• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আদালতের প্রতি দুই আসামির অনাস্থা

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

সংগৃহীত ছবি

আইন-আদালত

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

আদালতের প্রতি দুই আসামির অনাস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করেছেন দুই আসামি। ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে আবেদনে বলা হয়েছে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। শুনানি মুলতবি রাখা হবে কি-না এ বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন আদালত। এ দিকে অনাস্থা জানানো আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি এ অনাস্থার আবেদন করেন আসামিদের আইনজীবীরা। অনাস্থা জানানো দুই আসামি হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার। অপর দুই আসামির পক্ষে আমিনুল ইসলাম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। এ ছাড়া ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু সরকার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান আসামি কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলার মুলতবি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাকে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর পৃথক আবেদনও করা হয়।

আদালত বসার পর খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির জন্য বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন সানাউল্লাহ মিয়া। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরও কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে হাসপাতালে ‘ভর্তি করেনি’ অভিযোগ করে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, যেহেতু উনি আদালতের হেফাজতে আছেন, সেহেতু আপনি তাকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। আপনি যদি জেলকোডের (কারাবিধির) দোহাই দেন এবং এড়িয়ে যান, আমরা কোথায় যাব?

বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসার পর তিনি ‘সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত’ আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন জানান আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে জেলকোড অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে মামলার কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, গত ২০ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলা চলবে বলে আদালত আদেশ দেন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চলতে পারে না। তার অনুপস্থিতিতে বিচার আইনসম্মত হবে না। তারা ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও আশঙ্কা জানান। তাই আমরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। এ জন্য শুনানি ২০ দিনের জন্য মুলতবি রাখা হোক।

দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করার আবেদন করেন। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ যদি যুক্তি উপস্থাপন না করে তাহলে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হোক।

শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করেন। এ সময় জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতের প্রতি অনাস্থার একটি লিখিত আবেদন জমা দেন। তখন আদালত বলেন, আপনি কি আগেই জানতেন যে আবেদন নামঞ্জুর হবে? আপনি টাইপ করে কেন আনলেন। এ সময় মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবীও লিখিত অনাস্থার আবেদন দেন।

তখন বিচারক দুদকের কৌঁসুলিকে বলেন, জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিনের বিষয় আপনি বলেন। তিনি বলেন, যেহেতু আসামির বিচারকের প্রতি আস্থা নেই। সেহেতু আবেদন নামঞ্জুর করেন। আদালত মুন্নার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার বিচার কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি রাখেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন খালেদা জিয়াকে। রায়ের পর পরই তাকে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই থেকে তিনি এখানে বন্দি রয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads