• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বিচারাধীন এখনো ৪২ মামলা

জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের জেএমবি‘র সদস্য

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

দেশজুড়ে সিরিজ বোমার ১৩ বছর আজ

বিচারাধীন এখনো ৪২ মামলা

  • নাজমুল আহসান রাজু
  • প্রকাশিত ১৭ আগস্ট ২০১৮

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ভয়াবহ দিন আজ। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ‘আল্লাহর আইন কায়েম ও প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সারা দেশের ৬৩ জেলার আদালত, প্রেস ক্লাব ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেএমবির জঙ্গিরা। সুপরিকল্পিত এ সিরিজ বোমায় সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল। একমাত্র জেলা মুন্সীগঞ্জ বোমা বিস্ফোরণের আওতার বাইরে ছিল। ওই সিরিজ বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।

গত এক যুগের বিচার প্রক্রিয়ায় এখনো ৪৩টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাকার আদালতেই পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। সাতক্ষীরার ৬টি, যশোরের ৮টি, খুলনার ৪টি, সিলেটের ১০, সুনামগঞ্জের ৫, হবিগঞ্জের ৫টিসহ ৪৩টি মামলার বিচার শেষ হয়নি। এগুলো কবে শেষ হবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে চলতি বছর খাগড়াছড়ির আদালতে একটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টদের দাবি সাক্ষীর অভাবে মামলার বিচারকাজ নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। সাক্ষীর হাজিরে নানা জটিলতায় বিচারকাজ আটকে আছে। সাক্ষী নিশ্চিত করা গেলে বিচারকাজ দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

বোমা বিস্ফোরণে সারা দেশে ১৬১টি মামলা দায়ের হয়। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। পরে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় পুলিশ এক হাজার ১০৬ জনকে অভিযুক্ত করে ১৪৯টি মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় আদালতে। এর মধ্যে ১০টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। অপর ৫২টি মামলা আদালতে এখনো বিচারাধীন রয়েছে। আর অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে ৯৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, এসব মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত ১০৮টির রায়ে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে ৩৬০ জনকে সাজা দেন আদালত। তাদের মধ্যে ৩৫ জনকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৪৬ জনকে। খালাস পান ৩৪৯ জন। কারাগারে আটক অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে সাত জঙ্গির।

ঢাকা মহানগরীর ৩৩ স্পটে বোমা বিস্ফোরণে ১৮ মামলা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলার রায় হয়েছে। বিচারাধীন ৫ মামলা। বাকি ৯টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মামলার যুক্তিতর্ক চলছে। আবার কিছু মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। ঢাকার আদালতের একটি মামলায় ৪ জেএমবি সদস্যের আজীবন কারাদণ্ড এবং অন্য মামলাগুলোয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের তিন মাসের মাথায় ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদকে হত্যা করে জেএমবির জঙ্গিরা। ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০০৬ সালের ২৯ মে এ মামলার নিষ্পত্তি করে সাত শীর্ষ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।

২০১০ সালের ২৫ জুন হবিগঞ্জের মাওলানা সাইদুর রহমান জেএমবির আমির হলে তিনিও আটক হন। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর এই মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফের দণ্ড কার্যকর হয়। সিলেটে শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ২০১০ সালের ১৭ এপ্রিল। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে জেএমবি সালেহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, বোমারু মিজান ও হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিবকে ছিনতাই করে। এদের মধ্যে রাকিব পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। জেএমবির আমিরের দায়িত্ব পায় সালেহ উদ্দিন।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু বাংলাদেশের খবরকে জানান, ‘ঢাকার আদালতে নয়টি মামলার মধ্যে চারটি মামলার রায় হয়েছে এবং পাঁচটি মামলা এখনো বিচারাধীন আছে। বড় সমস্যা সাক্ষীরা গরহাজির। তাদের বাড়ির ঠিকানায় সমন জারি করা হলেও ফেরত আসছে। অনেকে ঠিকানা বদল করেছেন। এ জন্য বিচারকাজ নিষ্পত্তি হতে দেরি হচ্ছে। শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে সাক্ষী প্রয়োজন। সাক্ষীদের নামে জামিন অযোগ্য সমন জারির চিন্তা ভাবনা চলছে।’

সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার আদালতে ৬টি মামলা বিচারাধীন। ১৭৮ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৬০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। বাকি সাক্ষীরা আদালতে আসছে না। তাদের পাওয়া মুশকিল। ফলে মামলার নিষ্পত্তি ঝুলে আছে।

৬৩ জেলার মামলায় সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে ঝিনাইদহে। ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২১ জনকে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২৩ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে জেএমবির ১৫ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন খাগড়াছড়ির বিশেষ আদালত। রায়ে মো. আরিফুল ইসলাম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন, মো. করিম আলী, মো. ইসমাইল হোসেন জমাদ্দার, মো. মঞ্জু মিয়া, রুহুল আমিন সুফিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ডাদেশ এবং একই আইনের ৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে ১০ (দশ) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। মামলার অভিযুক্ত এরশাদ ওরফে  সাকিব খান, মো. বেলাল মিয়া, মো. হাফেজ মো. হাসান আল মাহমুদ, মো. আসাদুজ্জামান, মো. এমদাদুল হক, মো. ফারুক হোসেন, মো. এনায়েত উল্লাহ, আবুজরকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে যাবজ্জীবন এবং বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। খালাস পান মো. আবুল কালাম আজাদ। খাগড়াছড়ির আদালত প্রাঙ্গণসহ ৪টি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

১৯৯৮ সালে রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জন্ম। বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের জোরালো অবস্থানের জানান দেয় জেএমবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads