• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নুসরাত হত্যার রায় আজ

ফাইল ছবি

আইন-আদালত

নুসরাত হত্যার রায় আজ

  • ফেনী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় দেওয়া হবে আজ। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রায় ঘোষণা করবেন। পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এ ছাড়া মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হবে।

এ মামলায় অপরাধ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। অন্যদিকে মামলায় দুর্বল সাক্ষী ও বেশ কিছু অসঙ্গতি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে আসামিরা খালস পাবেন বলে দাবি করেন বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে ২৪ অক্টোবর রায়ের দিন ঘোষণা করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, আসামিরা ভিকটিম নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। এ মামলাটি বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, ন্যায়বিচারে আমার মক্কেলরা খালাস পাবেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মামলার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। ফেনী জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ জানান, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার সার্বিক আইনি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার ফেনীর আমলি আদালতের বিচারক জাকির হোসাইন নুসরাত হত্যা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের পর ৪৭ কর্মদিবস পর্যন্ত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা হয়। ৬১ কর্মদিবসে এ হত্যা মামালার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। গত ২৭ জুন মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলার নুসরাতের মা শিরিন আক্তার, বাবা এ কে এম মুসা ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানসহ ৮৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় নূর হোসেন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ও আরিফুল ইসলামের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম। 

এদিকে নুসরাতের পরিবার, স্বজন ও তার সহপাঠীরা বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, শুধু রায় নয়, নিজ চোখে তা কার্যকর দেখতে চাই। যারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে তাদের বিচার দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পাব। মামলার বাদী নোমান জানান, আমি ন্যায়বিচার চাই। আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন। দেশের মানুষ নুসরাত হত্যার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।

উল্লেখ্য, নুসরাত হত্যা মামলায় কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়াই আইনি সহায়তা করেছেন অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ, অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামন ও অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলাটি পরিচালনা করি। ৬ এপ্রিল নুসরাত মারা যাওয়ার পর ১০ এপ্রিল থেকে এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতেই আইনি লড়াই লড়েছি।  আমারও তিনটা মেয়ে আছে। তারাও লেখাপড়া করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। আর কোনো মেয়েকে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয় তার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে নিরলসভাবে কাজ করেছি।

এ মামলাটি পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনীজীবীরা অনেক সময় আদালতের ভেতরে এবং বাইরে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করেছেন। কিছু আইনজীবী অশোভন আচরণ করেছেন। নিজের মেয়েদের কথা ভেবে নুসরাতের জন্য লড়ে গেছি, কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করিনি। সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে এ মামলাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে লড়েছি। অনেক সময় নিজের পকেট থেকে ব্যয় করেছি। নুসরাতের পরিবারকে এক টাকাও খরচ করতে হয়নি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় নুসরাত।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads