রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মামলায় দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম (সিএমএম) সত্যব্রত শিকদার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নিপুণ রায় চৌধুরী ছাড়া রিমান্ডপ্রাপ্ত বাকি সাতজন হলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, রাজধানীর খিলক্ষেত থানা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ মৃধা, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার যুবদল নেতা আবুল হাশিম সবুজ, বরগুনার তালতলী উপজেলার বিএনপি নেতা আমির হোসেন এবং বিএনপিকর্মী মো. মহসিন ও মো. মামুনুর রশিদ খোকন।
আদালতের পল্টন থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালালউদ্দিন আহমেদ জানান, বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় দায়ের করা পল্টন থানার একটি মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আদালতে রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালমা হাই টুনি বলেন, পল্টনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার পরিকল্পনাকারী কারা ছিল, তা জানতে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষে নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়াসহ প্রায় ৩০ জন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট নিপুণের বাবা আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী আদালতকে বলেন, আমার মক্কেলরা কোনোভাবেই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত নন। সরকার নিজেরা এসব করে তাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেরোনোর পর রাত ৮টার দিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে নিপুণ রায় এবং সঙ্গীতশিল্পী ও বিএনপির নেত্রী বেবী নাজনীনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে বেবী নাজনীনকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর আরিফা সুলতানা রুমাকে গ্রেফতার করা হয় হাইকোর্ট এলাকা থেকে।
বৃহস্পতিবার বিকালে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বেবী নাজনীন ও নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো মামলায় নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের অনেককে আসামি করা হয়েছে।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পল্টন থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। তিন মামলায় মির্জা আব্বাসসহ ছয় নেতাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলাতেই নিপুণ রায় আসামি।
হুকুমের আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যাত্রাবাড়ী বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্যেই বুধবারের ওই সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান নিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। অন্যদিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষিপ্ত মিছিল করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জ্বালিয়ে দেওয়া পুলিশের পিকআপ ভ্যানটি মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে।