• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
লাইসেন্সবিহীন ২৮ পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে

লোগো বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই)

আইন-আদালত

বিএসটিআই-এর নতুন আইন অক্টোবরে

লাইসেন্সবিহীন ২৮ পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে

# সময় লাগবে আরো তিন মাস-বিএসটিআই # কোম্পানিগুলোরও ঝোঁক নেই লাইসেন্সে 

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আইন অনুয়ায়ী বাজারে প্রসাধনীসামগ্রী, মাছ-মুরগির খাদ্য, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যসহ মোট ২৮ পণ্য বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স ব্যতীত বিক্রি-বিতরণ এবং বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচারও নিষিদ্ধ। সংস্থাটির গড়িমসির দোহাই দিয়ে অ-অনুমোদিত পণ্যই বাজারে বিক্রি হচ্ছে দেদার। ফলে আইনের সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা।

গত ৪ জুলাই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৮ পণ্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক সিএম লাইসেন্সের আওতায় আনা হয়, যা পরবর্তী দুই মাস পর কার্যকর হয়েছে। সে হিসেবে চলতি মাসের ৩ তারিখের পর লাইসেন্সবিহীন এসব পণ্য বিক্রি-বিতরণ বিএসটিআই অধ্যাদেশ-১৯৮৫’র ২৪ ধারা অনুয়ায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইন কার্যকর হলেও বাজারে আগের মতো এসব পণ্য কেনাবেচা চলছে। তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত নতুন করে কোনো পণ্য বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স নেয়নি। কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও সে হার খুবই কম।

শিল্প উদ্যোক্তারা এর কারণ হিসেবে দুষছে খোদ বিএসটিআইকে। কারণ আইনে বলা থাকলেও বিএসটিআই দুই মাসের মধ্যে সিএম লাইসেন্স প্রদানে সক্ষম নয়। এ কারণে বেশকিছু কোম্পানি আবেদন করেও যথাসময়ে লাইসেন্স পায়নি।

এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) ইসহাক আলী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। লাইসেন্স প্রদানের জন্য বেশকিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একটি সিএম লাইসেন্সের জন্য দুই মাস সময় লাগে। সে কারণে সময়মতো লাইসেন্স পাচ্ছে না অনেকে।

ভোক্তারা কবে নাগাদ বাজারে অনুমোদিত এসব পণ্য পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে অনেক কোম্পানি এখনো আইনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি জানে না। তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে। এ মাসের মধ্যে আবেদন আসলে, লাইসেন্স প্রদানে আরো দুই মাস লেগে যাবে। সব মিলিয়ে বাজারে সেসব পণ্য পেতে আরো তিন মাস।

নতুন করে বাধ্যতামূলক এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাছ ও মুরগির খাবার, মুড়ি, সেমাই জাতীয় আমদানি করা স্প্যাগেটি, ময়দার তৈরি ভার্মিসেল্লি, চকলেট, চুইংগাম, মুখে ব্যবহারের টিস্যু পেপার, টয়লেট টিস্যু পেপার, স্যানিটারি টাওয়েল ন্যাপকিন, স্কিন লোশন, বেবি অয়েল, স্কিন পাউডার, স্কিন ক্রিম, শিশুদের লোশন ও শ্যাম্পো, পুনঃব্যবহারযোগ্য জোড়া ছাড়া অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় গ্যাস সিলিন্ডার, ঝালাই করা ইস্পাতের গ্যাস সিলিন্ডার, জোড়া ছাড়া ইস্পাতের গ্যাস সিলিন্ডার, এসিসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, সার্কিট ব্রেকার ও বিদ্যুৎ থেকে সুরক্ষার জন্য ব্যবহূত একই ধরনের যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক মিটারের পরিশোধ পদ্ধতি, স্যানিটারি ট্যাপওয়ার- একটি ট্যাপ বা একই ধরনের অনেক ট্যাপের সমন্বয়ে তৈরি, যা পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়, এনামেল সিনথেটিক এক্সটেরিয়র, ইমালশন পেইন্ট ও সাশ্রয়ী ইমালশন পেইন্ট। এসব যুক্ত হওয়ায় এখন বিএসটিআই বাধ্যতামূলক পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯৮-টিতে। এ ছাড়া বাধ্যতামূলক মান নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় মান সেবা দেওয়াসহ বিএসটিআইর তালিকায় প্রায় ৪ হাজার পণ্য রয়েছে।

বিএসটিআই বলছে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা আমদানি করা যেটাই হোক না কেন তালিকায় থাকা পণ্যের লাগবে বাধ্যতামূলক মানসনদ। তবে এখন পর্যন্ত ২৮ পণ্যের জন্য বিএসটিআই প্রধান কার্যলয়ে অর্ধশত আবেদনও জমা পড়েনি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যে এ পর্যন্ত ১৭ কোম্পানি মাছ-মুরগির খাদ্যের জন্য, টিস্যুর জন্য ৯ কোম্পানি, কফি ও প্রসাধনীর জন্য ৬ কোম্পানি, এসি-ফ্রিজের জন্য ২টি, পেইন্টের জন্য ৫ কোম্পানি আবেদন করেছে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের জন্য ছাড়পত্রের কিছু আবেদন রয়েছে। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শাখায় কিছু আবেদন রয়েছে। 

দীর্ঘদিন ধরে নির্ধারিত কোনো মান ছাড়াই এসব পণ্য উৎপাদন ও ভোক্তার কাছে বিক্রয় করে আসছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের মান নিয়ে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়। আবার ক্ষতিকর পণ্য কিনে প্রতারিতও হন অনেকে। বিশেষ করে বাজারে নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনীসামগ্রীর খবর মেলে প্রতিনিয়ত। সঙ্গে মাছ-মুরগির খাদ্যে ক্ষতিকারক উপাদানের মিশ্রণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছিল সেসব খাতসহ পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থ্য। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন পরে হলেও এ উদ্বেগ কাটাতে নির্ধারিত মান অনুযায়ী উৎপাদন বাধ্যতামূলক করেছে বিএসটিআই। ফলে এসব লাইসেন্সের আওতায় আসলে পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো হবে। কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে পণ্যের মান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads