• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
১৭ জনের প্রত্যেককে দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

হাইকোর্ট

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

১৭ জনের প্রত্যেককে দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

চুয়াডাঙ্গায় ভুল চিকিৎসায় চোখ হারানো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৮

ভুল চিকিৎসায় চোখ হারানো চুয়াডাঙ্গার ১৭ জনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার এবং ওষুধ আমদানি ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান আইরিশ কোম্পানিকে পাঁচ লাখ টাকা করে রায় প্রকাশের পর এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তা তদারকি করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে গতকাল রোববার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।

গত ১৩ আগস্ট চোখ হারানোর ঘটনায় ক্ষতিপূরণের রুলের শুনানি শেষ হলে ২১ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছিল।

জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় চক্ষুশিবিরে অস্ত্রোপচারে চোখ হারানো ২০ জন ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে যথাযথ নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে অস্ত্রোপচার করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চক্ষুশিবিরে অস্ত্রোপচারে কার্যকর, পর্যাপ্ত নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘চক্ষুশিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ এই শিরোনামের খবর সংযুক্ত করে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত। একই দিন দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার প্রথম সংস্করণে ‘অপারেশন করিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন’ এবং পরদিন ‘হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষুশিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। অপারেশনের পর বাড়ি ফিরে কারো বিকালে, কারো সন্ধ্যায়, কারো বা রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে কোনোরকম চিকিৎসা দিয়ে বিদায় করে। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে। হায়াতুন (৬০) নামে এক নারীর অপারেশন করা বাম চোখের অবস্থাও ভালো নয়। ঢাকায় দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করলেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি তার। তিনি আলমডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

এই ২০ রোগীর সবাই দরিদ্র। কেউ স্বজনের কাছে ধার-দেনা করে, কেউ বাড়ির ছাগল-মুরগি বিক্রি করে, কেউ বা এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে ভর্তি হয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads