• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

আইন-আদালত

পাঁচ বছরে ৭৪ হাজার পুলিশের সাজা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পাঁচ বছরে ৭৪ হাজার পুুলিশের সাজা হয়েছে। এই সময় বরখাস্ত হয়েছে ৩০০-এর বেশি। এর মধ্যে সম্প্রতি শহীদ পরিবারের বাড়ি দখলের অভিযোগে পুলিশের ওয়ারী বিভাগে ডিসি, নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে ডিআইজি মিজান ও নুসরাতের ভিডিও ফাঁস করার ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন সেল’-এ আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালেই পুলিশের কনস্টেবল থেকে সাব-ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার ১১ হাজার ৯৩৩ জনকে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৪১০ জনকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ২৬ জনকে। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৯ জন পুলিশ পরিদর্শককে লঘুদণ্ড ও ৭ জনকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব সাতজনকে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই সাজা দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যান মিলে এই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। পাঁচ বছরে সাজাপ্রাপ্ত ৭৪ হাজার জনের মধ্যে প্রায় ১ হাজার গুরুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি সবাই লঘুদদণ্ডপ্রাপ্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

আইজিপি’স কমপ্লেইন সেল

আইজিপি’স কমপ্লেইন সেল গঠন-পরবর্তী সময়ে পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিজের জীবন ও পরিবারের সুখশান্তি বিসর্জন দিয়ে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশের মানুষকে নিরলসভাবে সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ  থেকে আজ অবধি পুলিশের রয়েছে অনেক সাফল্যগাথা ও গৌরবময় ইতিহাস। তারপরও পুলিশের এত ভালো কাজের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক সদস্যের অপেশাদার আচরণ ও কর্মকাণ্ডের জন্য ম্লান হতে বসে সব সাফল্য। কিন্তু একজন ব্যক্তি বা মুষ্টিমেয় কয়েকজন অপেশাদার পুলিশ সদস্যের জন্য কেন পুরো বাহিনী কলুষিত হবে?

পুলিশের অপেশাদার কর্মকাণ্ডের জন্য ভুক্তভোগীরা অভিযোগ কোথায় বা কাকে দেবেন-এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকতেন। এই বিষয়টি বিবেচনা করে ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনতে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন  সেল’ চালু রয়েছে। এই কমপ্লেইন সেল সার্বক্ষণিক অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতে, পুলিশে এখন আর কেউ অপরাধ করে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশের তদন্তে কারো অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে পুলিশের চাকরিবিধি আইনে সাজা দেওয়া হয়। কম অপরাধ করলে তাকে সতর্ক, সাময়িক বরখাস্ত, প্রমোশন বন্ধ, ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ যেকোনো সাজা দেওয়া হয়। এটাকে লঘুদণ্ড বলা হয়। আর চাকরিচ্যুতসহ গুরদণ্ডের জন্য বাধ্যতামূলক অবসরসহ অনেক ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্প্রতি পুলিশের অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি যাতে অভিযোগ করতে পারে, তার জন্য পুলিশ  হেডকোয়ার্টার্সে এই অভিযোগ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নতুন ভবনের নিচতলায় এই অভিযোগ কেন্দ্র। এছাড়া ই-মেইলে অভিযোগ করলে সেটাও আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ঝামেলার কারণে অভিযোগ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ কারণে বহু পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান। এই শিক্ষক বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে এই সেল চালু অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। যতদূর জানি, আইজিপি নিজেই এ সেলের কার্যক্রম তদারক করছেন। কাজেই তার সার্ভিল্যান্স কাজ করবে। তবে কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যবস্থা। পুলিশ বাহিনীর ৭০ হাজার সদস্যের বিরুদ্ধেই কোনো না কোনো অভিযোগ আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে চাকরিচ্যুত বা ফৌজদারি মামলার আসামি হয়েছে কমই।  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা বলতে কেবল ক্লোজ করা বা বদলি করা হয়। এটাই সমস্যা। পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তির জায়গাটা দুর্বল। শাস্তি আরো কঠোর হওয়া উচিত। তাহলেই এই উদ্যোগ সার্থক হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মইনুর রহমান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ডাকযোগে ছাড়া অনলাইনেও এখন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায়। আইজিপি’স কমপ্লেইন সেলে আগত অভিযোগসমূহ স্বচ্ছতার সঙ্গে খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, এখন আর  অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। যে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শাস্তি নিশ্চিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads