/১৭ ও ২৪৬৩/১৭)। পৃথক দুই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। জারি করেন রুল। রুলটি এখন চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায়। মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি {স্মারক নং-১৯৫০ (৮)} দেন দীপক কুমার। এর ভিত্তিতে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে নিয়োগের সুপারিশসহ গত ১৬ মে তিনজনের প্যানেলও পাঠিয়ে দেন (স্মারক নং-৫৩৮৬) তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭-এ। এই অধিক্ষেত্রে এখন নিয়োগের চেষ্টা চলছে।

আরেকটি নথিতে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর রাজধানীর কদমতলীর শ্যামপুর ইউনিয়নের ৪, ৫ (অংশ) এবং ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান {স্মারক নং-১৩১২, বিচার-৭/২ এন-১৬০/৮০ (অংশ-১)} মো. জাকির হোসাইন। অধিক্ষেত্রটি এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডসংশ্লিষ্ট। রিট (নং-১২৬/১৭) রয়েছে এ নিয়োগ নিয়েও। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর স্ট্যাটাসকো দেন। এ আদেশ অগ্রাহ্য করে দীপক কুমার সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।

একইভাবে মো. ছানাউল হক নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ {স্মারক নং-১৩১১, বিচার-৭/২ এন-১৬০/৮০ (অংশ)} পান যাত্রাবাড়ী থানাধীন দনিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। অধিক্ষেত্রটি বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ। একটি রিট পিটিশনের (নং-১৫০৩০/১৭) পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের স্ট্যাটাসকো রয়েছে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপরও। দীপক কুমার সরকার এটিও অগ্রাহ্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে (পূর্বতন মাতুয়াইল ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) অস্থায়ী নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ নূর আলম। এ নিয়োগাদেশের পক্ষে স্ট্যাটাসকো রয়েছে (রিট নং-১৪৮২১/২০১৬) হাইকোর্টের। তারপরও এ অধিক্ষেত্রে নতুন নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন দীপক কুমার। বিষয়টি উল্লেখ করে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা রেজিস্ট্রারের দফতরকে চিঠি দেন মোহাম্মদ নূর আলম। তাতেও থামেননি জেলা রেজিস্ট্রার।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ নূর আলম বলেন, ঢাকার বর্তমান জেলা রেজিস্ট্রার হাইকোর্টও মানছেন না। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে নানা চাতুর্যের আশ্রয় নিচ্ছেন তিনি। আদালতের স্ট্যাটাসকোর বিষয়টি তাকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ তিনি অর্থ আর আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭-এ ওঁৎ পেতে থাকা একটি সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার বাংলাদেশের খবরকে গতকাল বলেন, কোনো অধিক্ষেত্রে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ নিয়ে রিট হতেই পারে। দেখার বিষয় হলো, নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ আছে কি না। যে ওয়ার্ডগুলোর কথা উল্লেখ করলেন, সেগুলোর ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকলে সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানাতে হবে। আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়ে আমরা সব সময়ই শ্রদ্ধাশীল। তাছাড়া নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের কোনো একক ক্ষমতা আমার নেই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই প্যানেল করা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করা যেতেই পারে। তবে এটি সঠিক নয়। আপনি সরেজমিন এসে দেখে যেতে পারেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads